নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘মাইক’ অসম্ভব সুন্দর একটি সিনেমা। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, বঙ্গবন্ধু, বর্তমান প্রজন্মসহ নানা বিষয় খুব চমৎকারভাবে মুভিটিতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সোমবার জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন, জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
এসময় তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের রেগুলেশনের জন্য একদিকে তথ্য মন্ত্রণালয়, অন্যদিকে আইসিটি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বিভিন্ন সংস্থা করছে।
কিন্তু এগুলো করার কারণে ক্রিয়েটিভিটি নষ্ট হতে পারে। ১৫ বছর ধরে এই সরকার ক্ষমতায় আছে। একটা কালচারার রেভুলেশন তো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কালচারার প্রোগ্রাম কিংবা বিপ্লবের জন্য কোন বরাদ্দ নাই।
এর আগে ‘মাইক’ চলচ্চিত্রটির বিশেষ প্রদর্শনী দেখে এই সংসদ সদস্য প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, সকল বয়সের মানুষ “মাইক” মুভিটি দেখে আলোড়িত হবে, আন্দোলিত হবে, উৎসাহিত হবে। আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানা দরকার ৭ মার্চের ভাষণে কী ছিল? আর এগুলো নতুন প্রজন্মকে জানানো আমাদের দায়িত্ব। এই ভাষণ লিখিত ছিল কিন্তু বঙ্গবন্ধু সেটিকে বাদ দিয়ে নিজে থেকে ভাষণ দিয়েছিলেন। এই ভাষণ আমাদের মুক্তির সনদ।
এই ভাষণে তীব্র উৎসাহিত ও আন্দোলিত করার ক্ষমতা আছে। সেজন্য বিভিন্ন সময় এই ভাষণকে চাপিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সকলের দায়িত্ব এই ভাষণকে জাতির সামনে তুলে ধরা। নতুন প্রজন্মকে একাত্তরের সঠিক ইতিহাস জানানো এবং সেই জানানোর মাধ্যমে তাদের সঠিক পথধারায় রাখা, স্বাধীনতার পথধারায় রাখা, সেক্ষেত্রে মাইক চলচ্চিত্রটি অনবদ্য ভূমিকা রাখবে। আমার মতে, এই চলচ্চিত্রটি একটি ল্যান্ডমার্ক হয়ে থাকবে।
মহান জাতীয় সংসদে “মাইক” চলচ্চিত্রটি নিয়ে আলোচনা হওয়ার বিষয়ে চলচ্চিত্রটির প্রযোজক ও পরিচালক এফ এম শাহীন বলেন, জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারীর দেওয়া বক্তব্যে মাইক চলচ্চিত্রের প্রশংসা করায় আমরা মাইক টিম খুবই গর্বিত। আমাদের মুভিটি উনি দেখেছেন এবং জাতীয় সংসদের মতো জায়গায় আলোচনা করেছেন, এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা বিশ্বাস করি এই চলচ্চিত্রটি যদি বাংলাদেশের সব জায়গায় যায়, আগামী প্রজন্ম এই চলচ্চিত্রটি দেখে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে, বুঝতে পারবে। ৭৫ পরবর্তী সময়ে এই দেশে কী পরিবেশ বজায় ছিল, সেটা সম্পর্কে তারা ধারণা পাবে। আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাবো, মাইক চলচ্চিত্রটি সারাদেশে কিভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করা হোক।
এর আগে শুক্রবার (১১ আগস্ট) দুপুরে ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখাসহ সারাদেশের ৮টি প্রেক্ষাগৃহে একযোগে সিনেমাটি মুক্তি পায়। গত ২৯ মে আনকাট সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছিল সিনেমাটি। সেসময় ‘মাইক’ চলচ্চিত্রটি দেখে সেন্সরবোর্ডের সদস্যরা ভূয়সী প্রশংসা করেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে এ ধরনের সিনেমা নির্মাণকে তারা সাধুবাদ জানান।
এ সিনেমার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় একসঙ্গে দেখা গেল জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌস আহমেদ ও নন্দিত অভিনেত্রী তানভীন সুইটিকে। এতে আরও অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা তারিক আনাম খান, অভিনেতা নাদের চৌধুরী, ঝুনা চৌধুরী, জয়িতা মহলানবিশ, সংগীতা চৌধুরী, রহিম সুমন, ইকবাল হোসাইন, শিশুশিল্পী সানজিদ রহমান খান, আলী আবদুল্লাহ দাইয়ান ভূঁইয়া, খোন্দকার মেঘদূত জলিল, মীর্জা ত্বাবীব ওয়াসিত প্রমুখ।
লেখক, কলামিস্ট ও সংগঠক এফ এম শাহীনের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে পরিচালনা করছেন এফ এম শাহীন ও হাসান জাফরুল বিপুল। মুক্তির আগে ২৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) অডিটরিয়ামে চলচ্চিত্রটির বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। গত বছরের মার্চে লক্ষ্মীপুরে সিনেমাটির শুটিং শুরু হয়েছিল।