1. mahadihasaninc@gmail.com : admin :
  2. hossenmuktar26@gmail.com : Muktar hammed : Muktar hammed
সরকারের ডান বাঁক - dailybanglakhabor24.com
  • July 6, 2024, 9:22 pm

সরকারের ডান বাঁক

  • Update Time : বুধবার, মার্চ ১৫, ২০২৩ | রাত ৩:২২
  • 154 Time View

মোস্তফা কামাল |:  নির্বাচন যত এগোচ্ছে খুচরা দলগুলোর কদর-সমাদর তত বাড়ছে। বরাবর সব নির্বাচনে কম-বেশি এমনটি হয়। তবে এবার কিঞ্চিৎ রকমফের। নাম নামসর্বস্ব হলেও, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকলেও তাদের কাছে নিতে বেশ দাওয়াই ছড়ানো হচ্ছে। আর দাওয়াইতে এগিয়ে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি যেখানে জোট ভেঙে দৃশ্যত ছোটদের দূরে সরিয়ে অনেকটা একলা হাঁটছে, সেখানে সরকার মিতালি বাড়াচ্ছে। সেটাও আবার ডান বাঁকে। হেফাজতে ইসলামের মতো বিশাল একটি শক্তি হাতে থাকার পরও দক্ষিণপন্থি-ধর্মাশ্রয়ী ইসলামি দলগুলোর দিকে মোড় নেয়া আওয়ামী লীগের বাম মিত্রদের জন্য কষ্টের।

আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে মন্ত্রিসভায় মহাজোট ও ১৪ দল শরিকদের জায়গা না দিলেও হাত ছাড়া করেনি। কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বস মানিয়ে রাখছে। সরকারের পকেটে ঢুকে পড়া বামদের অভিমান করার জায়গাও নেই। মাঝেমধ্যে সরাসরি তাদের খোঁজ নেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। নিয়মিত ভালো-মন্দ দেখার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্তও আছেন কয়েকজন। ভোটের অঙ্ক নয়, সুশীল সমাজ ও শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনকে হাতে রাখতে বামধারার দলগুলোকে কাজে লাগে। আর ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর ডানরা। সামাজিক ও ধর্মীয় ময়দানে তাদের অবস্থান বেশ কড়কড়া। তাদের প্রতি ধর্মাশ্রয়ী সাধারণ মানুষের এক ধরনের আগ্রহ রয়েছে। সরকার তাদের এ শক্তিটি আয়ত্তে নিতে চায়। তবে চরমোনাইর পীরের ইসলামী আন্দোলনসহ দক্ষিণপন্থি কয়েকটি দলকে নিমিষে বাগে আনা যায় না। মসজিদ, মাদ্রাসা ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের বেশ গাঁথুনি রয়েছে। কিছু মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ আছে তাদের। চাইলেই তাদের সরকারপন্থি করে নেয়া অসম্ভব। তাই তারা যেন বিএনপির দিকে একেবারে হেলে না যায়, তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার।

এ লক্ষ্যে রয়েছে বিশেষ এজেন্ডা। পরিকল্পনা মতো সরকার কোনোটির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, কোনোটিকে লায় দেওয়ার প্যাকেজ নেওয়া হয়েছে। ইসলামি কিছু দলকে দিয়ে একটি জোট বা ফ্রন্ট করে দেওয়ার সরকারি আয়োজনও রয়েছে। ইসিতে নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দল ১০টি। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিসসহ কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল ৬টি। তারা নৈতিকভাবে জামায়াতবিরোধী। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কয়েক নেতা তাদের অভিভাবকের মতো। তাদের সঙ্গে খুচরা নামসর্বস্ব আরও কয়েকটিকে দিয়ে একটি ইসলামি মঞ্চ বা জোট মাঠে নামিয়ে দেওয়ার সরকারের লাভের অঙ্ক সাজিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহে বিরক্ত সরকারের সহযোগী ১৪ দল। তারা চায়, জামায়াতের সঙ্গে সরকারের সামান্যতম সংশ্রবও না থাকুক। চরমোনাইর পীরের ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের মতিগতিকেও ভালোভাবে নিচ্ছে না তারা। এতে অদূর ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ বড় রকমের ক্ষতির শিকার হবে বলে মত বাম মিত্রদের। তাদের পরামর্শ, চরমোনাইর পীরের দলকে দিয়ে ধর্মভিত্তিক জোট তৈরি করে দেওয়া। এ চিকন বুদ্ধিটা এসেছে সরকারে সঙ্গে লেগে থাকা বাম ঘরানা থেকে। এ ঘরানার আরেকটি গ্রুপ মনে করে, সরকার ডানে বেশি হেলে বামপাড়াকে অগ্রাহ্য করছে। তাদের বেশি ভয় জামায়াতকে নিয়ে।

পরিস্থিতিটা ইসলামি দলগুলোর জন্য মন্দের ভালো। সামগ্রিক বিচারে তারা একে নিজেদের এক ধরনের জয় ভাবছে। ফ্যাশনের মতো হলেও দাড়ি রাখছে এ প্রজন্মের তরুণ-যুবকরা। বোরকা-হিজাবের প্রচলন বেড়েছে। কাউকে দাড়ি রাখা বা বোরকা পরাতে অনেক কষ্ট করতে হতো এসব দলের নেতাকর্মীদের। গত কয়েক বছরে কেবল ব্যাংক-বিমা নয়, সাবান-বিস্কুটে পর্যন্ত ইসলাম শব্দ ব্যবহার হচ্ছে। হালাল সাবান, হালাল বিস্কুট, হালাল মাংসসহ কত কী? ইসলামি বা শরিয়া ব্যাংকিং নিয়ে এখন কোনো প্রশ্ন নেই। প্রতিষ্ঠানের নামে সমানে ইসলামি বা আরবি শব্দ যোগ হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতির মাঠে বিচরণ। সেটাও উতরে যাওয়ার লক্ষণ দেখছে তারা। শোনা যাচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে কেবল জোটসঙ্গী বিএনপি নয়, সরকারের কোনো কোনো মহলের সঙ্গেও তাদের হিডেন কথাবার্তা হচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে মেলামেশা না করলে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনসহ মার্কাও পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস মিলছে। কিন্তু আপাতত তারা শুধু টিকে থাকতে চাইছে। উচ্চ আদালতে নিবন্ধন নিয়ে চলমান মামলা লড়ার প্রস্তুতিও আছে। সামনের তারিখে হাজির হওয়ার কসরত চলছে। আবার বিএনপিকেও ছাড়ছে না।

প্রকাশ্যে বিএনপির সঙ্গে তাদের জোট না থাকলেও ‘যুগপৎ আন্দোলন’ নামে জামায়াত দূরে দূরে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে পরকীয় স্টাইলে। বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচি সঠিকভাবে হচ্ছে না মনে করলেও তারা সরবে কিছু বলে না। তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অব দ্য রেকর্ডে বসে, কথা বলে। ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করে। মনে করিয়ে দেয় চারদলীয় জোট সরকারের ক্ষমতার শেষ দিকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন নিয়ে সহিংসতায় জামায়াত ও ছাত্রশিবিবের কয়েকজন নেতাকর্মী নিহতের কথা। এরপর যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে দলের শীর্ষনেতাদের মৃত্যুদণ্ডের কথা মনে করিয়ে দেয়। ওই সময় বিএনপির ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে জামায়াতের মধ্যে। বিএনপির সঙ্গে না থাকলে এ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড নাও হতে পারত বলে দাবি তাদের। নেতাদের বাঁচানোর আন্দোলনে বিএনপিকে তেমন পাশে পায়নি বলেও ভেতরে ভেতরে পীড়া ভোগ করছে তারা।

শুধু নেতাদের হারায়নি, দলের নিবন্ধনও হারিয়েছে জামায়াত। এতে জামায়াত তাদের ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকে ভোটের যোগ্যতা হারায়। তা সয়েও বিএনপির পাশে থাকতে থাকতে একপর্যায়ে জোটে নেই বলে ভিডিও বার্তা দেয়া হয়। এর কয়েক দিন পর বিএনপিও ২০ দলীয় জোট ভেঙে গেছে বলে জানায়। এমন কঠিন অবস্থার মধ্যে দল তিন ভাগ হয়ে গেছে। এবি পার্টি-বিডিপি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। সরকারের সঙ্গে দল দুটির বিশেষ যোগাযোগের অভিযোগ নিয়ে জামায়াত নেতারা কিছু বলেন না। আবার দূর থেকে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করে বিএনপির সঙ্গে। যুগপৎ কর্মসূচির শুরুর দিকে গত ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল পালনকালে রাজধানীর মৌচাকে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ ও জামায়াতের কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।

গ্রেপ্তার করা হয় দলটির কয়েকজন কর্মীকে। ওই ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি দেওয়া বা খোঁজখবর না নেওয়ায় জামায়াত মনঃক্ষণœœ। এরপর থেকে যুগপৎ কর্মসূচিতে দৃশ্যত নেই জামায়াত। একদিকে জেল-জুলুমসহ নানা নিপীড়নে কাহিল দলের আমির, সেক্রেটারি জেনারেল থেকে শুরু করে তৃণমূলের নিরীহ কর্মী পর্যন্ত, আবার মিত্রসঙ্গী বিএনপির কাছেও উপেক্ষিত জামায়াত। বিএনপির একটি অংশ তাদের স্পেস দিতে চায় না। তাচ্ছিল্যের শিকারও হচ্ছে কখনো কখনো। কঠিন এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে জামায়াত নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াচ্ছে বিভিন্ন উইংয়ে। সরকার তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দিলেও এ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত না হওয়ার সিদ্ধান্তে চলে গেছে জামায়াত। জামায়াত জানে, সরকার চাইলেই তাদের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। কেন করে না, তাও জানে। সময় পাল্টালে পরিস্থিতি এমন থাকবে না, তা বিশ্বাসে রেখে কর্মীদের টিকে থাকার বার্তা দিচ্ছে। আর লক্ষণ হিসেবে দেখাচ্ছে, সরকারের ডানদিকে হেলে পড়া ও ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টাকে। এর মাঝে লংটাইমে দলের জন্য ভালো নমুনা দেখছে তারা।

লেখক: কলামিস্ট ও বার্তা সম্পাদক বাংলাভিশন mostofa71@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category