নিজস্ব প্রতিবেদক
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ইফতার মাহফিলে ভাঙচুর, হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ইফতার মাহফিলে অংশ নিতে আসার সময় সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ওপর বোতল ছুড়ে মারেন বিক্ষুব্ধরা।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে ও সন্ধ্যায় এ হামলা চালানো হয়। হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক নিজেই।
অভিযোগ রয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উত্তর ও দক্ষিণ হলে আয়োজিত এ ইফতার মাহফিলে টেবিল ও চেয়ার ভাঙচুর করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
পরে অবশ্য ভাঙচুরের স্থানেই হলরুমে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপিপন্থিদের বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগ করা হলেও তাদেরকেও ইফতার পাঠানো হয়। এদিন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সমিতি ভবনের নীচের ফ্লোরে অবস্থান নেন। সেখানে বসেই তারা ইফতার করেন।
এদিকে, বারের ইফতারে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক অংশ নিতে আসার সময় তার ওপর পানির বোতল নিক্ষেপ করে হামলা চালানো হয়।
সমিতি ভবনের তিনটি হলরুমে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি। যে কমিটিকে আগে থেকেই অস্বীকার করে আসছিলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীসহ সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন পক্ষের আইনজীবীরা।
এদিন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা সমিতি ভবনের নিচে ফ্লোরে বসে অবস্থান নেন। তারা প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের ইফতার মাহফিলে অংশ না নেওয়ার আহ্বান জানান। সেখানে তারা ইফতারের সময় পর্যন্ত অবস্থান করেন। এসময় বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজলের নেতৃত্বে কয়েকশ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা সমিতির ভবনের দুই তলায় অবস্থান করেন। তারা হলরুমে ইফতার করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সমিতির ১নং হল রুমে ইফতারে অংশ নেন।
সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক অভিযোগ করে বলেন, আমি ইফতার পার্টিতে অংশ নিতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা মারমুখী আচরণ করেন। তারা আমার ওপর পানির বোতল নিক্ষেপ করে হামলা চালান। যদিও আমার গানম্যানের গায়ে লেগেছে, আমার গায়ে লাগেনি। এমন আচরণ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের কাছে কাম্য নয়।
গত ১৩ মার্চ সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনী উপকমিটি থেকে পদত্যাগ করলে ভোটগ্রহণ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। পরে নতুন আহ্বায়ক নিযুক্ত করাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নির্বাচন পরিস্থিতি। পরদিন সন্ধ্যায় দুই পক্ষই নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক করা নিয়ে বিবাদে জড়ায়।
পাল্টাপাল্টি স্লোগান, বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে হাতাহাতিতেও জড়ান আওয়ামী ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। পরে সমিতির বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক নেতৃত্বাধীন আওয়ামীপন্থিরা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক ঘোষণা করেন। পাশাপাশি সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও দুই সহ-সম্পাদক নেতৃত্বাধীন বিএনপিপন্থিরা আইনজীবী এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক ঘোষণা করেন।
সবশেষ পুলিশি প্রহরায় মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন উপকমিটির অধীনে ভোট হয়। ফলাফলে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামীপন্থি সাদা প্যানেল। এ নির্বাচন ও কমিটিকে শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। এ নিয়ে বিক্ষোভ প্রতিবাদের মধ্যে গত ৩০ মার্চ পাল্টা অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটিতে আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদকে আহ্বায়ক এবং আইনজীবী শাহ আহমেদ বাদলকে সদস্যসচিব করা হয়। তলবি সভা করে এ কমিটি ঘোষণা করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীসহ বিভিন্ন পক্ষের আইনজীবীরা।
এ কমিটি আগামী ১৪-১৫ জুন সমিতির নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে আওয়ামীপন্থি কমিটি, যার সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির এবং সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল।
এদিকে, বৃহস্পতিবার ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নাম থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের কোনো বিচারপতিও অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। তবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন ইফতার অনুষ্ঠানে ছিলেন।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা ভাঙচুর করেছেন। তারপরও আমরা ইফতার মাহফিল করেছি। তাদের কারণে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিরা ইফতার মাহফিলে আসেননি।
সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির (অ্যাডহক কমিটি) সদস্য সচিব শাহ আহমেদ বাদল বলেন, আমরা সাধারণ আইনজীবীদের নিয়ে ২নং হলরুমে প্রবেশ করলে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা হইচই শুরু করেন। একটা পর্যায়ে ধস্তাধস্তি শুরু হলে চেয়ার টেবিল পড়ে যায়। তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম শান্তিপূর্ণ ইফতার মাহফিল হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তা করতে দেননি।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল বলেন, ভাঙচুরের সঙ্গে আমাদের কেউ জড়িত নন। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি।