নিজস্ব প্রতিবেদক বাংলা খবর: ১০ দফা দাবিসহ সরকার পতনের যে আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি, তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান দলটির শীর্ষ নেতারা। অব্যাহত আন্দোলন কর্মসূচিতে যেন ভাটা না পড়ে সেজন্য রমজান মাসে ইফতার পার্টির পাশাপাশি আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
শীর্ষ নেতারা বলছেন, তারা চলমান আন্দোলনে কোনো রকম ভাটা দেখতে চান না। তাই রমজান মাসে মানববন্ধন, পদযাত্রা, প্রতিবাদ সমাবেশ এবং বিক্ষোভের মতো কর্মসূচি পালন করবেন। এর ফলে ‘ঈদের পর আন্দোলন’ এই তকমাও ঘুচবে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
ইতিমধ্যে বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে চারটি ইফতার পার্টি করবে বলে জানিয়েছে। এছাড়াও বিএনপির সমমনা জোটগুলোর ইফতার পার্টিতেও দলটির শীর্ষনেতারা অংশ নেবেন।
বিএনপির একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য বাংলা খবরকে জানান, সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেও হামলা চালাচ্ছে, গুলি করছে, গায়েবি মামলা দিচ্ছে। তারপরও আমাদের আন্দোলনের দাবানল উত্তপ্ত হচ্ছে। কারণ, এ আন্দোলনে ইতিমধ্যে জনগণ সম্পৃক্ত হয়ে গেছে।
রমজানে আন্দোলন কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা খবরকে বলেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী রমজানে ইফতার পার্টির পাশাপাশি আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলন ঘোষণা দিয়ে আসে না। আজ থেকে দেড় বছর আগেও জনগণ ভয়ে রাজপথে নামেনি। কিন্তু এ ভয় এখন আর নেই। জনগণ মৃত্যুকে জয় করতে শিখেছে। গত ৬ মাসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে ১৭ জন শহীদ হয়েছে। গণতন্ত্র মুক্ত না পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বাংলা খবরকে বলেন, আমরা রমজানের কর্মসূচি এখনোচূড়ান্ত করিনি। সাধারণ মানুষও আমাদের অনুরোধ করেছে রমজানে যেনো কর্মসূচি অব্যাহত থাকে। কারণ, এ আন্দোলন শুধু বিএনপির নেতাকর্মীদের নয়, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণেই এ আন্দোলন।
দলের অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা খবরকে বলেন, সরকার মনে করেছিলো রমজান মাসের গ্যাপে বিএনপির আন্দোলন থমকে যাবে। আমি সরকারকে বলতে চাই, বিএনপি ইচ্ছে করলেও এ আন্দোলন স্তব্ধ করতে পারবে না। কারণ, এ আন্দোলন জনগণের। নেতৃত্ব দিচ্ছে জনগণ, বিএনপি সমর্থক। তিনি বলেন, রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করেই এ চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর রাজপথ উত্তপ্ত করতে ব্যর্থ হয় বিএনপি। এমনকি ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি একটি দুর্নীতির মামলায় দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলেও জোরালো আন্দোলনে ব্যর্থ হয় বিএনপি।
কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২২ সালের শুরুতে যুগপৎ আন্দোলনের ছক তৈরি করে বিএনপি। ২০ দলীয় জোটের বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শুরু করে সংলাপ। তৃণমূলের সঙ্গে বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠক এবং বিভাগীয় শহরে বড় ধরনের গণ সমাবেশ সফল করার পর থেকে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। যদিও গত ডিসেম্বরে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটি যেভাবে রাজপথ উত্তপ্ত করেছিলো। তবে সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে পরবর্তীতে পদযাত্রা ও মানববন্ধনের মতো দুর্বল কর্মসূচির দিকে ধাবিত হয় দলটি। এসব কর্মসূচির বিষয়ে তখন বিএনপি নেতাদের বক্তব্য ছিলো সামনে রমজান, তাই কঠিন কর্মসূচি অব্যাহত রাখা যাবে না। এ বিষয়ে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক লিটন মাহমুদ দলটির শীর্ষনেতাদের কাছে আরও জোড়ালো কর্মসূচি দাবি করেন। তিনি বাংলা খবরকে বলেন, আমরা এমনিতেই অনেক দেরি করে ফেলেছি। আর সময় দেয়া যাবে না। আন্দোলনে কোনো গ্যাপ আনা যাবে না। দু বছর আগেও জনগণকে রাজপথে নামাতে পারিনি, এখন জনগণই আমাদের কর্মসূচি দিতে বলে।
বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক বাংলা খবরকে বলেন, বিএনপি দেশ রক্ষার আন্দোলনে নেমেছে। এ আন্দোলন রোজার মধ্যে বন্ধ থাকার কোনো কারণ নেই। মানুষের দৈনন্দিন জীবন চলমান থাকে। আমাদের আন্দোলনও চলমান থাকবে। ক্ষেত্র বিশেষে এ রমজানে আরো কঠিন কর্মসূচিও আসতে পারে।