বিশেষ প্রতিনিধি
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপিসহ ৩৭টি রাজনৈতিক দল। এর বাইরেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)ও একই দাবিতে সক্রিয় রাজপথে। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের বাইরে সব রাজনৈতিক দলকে ইতিমধ্যে এ আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
এবার জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে চলমান আন্দোলনে সমর্থন দেওয়ার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। বৃহস্পতিবার জাপার বনানী কার্যালয়ে দলটির মহাসচিবের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন নুর। শনিবার জাপার অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপার বিজয়নগরস্থ অফিসে গিয়েও কথা বলেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি। যদিও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের গত দুই বছরের বক্তব্যে সরকারের কড়া সমালোচনা ফুটে ওঠে। এমনকি এ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও একাধিকবার স্পষ্ট করেছেন তিনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিএনপিসহ বিরোধী জোটের চেয়েও সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন জিএম কাদের। এদিকে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদও বলেছেন, আগামীতে জিএম কাদের বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধতে পারে।
এ বিষয়ে নূরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি সরকার বিরোধী আন্দোলনে সব রাজনৈতিক দল এক প্ল্যাটফর্মে আসুক। জাতীয় পার্টি সংসদের প্রধান বিরোধী দল। এ দলটি যদি সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের মতো প্রকাশ্যে অবস্থান নেয় তাহলে সরকার আরো দুর্বল হয়ে পড়বে। সরকার ইচ্ছে করলেও তখন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘আজকে যে সংকট তা শুধু বিএনপির নয়। পুরো জাতি আজ সংকটে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ সব দলের সমন্বয়। তাছাড়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে সক্রিয় না থাকলেও তার বক্তব্য এবং সরকারের কঠোর সমালোচনা জনগণের মধ্যে সাহস জোগায়।
জাপা সূত্র জানায়, দলটির শীর্ষ কিছু নেতা এবং সিংহভাগ দলীয় সংসদ সদস্য সরকারের সঙ্গে থাকার বিষয়ে কথা বললেও পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীরা সরকারের সঙ্গ ছাড়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারা বলছেন, এ সরকারের বিরুদ্ধে দেশের অধিকাংশ জনগণ ও রাজনৈতিক দল অবস্থান নিয়েছে। সেক্ষেত্রে যদি জাতীয় পার্টি এখনও সরকারের বন্দনা করে তাহলে জনগণ আগে আমাদের সরকারের বি টিম বলতো, এখন দালাল বলবে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বিএনপি এক দফা আন্দোলনে জাতীয় পার্টি এবং বাংলাদেশ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনকে পাশে পেতে চায়। তারা বলছেন, দেশের ভোটের রাজনীতিতে এ দুটি দল ফ্যাক্টর। সূত্রটি দাবি করছেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। একটি মুহূর্তে দেখা যাবে আওয়ামী লীগ ছাড়া সব দলই এক প্ল্যাটফর্মে আসবে। তা শুধু সময়ের অপেক্ষায়।
জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত জাপার এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘সরকার ইতিমধ্যে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিতে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে একটি বলয় তৈরি করে রেখেছে। এতে আমাদের কয়েকজন শীর্ষনেতাও জড়িত। সবই আমাদের চেয়ারম্যান জানেন। তাই দল বাঁচানোর স্বার্থে সরকারের বিরুদ্ধে এখনই কোনো অবস্থান নেবেন বলে আমার মনে হয় না।
এদিকে শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বৈঠকে জিএম কাদেরকে নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সে তো বিএনপির সঙ্গে জোট করবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ, তার এখনকার কথাবার্তা বিএনপির মতো।
রাজপথে সরকার বিরোধী জোট প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘নূর আমাদের পার্টি অফিসে এসেছিলেন। তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো জোট প্রসঙ্গে আলাপ হয়নি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে আজ সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আজকে যারা গণতন্ত্রকামী মানুষের পক্ষে অবস্থান নেবেন তারাই জনগণের মিত্রপক্ষ হবেন।
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা কাউকে কোনো জায়গায় বা কোনো দলের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাধা দিতে পারি না। আর যে এ ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন, তার ভিতর যদি আন্তরিকতা থাকে তাহলে ভালো। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে আমরা পর্যালোচনা করব।