দোয়ার গুরুত্ব
মো. আমিনুল ইসলাম
দোয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো চাওয়া। প্রার্থনা করা। বিনয়ের সঙ্গে উপকার লাভের জন্য মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে নিজের ক্ষতি ও অপকার থেকে বাঁচার জন্য কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে চাওয়াই হলো দোয়া। দোয়া ইবাদতের শামিল।
আমরা সাধারণত কোনো বিপদে পড়লে বা দুঃখ-কষ্টে আবর্তিত হলে কিংবা কোনো জটিল সমস্যায় পড়লে বন্ধু বা আত্মীয়ের শরণাপন্ন হই। তাদের সাহায্য চাই। অথচ এসব ক্ষেত্রে মুমিনের উচিত, কোনো বান্দার কাছে দুঃখ-কষ্ট বা সমস্যার কথা না বলে মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে পেশ করা। তাঁর সাহায্য চাওয়া।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি দুঃখ-কষ্ট, অভাব বা সমস্যায় পতিত হয়, তা সে মানুষের কাছে না বলে আল্লাহর কাছে পেশ করে তাহলে অচিরেই আল্লাহ তাকে নিকটবর্তী বা দূরবর্তী রিজিক প্রদান করবেন’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)।
রসুল (সা.) আরও বলেছেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক রাতে আসমানের নিচে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, কোনো প্রার্থনাকারী কেউ আছে কি? যদি কেউ কিছু চায় তাহলে আমি তাকে তা প্রদান করব। ক্ষমা চাইলে ক্ষমা, রিজিক চাইলে রিজিক, বিপদ থেকে মুক্তি অর্থাৎ যে যা চাইবে আমি তাকে তা দেব’ (মুসনাদে আহমাদ ৪/৮১) সুবহানাল্লাহ। এর চেয়ে আল্লাহর দরবারে আমাদের চাওয়ার আর কী আছে।
আমর ইবনু আম্বসা (রা.) বলেন, ‘বান্দা তার প্রভুর সবচেয়ে নৈকট্য লাভ করে যখন সে সিজদায় থাকে এবং যখন সে রাতের শেষ তৃতীয়াংশের সালাত আদায়ের জন্য দাঁড়ায়। অতএব রাতের সে সময়ে যারা আল্লাহর জিকির করে, তুমি যদি তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পার, তাহলে তুমি হবে সফলকাম’ (তিরমিজি)।
দোয়া কবুলের অন্যতম সময় হলো আজান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়। এ সময়ের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। রোজার মাসে ইফতারের সময় দোয়া করলে আল্লাহ তাও কবুল করেন।
জিহাদের ময়দানের দোয়াও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পছন্দনীয়। শুক্রবার এমন একটি সময় রয়েছে তখন যে কোনো মুসলিম বান্দা দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। বড় আলেমদের মতে, সেই সময়টা আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। তবে দোয়া করার ক্ষেত্রে পবিত্র হওয়া, পবিত্র স্থানে বসে ও হালাল খেয়ে দোয়া করা জরুরি। কাবা শরিফের দরজার কাছে মুলতাজামে, সাফা মারওয়া পাহাড়ের ওপরে, তাওয়াফের সময় এবং আরাফাতের ময়দানের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী আমার কোনো বান্দা যখন তোমাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে, তুমি তাকে বলে দিও আমি তার একান্ত কাছেই আছি, আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিই যখন সে আমাকে ডাকে, তাই তাদেরও উচিত আমার ডাকে সাড়া দেওয়া এবং আমার ওপর ইমান আনা। আশা করা যায়, তারা সঠিক পথের সন্ধান পাবে’ (সুরা বাকারা-১৮৬)।
আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমরা বিনয়ের সঙ্গে ও চুপিসারে তোমাদের রবকে ডাকো। ’ ‘তোমরা ভয় ও আশা নিয়ে একমাত্র তাঁকেই ডাকো। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত ৫৫-৫৬)। এই আয়াত দুটিতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, কীভাবে আল্লাহকে ডাকতে হবে বা তাঁর কাছে চাইতে হবে। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমরা যারা ইমান এনেছ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা আমার (আল্লাহর) সাহায্য প্রার্থনা কর। ’ (সুরা বাকারা-১৫৩)।
আমাদের মনে রাখতে হবে, আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা ও প্রত্যাশার মাধ্যমে বান্দা তাঁর নিকটবর্তী হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হয়।
আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। ’ (সুরা মুমিন-৬০)। সুতরাং আমরা যদি ইবাদতে মনোযোগী হয়ে আল্লাহর কাছে চাইতে পারি, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের ডাকে সাড়া দেবেন এবং আমাদের দুনিয়ার সব পেরেশানি ও সমস্যা থেকে মুক্তি দান করবেন। তাই দোয়া করতে হবে একাগ্রতা নিয়ে। নিষ্ঠার সঙ্গে। রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় এই দোয়াটি পাঠ করবে সে বিপদমুক্ত থাকবে- ‘বিসমিল্লাহহিল্লাজি লা ইয়া দুররু মা আসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিসসামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম। ’ অর্থ আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতিই করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বেশি বেশি নেক আমল ও দোয়া করার তৌফিক দান করুন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার