পবিত্র মাহে রমজান : রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস
ড. সৈয়দ রেজওয়ান আহমদ
রমজান মাস! দেখতে দেখতে চলে গেল একটি বছর। নিকটবর্তী হল মাহে রমজান। রমজান মাস রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। দিনের বেলা রোজা রাখাকে আল্লাহ তায়ালা ফরজ করে দিয়েছেন। যাতে আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারি। আমরা জানি! দ্বিতীয় হিজরী সনে রোজা ফরজ হয়েছে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয়টি রমজানের রোজা পেয়েছেন। তিনি যেভাবে রোজার মাস যাপন করেছেন বা উম্মতকে পালন করতে বলেছেন তাই আমাদের আদর্শ।
এক. রোজা: রোজা হলো রমজানের প্রধান আমল। যার পুরস্কার আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে দিবেন। আবার শরয়ীত সম্মত সমস্যা ছাড়া রোজা না রাখার শাস্তি অনেক ভয়াবহ।
দুই. সেহরি: রোজা রাখার উদ্দেশ্যে ভোর রাতে খাবার খাওয়ার নাম সেহরি। সেহরি খাওয়া সুন্নত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেহরিতে এক চুমুক পানি হলেও পান করতে বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন,যারা সেহরি খায় ও পান করে তাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা রহমত দান করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য উত্তম দোয়া করেন। তবে কখনো সেহরি না খেতে পারলে এই অজুহাতে রোজা না রাখা কিছুতেই বৈধ নয়।
তিন. ইফতার করা: সূর্য ডোবার পর পানাহার করার নাম ইফতার। খেজুর, কিসমিস বা পানি দিয়ে ইফতার করা উত্তম। সূর্য ডোবার পর ইফতার করতে দেরি না করা উত্তম। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; মানুষ ততদিন পর্যন্ত কল্যাণের পথে থাকবে যতদিন পর্যন্ত তারা দ্রূত ইফতার করে। (মিশকাত শরীফ)
চার. ইফতার করানো: রোজাদারকে ইফতার করানো খুবই উত্তম কাজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করায় তার গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়, জাহান্নাম থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হয় এবং সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পায় আর রোজাদারের সওয়াবও কম করা হয় না। (মিশকাত শরীফ)
পাঁচ. তারাবীহ: তারাবীহ পড়া সুন্নত। তারাবীহতে কুরআনুল কারীম ধারাবাহিকভাবে তিলাওয়াত করা বা শোনাও সুন্নত। (মিশকাত শরীফ)
ছয়. কুরআন তেলাওয়াত: রমজান কুরআন নাজিলের মাস। কুরআনের সম্মানেই এ মাসের সম্মান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য মাসের তুলনায় কুরআনের তেলাওয়াত এ মাসে বহুগুণ বাড়িয়ে দিবেন।
সাত. কুরআনের দাওর করা: দাওর মানে পরস্পরকে শুনানো। প্রতি রমজানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং জিবরাঈল আলাইহিসসালাম একবার পূর্ণ কুরআন দাওর করতেন। তবে জীবনের শেষ রমজানে দুবার দাওর করেছেন। (সহীহ বুখারী)
আট. নফল ইবাদত: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে বেশি বেশি নফল ইবাদত করতেন। তিনি বলেছেন, রমজানের একটি নফল অন্য মাসের একটি ফরজের সমতুল্য। (মিশকাত শরীফ)
নয়. রাত্রি জাগরণ: রাত জেগে ইবাদত করা আল্লাহ তায়ালা খুবই পছন্দ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব মাসেই রাত জেগে ইবাদত করতেন। তবে রমজানে এর পরিমাণ বেড়ে যেতো বহুগুণ।
দশ. শবে কদর তালাশ: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তোমরা শবে কদর তালাশ করো। হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন রমজানের শেষ দশক শুরু হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোমর কষে নিতেন। সারা রাত ইবাদত,যিকির ও দোয়ায় মশগুল থাকতেন। (সহীহ বুখারী)।
এগার. দান সদকাহ করা: দানশীলতা নবী চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সব সময়ই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভাবি অসহায়দের দান সদকা করতেন। আর রমজানে এর পরিমাণ বেড়ে যেতো বহুগুণে। তাঁর রমজানের দানকে হাদীসে কল্যাণবাহী প্রবল বায়ুর সাথে তুলনা করা হয়েছে। (সহীহ বুখারী)
এগার. কুরআন বোঝার চেষ্টা: কুরআন হলো মানুষের কাছে আল্লাহর পয়গাম, বান্দার প্রতি প্রভূর চিঠি। কী আছে এই চিঠিতে তা জানা অন্তত জানতে চেষ্টা করা সবার কর্তব্য। আর রমজানেই যেহেতু এর প্রেরণের সূচনা তাই এ মাসই তা বুঝতে সচেষ্ট হওয়ার উত্তম সময়।
বার. ইবাদতে উৎসাহ দান: হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরের লোকজনকেও জাগিয়ে দিতেন,যাতে তারাও এসব রাত্রির বরকত লাভ করতে পারে। (বুখারী)
তের. কর্মচারীর চাপ কমানো: রমজান উপলক্ষ্যে কর্মচারী বা অধিনস্তদের কাজের চাপ কমানো উচিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এ মাসে যে ব্যক্তি তার অধিনস্তদের কাজ হালকা করে দিবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। (বায়হাকি)
পনর. এতেকাফ: রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করা সুন্নত। হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ওফাত পর্যন্ত সর্বদা রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন।(মিশকাত শরীফ)
মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে পবিত্র মাহে রমজানে সকল বরকতময় কাজের তাওফীক দান করুন।
লেখক : প্রিন্সিপাল সৈয়দপুর শামসিয়া ফাজিল ( ডিগ্রি -) মাদ্রাসা, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ