রবীন্দ্র-নজরুলের সুরে ভিজলো জাতীয় প্রেসক্লাব
মোহাম্মদ সেলিম মিয়া
সৃজণে মনণে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর দ্রোহ, প্রেম, চেতনার সাথে কবিতা ও গানে অসাম্প্রদায়িকতার জয়গান গেয়ে শোষনমুক্ত সমাজ গঠনে নজরুলের ছিল অসামান্য অবদান। এই দুই বাঙালি কবির লেখনীতে বারবার উঠে এসেছে জাতীয়তা, প্রেম ও সম্প্রীতির জয়গান। যার কারণে সারাবিশ্বের বাংলা ভাষাভাষির হৃদয়ের গহীণের ভালোবাসার মানুষ রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল। গানে গানে শিল্পীরাও তুলে ধরেছেন এই দুই কবির কীর্তিগাঁথা। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের অসামাণ্য সৃষ্টির কথা সুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্বকবি ও জাতীয় কবিকে মূর্ত করে তোলে শিল্পীরা। দুই কবির অমর সৃষ্টি বাণী ও সুরের খেলায় রবীন্দ্র-নজরুল ভক্তদের বুকের পাঁজরে দাগ কেটে দেন শিল্পীরা। তাল, ছন্দ,রস আর রাগ-রাগিনীর অনন্য মিশেলে কবিদ্বয়ের সৃষ্টিকর্ম চিত্রিত হয় সুরের মালায়।
রবিঠাকুরের ১৬২তম ও নজরুলের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে রবীন্দ্র-নজরুল উৎসব শিরোনামের এই উৎসবের আয়োজন করে জাতীয় প্রেসক্লাব।
শনিবার সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সুরের আসরে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান পরিবেশন করেন দেশবরেণ্য শিল্পীরা।
দিনের আলো নিভে যাওয়ার সাথে সাথে সুরের আলোতে প্রেসক্লাবকে আলোকিত করে তোলেন শিল্পীরা।
আসরের শুরুতেই তানজিনা করিম স্বরলিপি পরিবেশন করেন নজরুলের গান ‘সুরের বাণী মালা গেঁথে আমায় ছুঁয়ে দিলে’। এরপর তিনি একে একে পরিবেশন করেন দাঁড়ালে দুয়ার মোর, হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে, আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রিয়। এরপর সুরের ঝাঁপি খুলে বসেন ইউসুফ আহমেদ খান। তিনি পরিবেশন করেন দ্রোহ, প্রেম, চেতনার কবি নজরুলের আমার নয়নে নয়ন রাখি,খেলিছো বিশ্বলয়ে বিরাট শিশু আনমনে, সেই পুরাতন চাঁদ আমার চোখে আজ নতুন লাগে। নজরুলের রাগপ্রধান গানে অনুষ্ঠানস্থলে আগত নজরুলভক্তদের পরাণের গভীরে দোলা দিয়ে যান শিল্পীরা। পিনপতন নীরবতায় শ্রোতারাও হারিয়ে যান সুরের জগতে। জাতীয় কবির রাগপ্রধান গানের সুরের চাদরে শ্রোতাদের ঢেকে দিয়ে নজরুলের পরিবেশনা শেষ করেন শিল্পীরা। এরপর কবিগুরুর অমর সৃষ্টির সুরকাব্য নিয়ে মঞ্চে আসেন অনিমা রায় ও মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য। রবীন্দ্রনাথের প্রেম, পুজা, প্রকৃতির গানে গানে আসরে সুরের বীণা ছড়িয়ে দেন শিল্পীদ্বয়। কবিগুরুর প্রেমের গানে অনুষ্ঠানস্থরের দর্শকদের হৃদয়ে শিহরণ জাগিয়ে তোলেন শিল্পীরা।
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংক্ষিপ্ত আলোচনার সভাপতিত্বে জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের বিশ্বকবি ও কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। আজ আমরা যখন রবীন্দ্রনাথের ১৬২তম ও নজরুলের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছি তখনও তারা প্রাসঙ্গিক। শত বছর আগে তারা যা লিখেছেন বর্তমান সময়েও সেই লেখাগুলো যেন অনেক নতুন। তারা দুজন ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। তারা দুজন সাধারণের চেয়েও অসাধারণ ছিলেন। আমাদের প্রতিটি কর্মে ও প্রতিটি ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল বিদ্যমান। আমাদের জীবনযাপন এবং জীবনধারায় রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান-কবিতা এখনো প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান এবং কবিতা এখনো আমাদের হৃদয়ে দোলা দেয়, আমাদের শিহরিত করে। তাদের গান ও কবিতার আবেদন চিরন্তন। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের অমর সৃষ্টি ছাড়া বাঙালির অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায়না। আমাদের চেতনা ও অস্তিত্বে মিশে আছেন এই দুই কবি। সংস্কৃতির চর্চা মানুষের মনের বিকাশ ঘটায়। সংস্কৃতির চর্চাটা অব্যাহত থাকা অনেক বেশি জরুরি। সংস্কৃতির প্রতিটি শাখা ও প্রতিটি আয়োজন মানুষকে ঋদ্ধ করে বলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যদের জন্য বিভিন্ন সময়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এটিও তারই নিয়মিত ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের অংশ। জাতীয় প্রেসক্লাবের এমন সুন্দর আয়োজনে আগত সকলের প্রতি আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
সাংস্কৃতিক ঊপ-কমিটির আহবায়ক সীমান্ত খোকনের সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।