নিজস্ব প্রতিবেদক
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পরিচয়ে দৈনিক প্রথম আলোর সাভার প্রতিনিধি শামসুজ্জামান শামসকে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) এর শিক্ষার্থীরা। এসময় শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তারা।
বুধবার (২৯ মার্চ) বিকেল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এ মানববন্ধন হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত এ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।
মানববন্ধনে জাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জিসান মাহমুদের সঞ্চালনায় চারুকলা বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ মাহমুদ তন্ময় বলেন, ‘আজকে দেশে কথা বলার অধিকার নাই। আমাদের খাদ্যের অধিকার নাই। আমরা কোন পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছি? আমরা দেখি যে, দেশের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে মানুষ যখন খেতে পায় না, তখন সেই সংবাদ প্রকাশের ফলে সাংবাদিককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাধীনতা দিবসে আমাদের সাংবাদিকদের কথা বলার স্বাধীনতা নাই। আমরা আমাদের বাক স্বাধীনতা চাই।
বাংলা বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি জহির ফয়সাল বলেন, ‘আপনারা জানেন শামসুজ্জামান আমার বাংলা বিভাগের সাবেক বড় ভাই। তার বড় ভাই হলি আর্টিজেন ঘটনায় নিহত হন। এতে প্রমাণিত হয় শামসুজ্জামানের পরিবার স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। স্বাধীনতার এই ৫২ বছরে দেশে কেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে না? রাষ্ট্রের একজন নাগরিকের কথা বলার অধিকার রয়েছে। কিন্তু শামসুজ্জামানকে রাতের আঁধারে তুলে নেওয়া হয়েছে। তাহলে আমরা বুঝতে পারি দেশে বাক স্বাধীনতা নাই। অতি স্বত্বর ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল করতে হবে। অবিলম্বে শামসুজ্জামান শামসকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
এছাড়া বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও চলচ্চিত্র আন্দোলনের সংগঠক সুদীপ্ত দে বলেন, ‘শামস ভাই, আমাদের ক্যাম্পাসের বড় ভাই। অন্যায় ও অনৈতিকভাবে তাকে বাসা থেকে তুলে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক। একজন সংবাদকর্মীকে সংবাদ করার স্বাধীনতা দেওয়া হোক। হাত পা বেঁধে সাংবাদিকতা চলে না। সংবাদ ভুল হলে তার জন্য প্রেস কাউন্সিল আছে। তাদের কাছে না গিয়ে মামলা কেন করা হলো? তাছাড়া ওই সংবাদের জন্য গণমাধ্যমটি সংশোধনী দিয়েছে। সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে বাক-স্বাধীনতায় কুঠারাঘাত করেছে।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী বলেন, ‘একটি নিকৃষ্ট উপায়ে, সাদা পোশাকধারীরা একজন সংবাদকর্মীকে নিয়ে যায়। সবচেয়ে ভাবনার জায়গা হচ্ছে এখানে আমাদের প্রশাসনেরও সহযোগিতা ছিল। ক্যাম্পাস আর নিরাপদ নয়। ক্যাম্পাস প্রশাসন সাহায্য করে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কাছে তুলে দিলো। খেটে খাওয়া মানুষ যখন বলে তার ভাত মাছের স্বাধীনতা চায় আর তা যখন একজন সংবাদ কর্মী তুলে ধরেন তখনই তাকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়। আইয়ুব সরকার টিকে নাই, এরশাদ টিকে নাই, মানুষের যে জনরোষ এই সরকারের গদি এখন টলমলে, আর বেশিদিন টিকতে পারবে না।
জাবি সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সাধারণ সম্পাদক তাপসী দে প্রাপ্তি বলেন, ‘সাদা পোশাকে তুলে নেওয়ার যে কালচার রাষ্ট্র তৈরি করছে এতে বুঝা যায় রাষ্ট্র মৃত্যুর দিকে আগাচ্ছে। সাংবাদিকদের টুঁটি চেপে ধরা হচ্ছে। আমরা সবাই ভয়ের মধ্যে অনিরাপদ জীবন যাপন করছি। কখন কাকে রাতে তুলে নেওয়া হয়, এই ভয়। আমরা সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।