1. mahadihasaninc@gmail.com : admin :
  2. hossenmuktar26@gmail.com : Muktar hammed : Muktar hammed
রাজনীতিকে শুভবৃত্তে আনার মিনতি আমার দেখা একজন সানাউল্লাহ মিয়া - dailybanglakhabor24.com
  • December 1, 2024, 11:42 pm

রাজনীতিকে শুভবৃত্তে আনার মিনতি আমার দেখা একজন সানাউল্লাহ মিয়া

  • Update Time : রবিবার, মার্চ ৩১, ২০২৪ | ভোর ৫:৪২
  • 62 Time View

মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার

মনে হয় এই বুঝি পাশ দিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া। ছুটছেন কোর্টের দিকে অথবা কোর্ট থেকে ফিরছেন। এই বোধ-উপলব্ধি একান্তই আমার ব্যক্তিগত। আর জাগতিক বাস্তবতা হচ্ছে ২০২০ সালের ২৭ মার্চ দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে ইহলোকে চলে গেছেন অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সানা ভাই। দীর্ঘদিন অসুস্থতার মাঝে এ তারিখ শুক্রবার রাত নয়টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এর আগের দিন তাঁকে ভর্তি করা হয় ওই হাসপাতালটিতে। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগেই ব্রেইন স্ট্রোক করেন তিনি। এরপর থেকেই তিনি দেশ–বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
রাজনৈতিক খেলোয়াড়দের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলই একমাত্র লক্ষ্য হয়ে পড়ায় দলগুলোর কাছে গুরুত্ব হারাতে থাকে নৈতিকতা ও আদর্শবান নেতাকর্মীদের। অর্থের কাছে মার খেতে থাকেন তারা। অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াদের জন্য অবহেলা-অনাদর হয়ে ওঠে নিয়তির মতো। দলও তাকে বা তাদের কিঞ্চিৎ স্মরণের বেশি কিছু মনে করে না। রাজনীতি ও দিন যেদিকে গড়াচ্ছে এক সময় হয় তো তাদের দূরবীন দিয়ে তালাশ করেও পাওয়া যাবে না। ক্রমশ পচনশীল পণ্যের তালিকায় তারা।
সানাউল্লাহ মিয়ার আইনপেশায় বলীয়ান থাকা কাছ থেকে দেখেছি। রাজনৈতিক আদর্শও দেখেছি। বিএনপির জন্য নিবেদিত ভূমিকা দেখেছি। বঞ্চিত হতে হতে তিলে তিলে দুনিয়া ত্যাগের দৃশ্যও চোখে ভাসছে। কীভাবে চলে গেছে তিনটি বছর। তার চাহনি ও কাছে ডাকার মায়াজালে আটকে আছি এখনো। কী মায়াবি ডাক- ‘ওই অলিদ কোথায় যাওয়া হচ্ছে। আসো গল্প করি দুই ভাইমিলে।‘


সানাউল্লাহ ভাইয়ের ভ্রাতৃত্ববোধ স্নেহময় আন্তরিকতার সাথে পেরে উঠতে পারিনি কখনো। আমি বেশি ব্যস্ত থাকতাম আমাদের সকলের অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন অভিভাবক ও জীবন চলার পথের আলোর দিশারী, আমার নিজের জীবন চলার পথের একমাত্র দিকনির্দেশনাকারী পিতৃতুল্য শিক্ষাবিদ, প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডক্টর ইমেরিটাস এমাজউদ্দীন আহমদ স্যারের সাথে। সানা ভাই মাঝেমধ্যে ফোনে জিজ্ঞেস করে জানতে চাইতেন আমি কি কাঁটাবন আছি? বা স্যার কি বাসায় আছেন? জেনে চলে আসতেন কাটাবনে স্যারের বাসায় । তিনি এলে এমাজউদ্দীন স্যারও খুশি হতেন। ফাঁকে আমরা একে অপরের সাথে আলাপ আলোচনায় মেতে উঠতাম। স্যারও বাবার ভূমিকায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতেন। মাঝে মধ্যে সানাউল্লাহ ভাই কমবেশি দুই- তিন কাঁটাবন না গেলে এমাজউদ্দীন স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করতেন সানাউল্লাহ আসেনি কেন? তার কি কোনো সমস্যা হয়েছে?
বলতেন- দাও বাপু কল দাও সানাউল্লাহকে। তাকে আসতে বলো। চলার পথে কত যে স্মৃতি। জানা-অজানা, চেনা-অচেনা কত লোক আইনি বিপদে পড়লেই ছুটে যেতেন কর্মীবান্ধব একনিষ্ঠ জাতীয়তাবাদী দলের পাগল প্রিয় সানাউল্লাহ ভাই। নিজ দলীয় নেতা-কর্মী বা নিজ সমমনা দলের যে কেউ হোক না কেন এতে তার মধ্যে কোনো ধরনের হিংসা বিদ্বেষ মনোভাব দেখিনি কখনো। কীসের ছুটির দিন, কীসের রাত। এতে কেউ তার পরিশ্রমের সঠিক পাপ্য মূল্য পরিশোধ করেছেন বা তাঁকে তাঁর কাজের সততার সমসাময়িক হিসেবে টাকা পয়সা দিয়েছেন এমন ঘটনা আমার জানা নেই। এ ধরনের দ্বিতীয় ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না । এমনও দেখা গেছে নেতা-কর্মীদের কোর্টে হাজিরার জন্য আদালত থেকে যে ফরমটি ক্রয় করতে হয়, সেই ফরমের মূল্য ফ্রি তিনি নিজের পকেট থেকে পরিশোধ করতেন সানাউল্লাহ মিয়া। আগামী দিনের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের মধ্যে কি এমন নিঃস্বার্থবান, অলোভনীয় সাচ্চা মানুষ দেখতে পাবো কিনা কে জানে!
দলের অবহেলা আর অনাদরে হিমালয় সমান কষ্ট নিয়ে সানাউল্লাহ মিয়া দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। ১/১১ এর সময় আবদুল মান্নান ভূইয়াকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। একই এলাকায় সানাউল্লাহ মিয়ার বাড়ি। সংগত কারণেই এই আসনটিতে তিনি নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগলেন। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার হলেই তিনি চলে যান নরসিংদীর শিবপুরে। পুরো সপ্তাহে যা আয় করেন, সবই সেখানে খরচ করেন তিনি। আশা নিয়ে ২০১৮ সালে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন। কিন্তু, তাঁর আশায় একেবারে গুড়েবালি ঢেলে দেয় পার্শ্ববর্তী এলাকার এক টাকাওয়ালা। সানাউল্লাহ মিয়ার জায়গায় টাকাওয়ালা মনোনয়ন পেলেন। এতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া দীর্ঘদিন আইন পেশার পাশাপাশি বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। এক এগারো সরকারের সময় খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনা করে সবার নজরে আসেন। বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক থাকার সময় তিনি কয়েকটি মামলার আসামি হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েক মাস হাসপাতালে ভর্তি থেকে ২০২০ সালের ২৭শে মার্চ তিনি মারা যান। সানাউল্লাহ মিয়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।
মারা যাবার আগে অনেককেই সানাউল্লাহ মিয়ার বলেছিলেন, তাঁর দুঃখ ছিল একটাই। মমোনয়ন দেয় নাই তাতে কোন আফসোস নেই। তবে একটা জায়গায় তাঁর কষ্ট ছিল। তাঁকে কেউ মুখ দিয়ে বলেওনি মনোনয়নটা দিতে পারলাম না। বা এই কারণে আপনাকে দেওয়া গেল না। এমন কোন বাক্য তিনি কারো নিকট থেকে শুনেন নাই। স্রেফ টয়লেট পেপারের মতই তাঁকে ছুড়ে ফেলা হল। এটাই ছিল সানাউল্লাহ মিয়ার কষ্ট। সানাউল্লাহ মিয়া যাদের কর্মী বানালেন, নেতা বানালেন তরাও তো কেউ তার জন্য একটা স্মরণসভার আয়োজন করলো না। এই পরিণতি দেখে আমার বিশ্বাস সানাউল্লাহ মিয়াদের মত আমরাও একদিন অনাদরে, অবহেলায় হারিয়ে যাবো স্মৃতির আড়ালে। সানাউল্লাহ মিয়ায় হাতের সৃষ্টিই তার চরিত্রহনন বা তার ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা আর সমালোচনায় ব্যস্ত থাকবে।
একদিকে দলীয় অবহেলা, অন্যদিকে সরকারের নিপীড়নের নিষ্ঠুরতার নির্মম শিকারও হয়েছেন সানাউল্লাহ মিয়া। মৃত্যুর তিনবছর পরে কবর বাসিন্দা হয়েও শাসকগোষ্ঠীর
অমানবিক নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পেতে পারেননি সানাউল্লাহ মিয়া। মৃত্যুর তিনবছর পরে গতবছরে ২৮ অক্টোবর বিএনপি’র ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে ফেরার পথে মৌচাকে পুলিশের উপর ককটেল ছুড়ে নাশকতা মামলার আসামি হয়েছেন এই বিএনপি’র সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া।
রামপুরা থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুর জলিল বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। মামলায় ২৪১ জন আসামির মধ্যে এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াকে ২২৬ নম্বর আসামি করা হয়। মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করা ছাড়া আর করার কিছু থাকেনি এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়ার পরিবারের। চতুর্থ মৃত্যু বার্ষিক উপলক্ষ্যে পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমি আমার পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি । আল্লাহ তায়ালা যেন তাঁহার পরিবারের সদস্যদের উপরে রহমত বর্ষণ করেন।

এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াকে কেউ স্মরণীয় না করলেও কিছু যায় আসেনা। তাঁর কাজে কর্মের গুণে গুণান্বিত হয়ে আছেন এবং থাকবেন। তাঁহাকে ব্যবহার করে যে বা যাহারা বড় বড় পদে আসীন হয়ে বসে আছেন এই সমস্ত স্বার্থান্বেষীদের ধ্বংস অনিবার্য। সানাউল্লাহ মিয়া’র নামটি স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায় । তাঁহার মৃত্যুর পর থেকে আমি আমার পক্ষ থেকে প্রতিবছরই আমার সাধ্যমতো তাঁহার মাগফেরাত কামনা করে আলোচনা দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে আসছি। এবার নির্ধারিত তারিখে করতে পারিনি। বিলম্ব হলেও যথার্থভাবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাব এবারেও চতুর্থ মৃত্যু বার্ষিকীতে একটি দোয়া মাহফিলের আয়োজন করতে যাচ্ছি পহেলা এপ্রিল সোমবার। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন যেন ” সানাউল্লাহ মিয়া ” ভাইয়ের জীবনের সমস্ত নি:স্বার্থ ত্যাগ করে যাওয়া কাজগুলোকে কল্যাণমূলক কাজ হিসেবে কবুল করুন, তাহাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন আমিন আমিন ছুম্মা আমিন।

লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাংলাপোস্ট

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category