শাকিবের গ্যারেজে সংবাদ সম্মেলন: সাংবাদিক নেতাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
মোহাম্মদ সেলিম মিয়া
ধর্ষণসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ঢাকাই সিনেমার এ মূহুর্তের সবচেয়ে আলোচিত সমালোচিত নাম চিত্রনায়ক শাকিব খান। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের এক পর্যায়ে এই নায়ক নিজের অবস্থান পরিস্কার করতে প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতেই পড়েছেন বিপত্তির মুখে। যতটুকু না অভিযোগ নিয়ে নিজের অবস্থানের কারণে আলোচনায় এলেন তার চেয়ে বেশি সমালোচিত হলেন সংবাদ সম্মেলনটি বাসার গ্যারেজে ডাকায়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ছিঃ, ছিঃ’ রব উঠেছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে নিজ বাসায় এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের স্থান অমর্যাদাকর হওয়ায় বিপত্তি দেখা দিয়েছে। বলা হচ্ছে সংবাদ সম্মেলনটি গ্যারেজের পাশে সিকিউরিটি গার্ডদের বসার স্থানে করা হয়েছিলো। সেখানে উপস্থিত বিনোদন সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক আপত্তি না জানালেও সংবাদ সম্মেলনটির একটি স্থিরচিত্র প্রকাশ্যে আসলে বিভিন্ন সেক্টরের সাংবাদিকরা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানায়। এনিয়ে যোগাযোগ মাধ্যমে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা গেছে ডিইউজে, ডিআরইউ, ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের নেতাদের।
ডিইউজের সাবেক সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ রাগের ইমোজি দিয়ে লিখেছেন ‘ছিঃ’। সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন খান লিখেছেন,‘মূলত মাজাভাঙা ও অযোগ্য’দের জন্যে সাংবাদিকতা পেশা আজ অবমূল্যায়ীত। বিষয়’টি নি:সন্দেহে দৃষ্টিকটু লেগেছে আমার কাছে’
সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘ছিঃ’। নাট্য পরিচালক ও অভিনেতা লিখেছেন, নিজের নিজের ড্রয়িং রুমটি মনে হয় এখনো তৈরি হয়নি সাংবাদিক বন্ধুদেরকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য বা আমার মনে হয় টাকা পয়সা সমস্যার কারণে কোন অডিটোরিয়াম ও ভাড়া করতে পারেনি তাই। বাধ্য হয়ে গ্যারেজেই কাজ চালিয়ে দিলেন। আমাদের মত ছোটখাটো অভিনেতারা তাহলে কোথায় সম্মেলন করবে তা নিয়েই এখন ভাবছি।
সাংবাদিক রিয়াজ তন্ময় লিখেছেন, গ্যারেজ দেখার পর সাংবাদিকেরা বয়কট না করলে শাকিবের কি দোষ। এভাবেই সাংবাদিকদের আর কিছুদিন পর আরও নগণ্য জায়গায় বসাবে। সেদিন হয়তো বেশি দূরে না।
সাংবাদিক বিজু ইকবাল লিখেছেন, ‘হায়রে সাংবাদিকতা’। সাংবাদিক বেনু রেজা লিখেছেন, আপনারা যান কেন?
আমাদের সময়ের স্পোর্টস এডিটর সুশান্ত উৎসব লিখেছেন, ‘সাংবাদিক তো অনেক ছিল। কেউ একজন এ নিয়ে প্রশ্ন করলেও তো পারতো’।
ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডি এইচ বাদল লিখেছেন, সব কয়টা হলো পা চাটার দল। নিজেদের সম্মান ধরে রাখতে পারে না।
সিনিয়র সাংবাদিক তারেক সালমান লিখেছেন, ‘লজ্জা, লজ্জা। ওই ব্যাটা তো সাংবাদিকদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, ও জানে কেউ ওর বিরোধিতা করবে না’।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা দুলাল খান লিখেছেন, ‘যেমন কুকুর তেমন মুগুর। বাথরুম দেখলেও যাবে’।
বিষয়টি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নেতা মোজাম্মেল হক তুহিন বলেন-‘সাংবাদিকতা হচ্ছে একটি মর্যাদাবান পেশা। এই মর্যাদা রক্ষা অন্য কেউ করবে না, এটা আমাদেরই করতে হবে। ছবিতে যা দেখেছি সেটা অত্যন্ত আপত্তিজনক ও বিব্রতকর। একজন সুপারস্টারের সঙ্গে এটা কোনোভাবেই যায় না। তিনি গণহারে সকল সাংবাদিকদের ছোট করেছেন। সেখানে সাংবাদিক হিসেবে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করা উচিৎ ছিলো। হুটহাট করে করলে সমস্যা ছিলো না বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত তাই ডেকোরাম মেইনটেইন করা উচিৎ ছিলো’।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন ধরে বিতর্কিত আলোচনায় রয়েছেন ঢাকাই সিনেমার শীর্ষ চিত্রনায়ক শাকিব খানকে ঘিরে। এ নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক খবরও ছড়াচ্ছে। এ সবকিছু নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে গুলশানের নিজ বাসার গ্যারেজে সংবাদ সম্মেলন করেন শাকিব।
সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমে বিভিন্ন খবর প্রসঙ্গে শাকিব বলেন, “সব অঙ্গনের প্রতিষ্ঠিত মানুষদের নিয়ে ইদানীং প্রায়শই একটি শ্রেণি নানা অভিযোগ নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। অনেক সংবাদমাধ্যম সেই অভিযোগগুলো সত্য কি-না, তা যাচাই না করেই প্রকাশ করে দিচ্ছে। এটা ঠিক নয়। কেউ একজন এসে প্রযোজক পরিচয় দিয়ে আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুললো, অথচ সেটা খতিয়ে না দেখে সংবাদে প্রকাশ করে দেওয়াটা কতোটুকু যৌক্তিক? অথচ প্রযোজক সমিতিতে একটু খোঁজ নিলেই জানা যেতো, যিনি প্রযোজক পরিচয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন, তিনি সত্যিকার অর্থেই প্রযোজক কি-না!”
বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ নিয়ে শাকিব আরও বলেন, “বিভ্রান্তিমূলক সংবাদের কারণে আমার পরিবার দুশ্চিন্তায় ছিল। তাদের মুখ দেখাতে কষ্ট হয়েছে। আমি অন্যায় করিনি, অন্যায়টা আমার সঙ্গে হয়েছে।”