মুফতি মেনক
এক. ক্ষমা না চেয়ে এবং ক্ষমা মঞ্জুর না করে রমজানকে পার হতে দেবেন না। অজ্ঞতা এবং অবহেলা অতিক্রম করতে দেবেন না আপনাকে। ক্ষমা চান এবং সর্বশক্তিমানের নৈকট্য লাভ করুন। এই রমজানের শেষ দিন নাগাদ এটা করুন।
দুই. সর্বশক্তিমান যখন আমাদের অপেক্ষা করতে বাধ্য করেন, তখন এতে প্রজ্ঞার বিষয় থাকতে পারে। এটিকে শাস্তি বলে মনে করবেন না। এটি কোনও সুরক্ষা অথবা সম্ভবত অন্য কিছুর প্রস্তুতিও হতে পারে। সর্বদা ভাল চিন্তাভাবনাটি করুন কারণ তিনি সর্বদা আমাদের জন্য সেরাটি চান। এটি আমরা যা কল্পনা করেছিলাম তা নাও হতে পারে তবে এটি হলো সেটি যা আমাদের সেই সময়ে প্রয়োজন!
পূনশ্চ:
এক: অন্যরা ভালো করলে আমরা কেন খুশি হতে পারি না? আপনি যখন আপনার সাফল্যের গল্প বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেন তখন বিদ্বেষীদের পূর্ণ শক্তিতে বেরিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত থাকুন। তারা আপনাকে উপহাস করতে পারে, আপনার সম্পর্কে গুজব ছড়াতে পারে অথবা এমনকি কঠোর শব্দও প্রয়োগ করতে পারে। চিন্তা করবেন না। যা সঠিক তার উপর ফোকাস করুন এবং কাজ চালিয়ে যান।
দুই: ফিলিস্তিনে যা ঘটেছে তাতে আমি বিধ্বস্ত। এটি প্রতি রমজান মাসে একটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা এর অবসান ঘটার জন্য প্রার্থনা করি যাতে আমাদের একটি শান্তিপূর্ণ পবিত্র মাস থাকতে পারে। আমীন।
তিন. সর্বশক্তিমান। অশ্লীল কথাবার্তা, অজ্ঞতাপূর্ণ কাজ, যুক্তিতর্ক এবং অপমান করা থেকে আমাদের দূরে রাখুন, কেবলমাত্র আমরা রোজা রাখার কারণে নয়, এই কারণে যে এসব কিছু আপনার ক্রোধ সৃষ্টি করে। এই জাতীয় কাজগুলি প্রায়শই আঘাত করা, ভয় দেখানো, মানসিক বিপর্যয় ঘটানো ইত্যাদির উদ্দেশ্যে হয়। আসুন আমরা আমাদের কাজগুলিকে পরিশুদ্ধ করি এই রমজানে।
চার. আমরা একেবারে নিখুঁত নই। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ভুল করতে থাকব। তবে এটি প্রক্রিয়ারই অংশ। নিজের ব্যাপারে এবং নিজের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ শুরু করবেন না। নিজের প্রতি সদয় হোন। নিজের ছোট খাট বিচ্যুতিকে ক্ষমা করুন। সর্বদা সর্বশক্তিমান দ্বারা পরিচালিত হন এবং একটি বরকতময় যাত্রা করুন।
দ্রষ্টব্য:
নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভান্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামার প্রভৃতি কমনীয় জিনিসকে মানুষের নিকট শোভনীয় করা হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর নিকটেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে। বল, আমি কি তোমাদেরকে এ সব বস্তু হতে উৎকৃষ্ট কোন কিছুর সংবাদ দেব? যারা সাবধান (পরহেযগার) হয়ে চলে তাদের জন্য রয়েছে উদ্যানসমূহ যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, তাদের জন্য পবিত্রা সঙ্গিনীগণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তার দাসদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত। যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা বিশ্বাস করেছি; অতএব আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা কর এবং দোযখের শাস্তি থেকে আমাদেরকে রক্ষা কর।’ যারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, দানশীল এবং রাত্রির শেষাংশে ক্ষমাপ্রার্থী। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত :১৪-১৭)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন, রাতের অর্ধেক অথবা দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে মহান ও প্রাচুর্যময় আল্লাহ পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন, কোনো প্রার্থনাকারী আছে কি যাকে প্রদান করা হবে? কোনো আহ্বানকারী আছে কি যার আহ্বানে সাড়া দেওয়া হবে? কোনো ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছে কি, যাকে ক্ষমা করা হবে? আল্লাহ তায়ালা ভোর বিকশিত না হওয়া পর্যন্ত এরূপ বলতে থাকেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬৫১)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল সা.বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার পূর্বের পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বুখারি: ৩৭)
হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ বলেন, ‘তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তা হলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (তিরমিজি : ৩৫৪০)
হজরত ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, কোনো ব্যক্তি নিয়মিত ক্ষমাপ্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। (আবু দাউদ : ১৫১৮)।