1. mahadihasaninc@gmail.com : admin :
  2. hossenmuktar26@gmail.com : Muktar hammed : Muktar hammed
- dailybanglakhabor24.com
  • July 8, 2024, 9:29 pm

  • Update Time : সোমবার, মার্চ ২৭, ২০২৩ | রাত ৩:২৯
  • 77 Time View

 

অন্তরের অসুখ সারিয়ে নাও হে রোজাদার!

 

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

 

হাদিস শরিফে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার অন্তর সুস্থ, তার ইমানও সুস্থ। আর যার অন্তর অসুস্থ তার ইমানও অসুস্থ। ’ অন্তরের অসুখ নিয়ে কাজ করেছেন সুফিয়ায়ে কেরাম। ইমাম গাজালি (রহ.) এহইয়াউল উলুমুদ্দিন ও কিমিয়ায়ে সাআদাত গ্রন্থে এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন।

তার আলোচনায় দেখা গেছে, অন্তরের অসুখে দুই শ্রেণির মানুষ বেশি আক্রান্ত। আলেম ও আবেদ। সব আলেম কিন্তু ইবাদত গোজার হয় না। বলতে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু এটাই সত্যি যে- অনেক আলেম আছেন ঠিকমতো ফরজ নামাজও পড়েন না।

আবার অনেক আমলওয়ালা মানুষ আছেন যার ইলম কালাম কিছু নেই বললেই চলে। মূলত এ দুই শ্রেণির মানুষই অন্তরের দিক থেকে শয়তানের হামলার শিকার হন বেশি। আলেম অহংকার করেন ইলমের, আর আবেদ অহংকার করেন ইবাদতের। আলেম ভাবেন আমার মতো এত জ্ঞান তো আর ১০ জনের নেই।
ইলমচর্চাই তো একটি ইবাদত। শুধু ইলমচর্চার কারণেই আল্লাহ আমাকে জান্নাত দিয়ে দেবেন। আবার আবেদ ভাবেন, এত পড়াশোনা করে কী হবে, ইবাদত করেই তো আল্লাহকে রাজি খুশি করানো সম্ভব। কত আলেম আছে ইবাদতের দিক থেকে আমার অনেক নিচের মর্তবায়। তো এই দুই শ্রেণির মানুষ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে যান।
তবে এদের বাহ্যিক সুরত দেখে তা বোঝা যায় না। একজন লোক মদ্যপ, তার বাহ্যিক সুরত দেখে বোঝা যায় সে পাপী। তাকে মদের বারে মদ খেতে দেখা যায়। রাস্তাঘাটে, ঘরে-বাইরে মাতলামি করতে দেখা যায়। আরেকজন লোক ঘুষখোর। লোকজন তার অভ্যাস সম্পর্কে কমবেশি জানেন। কিন্তু যে মানুষ অন্তরের রোগে আক্রান্ত তাকে দেখে বোঝা মুশকিল। অন্তরের রোগ সারানোর শ্রেষ্ঠ মাস রমজান।
অন্তরের রোগ সারাতে হলে আগে অন্তরের রোগ সম্পর্কে জানতে হবে। গর্ব, অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ, কৃপণতা, ধনসম্পদের লোভ, বিবেক কাজে না লাগানো, চিন্তাভাবনা করে না চলা এগুলো সব অন্তরের ভয়ংকরতম রোগ। হিংসা কিংবা অহংকার অথবা লোভের কারণেই মানুষ জাহান্নামে যেতে পারে। তাই অন্তরের রোগকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। অন্তরের রোগের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আধুনিক সময়ের অন্যতম সেরা ইসলামী স্কলার বদিউজ্জামান সাঈদ নূরসী তাঁর রিসালায়ে নূরে চমৎকার একটি উপমা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহর নবী হজরত আইউব (আ.) তাঁর অসুখের ব্যাপারে দোয়া করেছেন, ‘আন্নি মাসসানিয়াদদুররু ওয়া আনতা আরহামার রাহিমিন। অর্থ- হে আল্লাহ! আমি রোগ-যন্ত্রণায় পড়েছি। আর আপনি দয়াবানদের চেয়েও বেশি দয়াবান। ’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৩। ) মুফাসসিররা বলেন, এক জটিল রোগে আইউব নবীর সারা দেহ পোকা খেয়ে ফেলতে শুরু করে। শরীরের গোশতগুলোয় পচন ধরে। একপর্যায়ে যখন তার জিহ্বা পোকা খেতে শুরু করে তখন তিনি এই দোয়া করেছেন। আসলে এত দিন শরীর পচে গেলেও জিকর করতে তার কষ্ট হচ্ছিল না। কিন্তু আজ যখন জিহ্বায় পোকা বসে গেছে, তখন তিনি জিকির বিঘ্ন হওয়ার ভয়ে আল্লাহর কাছে অসুখের ব্যাপারে ফরিয়াদ জানালেন। বিষয়টি আল্লাহর এত ভালো লেগেছে যে, তিনি পবিত্র কুরআনে আইউব নবীর এই খালেছ, পরিচ্ছন্ন, অভিযোগহীন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনার দোয়াটুকু তুলে দিলেন।

ঘটনা এই পর্যন্ত আলোচনা করার পর নূরসী বলেন, আইউব নবীর তো বাহ্যিক রোগ ছিল। এতে তিনি শারীরিকভাবে যন্ত্রণা পেলেও তার অন্তর তথা ইমান ঠিক ছিল। হায়! আজ আমাদের অবস্থা তো অত্যন্ত নাজুক! শারীরিক দিক থেকে আমরা সুস্থ কিন্তু আমাদের অন্তর মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত। আমরা যদি আইউব নবীর রোগের সঙ্গে তুলনা করতে চাই তাহলে দেখা যাবে, আমাদের অন্তরের যে কাঠামো আছে তার প্রতিটি পরতে পরতে লোভ, হিংসা, ক্রোধ, বিদ্বেষ ও অহংকারের পোকা বসে গেছে। আমাদের অন্তরকে ছারখার করে দিয়েছে। ভালো চিন্তা, সুস্থ কাজ করার কোনো চেতনাই আমাদের মধ্যে আজ আর বাকি নেই। তাই তো দেখা যায়, সুখী মানুষের দেশের তালিকা হলে সেখানে আমাদের নাম থাকে না। আমাদের নাম থাকে দূষিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায়।

সাঈদ নূরসী বলেন, আমাদের প্রতিটি গোনাহ ও মনের ভিতর জেগে ওঠা প্রতিটি সন্দেহ ও কুচিন্তা কালবে একেকটি ক্ষত সৃষ্টি করে যাচ্ছে। আইউব নবীর ব্যাধি তাঁর দুনিয়ার জীবনকে বিপদগ্রস্ত করেছিল। আমাদের এই আত্মার রোগ সুদীর্ঘ চিরস্থায়ী জীবনকে বিপদগ্রস্ত করে তুলেছে। আইউব নবীর ব্যাধি একপর্যায়ে তার জিহ্বায় ক্ষত সৃষ্ট করলেও জিকির থেকে তিনি মুহূর্তের জন্যও বিরত হননি। কিন্তু আমাদের অন্তরে এমনই ক্ষত হয়েছে যে, মুখ দিয়ে এখন আর জিকিরই বের হয় না। আসলে প্রতিটি গোনাহই কালবে কালো দাগ ফেলে দেয়। হাদিসের ভাষ্য থেকে জানা যায়, ‘গোনাহ করতে করতে একপর্যায়ে বান্দার কালব কুচকুচে কালো হয়ে যায়। তখন সে কালো কলবে আলোর কোনো কথা আর ভালো লাগে না। ’ এ কারণে সুফিয়ানে কেরাম বলেন, কোনো গোনাহকেই তুচ্ছ ভাবতে নেই। প্রতিটি গোনাহই মানুষকে অল্প অল্প করে কুফরির দিকে নিয়ে যেতে থাকে।

এই যে ব্যাধিগ্রস্ত অন্তর! এর সুস্থতার উপায় কী? উপায় হলো তওবা। শেষ রাতে সাহরি খেতে উঠলে দুই রাকাত নামাজ পড়ুন। হয়তো নামাজ পড়তে মন চাইবে না। সময় থাকবে কম। চোখে ঘুম জড়ানো থাকবে। তবুও জোর করে নিজেকে জায়নামাজে নিয়ে যান। সেজদায় পড়ে আল্লাহকে বলুন, হে আল্লাহ! আমার অন্তর রোগগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তুমি আইউব নবীকে যেভাবে সুস্থ করেছো, আমার এই অন্তরকেও সেভাবে সুস্থ করে দাও। তোমার মতো দয়াবান, মেহেরবান আর কেউ নেই। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সবার অন্তরের অসুখ সারিয়ে দিন। আমিন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, পীর সাহেব, আউলিয়ানগর

www.selimazadi.com

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category