1. mahadihasaninc@gmail.com : admin :
  2. hossenmuktar26@gmail.com : Muktar hammed : Muktar hammed
শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে; শিক্ষা বাঁচলে দেশ বাঁচবে : - dailybanglakhabor24.com
  • December 7, 2024, 7:29 am

শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে; শিক্ষা বাঁচলে দেশ বাঁচবে :

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৩ | দুপুর ১:২৯
  • 45 Time View

মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার

প্রসঙ্গ শিক্ষক দিবস : শুরুতেই আমার ও আমাদের মানুষ গড়ার কারিগর, সকল শিক্ষকদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়ি ” আজ ৫ অক্টোবর ” শিক্ষক দিবসটি-কে যথাযথ ভাবে স্বরণীয় করছি।

স্বভাবতই শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মার চেয়ে শিক্ষকের অবদান কোনো অংশে কম নয়। মহান আল্লাহ তায়ালাও শিক্ষকদের আলাদা মর্যাদা ও সম্মান দান করেছেন। ফলে সমাজে শিক্ষকমাত্রই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। কারণ শিক্ষকরা জাতির প্রধান চালিকাশক্তি। এক কথায় বলা যায়, শিক্ষক মানুষ চাষ করেন। যে চাষাবাদের মধ্য দিয়ে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে নীতি- নৈতিকতা ও জীবনাদর্শের বলয়ে একজন শিক্ষার্থী তার ব্যক্তিগত ও কর্মময় জীবনকে মুখরিত করে। মহানবী সা. এর ঐশী বাণী, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টিকর্তা, মানুষ ও প্রকৃতির পারস্পরিক সম্পর্কের নীতিমালা শিক্ষা দান করেছেন। তিনি নিজেই এ পরিচয় তুলে ধরে ঘোষণা করেছেন- ‘শিক্ষক হিসেবে আমি প্রেরিত হয়েছি (ইবনু মাজাহ)।’

শিক্ষাকে যাবতীয় উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হলে শিক্ষকের ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে নাজিলকৃত প্রথম আয়াতে জ্ঞানার্জন ও শিক্ষা সংক্রান্ত কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু জমাট রক্ত থেকে। পড়, আর তোমার প্রতিপালক পরম সম্মানিত। যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না (আল কুরআন: ৯৬ : ১-৫)। আল কোরআনের শিক্ষার আলোকে জ্ঞানার্জনের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন- ‘প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর বিদ্যার্জন করা ফরজ (ইবনু মাজাহ)।’

একজন আদর্শ শিক্ষকই শুধু আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করতে পারেন। এ জন্যই শিক্ষকতাকে অপরাপর পেশার মানদণ্ডে পরিমাপ করা যায় না। কারণ জ্ঞানই মানুষের যথার্থ শক্তি ও মুক্তির পথনির্দেশ দিতে পারে। এ মর্মে মহানবী সা. ইরশাদ করেন, ‘দুই ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারও পদ-গৌরব লোভনীয় নয়। তা হলো- ১. ধনাঢ্য ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তা সৎপথে ব্যয় করার ক্ষমতা দিয়েছেন; ২. ওই ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ বিদ্যা দান করেছেন এবং সে অনুসারে সে কাজ করে ও অপরকে শিক্ষা দেয় (বুখারি)। শিক্ষা অনুযায়ী মানব চরিত্র ও কর্মের সমন্বয় সাধনই হচ্ছে মহানবী সা. এর তাগিদ। নিজে শিক্ষা অর্জন করার পরক্ষণেই অপরকে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত ও চরিত্র গঠন করার দায়িত্বও শিক্ষকের। মহানবী সা. বলেন- ‘আল্লাহর পরে, রাসুলের পরে ওই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা মহানুভব, যে বিদ্যার্জন করে ও পরে তা প্রচার করে (বুখারি)। রাসুল সা. শিক্ষা, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষক ও শিক্ষার ব্যাপকীকরণে সদা সচেষ্ট ছিলেন। তাই তো প্রিয় নবী সা. বদরের যুদ্ধবন্দিদের মুক্তির জন্য মদিনার শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার চুক্তি করেছিলেন। যার মাধ্যমে তিনি বন্দিদের মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন।

এদেশের শিক্ষকগণ শিক্ষাদানের পাশাপাশি আদমশুমারি, ভোটার তালিকাভুক্তি, টিকাদান, শিশু জরিপ, উপবৃত্তি বিতরণ, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমে বাংলাদেশের শিক্ষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সুতরাং যার থেকে জ্ঞান অর্জন করা হয়, তিনিই আমাদের শিক্ষক। শিক্ষকের মর্যাদায় ইসলামের বক্তব্য সুস্পষ্ট। সম্মানজনক জীবনধারণের জন্য শিক্ষকদের যথেষ্ট অর্থ প্রয়োজন। অথচ এই মহান পেশায় যারা নিয়োজিত, তাদের নেই কোনো অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা। সামাজিক মর্যাদা ও সম্মানজনক জীবনধারণ উপযোগী বেতন- ভাতা না থাকায় মেধাবীরা শিক্ষকতায় আকৃষ্ট হচ্ছেন না। অথচ জ্ঞান অন্বেষণের গুরুত্ব ও শিক্ষকের মর্যাদা প্রসঙ্গে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, ‘যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে? (আল কুরআন; ৩৯ : ৯) জ্ঞাননির্ভর সমাজ গঠনে প্রয়োজন মানুষ গড়ার কারিগর। তাই শিক্ষকদের পর্যাপ্ত পেশাগত স্বাধীনতা থাকা দরকার। যেহেতু শিক্ষকরা শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় যেমন শিক্ষার উপকরণ ও শিক্ষা পদ্ধতি বিষয়ে বিশেষভাবে ওয়াকিবহাল, সেহেতু তাদের ওইসব বিষয় নির্বাচন কিংবা নির্ধারণ করার স্বাধীনতা দিতে হবে।
শিক্ষকরা সমাজের বিবেক ও স্পন্দন। সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করার ব্যাপারে শিক্ষকদের অবিস্মরণীয় অবদান আজও এ ভূখণ্ডের মানুষ ভক্তিভরে স্মরণ করে। শিক্ষকরা হচ্ছেন দেশ গড়ার প্রধান নিয়ামক শক্তি। তাই ইসলামের আলোকে শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষকদের আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষাদানে তৈরি করে তুলতে হবে। জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজনে সুদূর চীন দেশে পর্যন্ত যেতে বলা হয়েছে। রাসুল সা. বলেছেন, ‘তোমরা দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষা অর্জন করো।’

খেলাফতের যুগেই ইসলাম প্রত্যেকের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। শিক্ষাকে সহজলভ্য করতে তখন শিক্ষকের জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিকও নির্ধারণ করা হয়েছিল। যদিও দ্বীনি শিক্ষাঙ্গনের শিক্ষকরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জ্ঞান বিতরণ করতেন। আর তারা যেহেতু নিজেদের জীবিকার পেছনে ব্যতিব্যস্ত সময় পার না করে শান্ত মস্তিস্কে জ্ঞান বিতরণের পবিত্র কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন, তাই তৎকালীন খেলাফত ব্যবস্থা বা সরকার তাদের সম্মানে অভিষিক্ত করেছিল। তাদের জ্ঞান বিতরণের এ মহৎ কাজকে সম্মান জানিয়ে পরিবার-পরিজনের যাবতীয় আর্থিক খরচ বহন করেছিল, যেন জীবনের তাগিদে শিক্ষকদের ভিন্ন কোনো পথে পা বাড়াতে না হয়।
হযরত উমর রা. ও হযরত উসমান রা. তাদের শাসনামলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তারা শিক্ষক ও ধর্মপ্রচারকদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁদের যুগে মুয়াজ্জিন, ইমাম ও শিক্ষকদের সরকারি ভাতা দেওয়া হতো (কিতাবুল আমওয়াল)। বস্তুত ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে ইসলাম ও ইসলামের মনীষীরা শিক্ষক ও গুরুজনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দিয়ে আসছেন।

পরিশেষে বলতে পারি; ‘শিক্ষক বাঁচলে শিক্ষা বাঁচবে; শিক্ষা বাঁচলে দেশ বাঁচবে।’ দেশব্যাপী শিক্ষকদের বৈধ অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা করা, শিক্ষকদের জীবনের মান উন্নত করার ব্যাপারে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি এবং শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা, সর্বোপরি দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাংলাপোস্ট -( সাপ্তাহিক -)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category