ড. মো: মিজানুর রহমান
শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৮৮৬ সালের ৪ মে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিক বিক্ষোভ ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে ১৮৮৯ সালে প্যারিসের সোশ্যালিস্ট পার্টি পয়লা মে-কে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমদিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। তখন থেকে ক্রমান্বয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দিবসকে ‘মে দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। অন্য দিকে, প্রায় সাড়ে ১৪০০ বছর আগে ইসলামের নবী মোহাম্মদ সা: শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে আল্লাহ প্রদত্ত যে নীতি প্রণয়ন করেছিলেন তা-ই ইসলামী শ্রমনীতি। এ লেখায় মে দিবসে শ্রমিকদের প্রাপ্তি ও ইসলামের শ্রমনীতি নিয়ে আলোচনা করব।
মে দিবসের শ্রমনীতি
পৃথিবীতে মে দিবসের ঘটনা সারা বিশ্বের মানুষের কাছে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের ইতিহাস হিসেবে সাড়া জাগিয়েছিল। মে দিবস মনে করিয়ে দেয় পুঁজিবাদী অর্থনীতির কুৎসিত, ভয়ঙ্কর, অমানবিক ও বীভৎস চেহারা। মে দিবস গুলি করে শ্রমিকদের হত্যা করা, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো, মানব সৃষ্ট গোলামির জিঞ্জির থেকে মুক্ত হওয়া এবং জেল-জুলুম ও মৃত্যুর ভয়কে জয় করার ইতিহাস। অথচ শ্রমের সময় ৮ ঘণ্টা, ন্যায্য মজুরির দাবি ও নিপীড়ন-নির্যাতন রোধে ১৮৮৬ সালে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা আজো বাস্তবায়িত হয়নি। পুঁজিবাদের বিষময় প্রতিক্রিয়া হিসেবে ১৯১৭ সালে আবির্ভাব ঘটেছিল সমাজতন্ত্রের; যার মূল কথা ছিল শ্রমিকরা সাধ্যানুযায়ী কাজ করবে, প্রয়োজন অনুযায়ী মজুরি পাবে। কিন্তু তা কোনো কালে কোনো সময় বাস্তবায়িত হয়নি। পুঁজিবাদ যেভাবে শ্রমিকদের সাথে চরম জুলুম, নির্যাতন ও অধিকারবঞ্চিত করে চলেছে, তদ্রূপ সমাজতন্ত্র শ্রমিকদের সাথে চরম প্রতারণা ও শোষণ করে চলেছে। সমাজতন্ত্র আজ পুঁজিবাদের লেজুড়বৃত্তিতে পরিণত হয়েছে। একশ’ বছর যেতে না যেতেই সমাজতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা বেজেছে। শ্রমিকরা পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের যাঁতাকলে পড়ে বারবার যে প্রতারিত হয়েছে এর একমাত্র কারণ হলো, মানবরচিত শ্রমনীতির কুফল। ফলে পুঁজিবাদও সমাজতন্ত্রের মতো মৃত্যুঘণ্টা বাজার অপেক্ষায় রয়েছে। বিকল্প হলো ইসলামী অর্থব্যবস্থা ও শ্রমনীতি; আসুন, দেখি এই নীতি কী বলে।
ইসলামে শ্রমনীতি ও শ্রমিকের মর্যাদা
আল্লাহ বলেন- ‘এমন বহু লোক আছে যারা জমিনের দিকে দিকে ভ্রমণ করে আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) খুঁজে বেড়ায়।’ (সূরা মুজাম্মিল, আয়াত-২০) আল্লাহ আরো বলেন- ‘সালাত আদায় হয়ে গেলে জমিনে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) খুঁজে বেড়াবে।’ (সূরা জুমুয়া, আয়াত-১০) হাদিসে উল্লিখিত হয়েছে, ‘হালাল উপার্জন মুসলিম মাত্রের ওপর অবশ্য কর্তব্য।’ (আত-তারগিব-৩৪৫) অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, ‘হালাল জীবিকা অন্বেষণ ফরজ ইবাদতের পরে একটি বাড়তি ফরজ।’ (মিশকাত-২৬৬১)
রাসূল সা: নিজে বকরি চরিয়েছেন, পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কূপ থেকে বালতিতে পানি উঠিয়েছেন, ব্যবসায় করেছেন, মাটি খনন করেছেন, রান্নার কাঠ সংগ্রহ করেছেন, রণাঙ্গনে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। তার কন্যা ফাতিমা ঘরের সব কাজ নিজেই করতেন। আদম আ: জমি চষে শস্য ফলাতেন; নুহ আ: ছিলেন কাঠমিস্ত্রি; ইদরিস আ: ছিলেন দর্জি। দাউদ আ: ছিলেন কামার, জাকারিয়া আ: ছিলেন তাঁতী আর মুসা আ: ছাগলের রাখাল। সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিতে সব কাজই সম্মানজনক। রাসূলের ভাষায়- ‘নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কেউ খায়নি; দাউদ আ: নিজের হাতে কাজ করে খেতেন।’ (মিশকাত-২৬৩৯) সৎ ব্যবসায়ীকে তো সুসংবাদ শোনানো হয়েছে এভাবে- ‘সত্যবাদী, বিশ্বস্ত মুসলিম ব্যবসায়ী কিয়ামতে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গী হবে।’ (তিরমিজি- ৫১৫) অতএব, শ্রম ও পরিশ্রম-সাপেক্ষে স্বাবলম্বী হওয়ার বিকল্প নেই। এ জন্যই সাহাবিরা সবাই ছিলেন স্ব-শ্রমিক। (বুখারি শরিফ-৭৮৯)
ইসলামে শ্রমিক এবং মালিকের অধিকার
শ্রমিকের যা অধিকার তা-ই তার মালিকের কর্তব্য ও দায়িত্ব। ইসলাম শ্রমিকের অধিকার আদায়ে মালিককে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছে। যেমন- হাদিসের ভাষায় ‘মজুরের মজুরি নির্ধারণ না করে তাকে কাজে নিযুক্ত করবে না।’ (বায়হাকি) শ্রমিককে মানবিক জীবনযাপনের উপযোগী ন্যায্য মজুরি পারিশ্রমিক দিতে হবে। রাসূল এর ভাষায়- ‘ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের পাওনা মিটিয়ে দাও।’ (ইবনে মাজাহ-৮১৭) শ্রমিকের ওপর বাড়তি বা দুঃসাধ্য কাজ চাপাবে না। তার সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। শ্রমিকের (মুসা আ:) প্রতি একজন মালিকের (হজরত শোয়াইব আ:) বক্তব্য ছিল- ‘আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না; আল্লাহ চাইলে তুমি আমাকে সদাচারী হিসেবে পাবে।’ (সূরা কাসাস, আয়াত-২৭)
শ্রমিকের ক্ষমার যোগ্য ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখতে হবে। রাসূলুল্লাহ সা: অধীনস্থকে ক্ষমার ব্যাপারে তাগিদ করলে এক সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, আমি তাকে দৈনিক কতবার ক্ষমা করব? রাসূল সা: বললেন, ‘প্রতিদিন ৭০ বার’। (আবু দাউদ-৩৪১) দান-সদকা মানুষের বালা-মুসিবত দূর করে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করে। সুতরাং গরিব শ্রমিককে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দান করা উচিত যাতে তার জীবন কিছুটা সুন্দর হয়। আল্লাহ বলেনÑ ‘আল্লøাহ জীবনোপকরণে তোমাদের কাউকে বা কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ থেকে এমন কিছু দেয় না যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায়। তবে কি ওরা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে?’ (সূরা নাহল, আয়াত-৭১)
শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাসূল সা: বলেন, ‘শ্রমিকদের প্রতি ওই পরিমাণ কাজের দায়িত্ব চাপাবে, যা তারা সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পারে এবং তাদের শক্তি অনুসারে কাজ নেবে যাতে তাদের এরূপ কাজ করতে না হয়, যা তাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হয়।’ (মিশকাত) রাসূল সা: ইন্তেকালের সময় দু’টি মাত্র জিনিসের ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে গেছেন তার একটি সালাত, অন্যটি অধীনস্থ। তার ভাষায়Ñ ‘সাবধান! সালাত এবং অধীনস্থের বিষয়ে সাবধান!’ (ইবনে মাজাহ-৫১৯)
মালিকের যেমন দায়িত্ব রয়েছে শ্রমিকের অধিকার রক্ষার, তেমনি শ্রমিকেরও দায়িত্ব রয়েছে মালিকের অধিকার রক্ষার। এই অধিকার আদায়ে শ্রমিকের করণীয় হলো- যে কাজ সহজে বা কিছুটা বাড়তি কষ্ট করে সম্পন্ন করা সম্ভব এমন কাজই নেবে; অসাধ্য সাধনের ঝুঁকি নিয়ে জীবন ও সুনামকে বিপন্ন করবে না। যে কাজ সম্পাদনের শক্তি-সামর্থ্য নেই, তাতে জড়িত হওয়ার মানে হয় না। (সূরা কাসাস, আয়াত-২৬) স্বীয় কাজ বা দায়িত্বকে আমানত মনে করে তা সম্যকভাবে আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহর তাগাদা রয়েছে- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত তার প্রাপকের কাছে পৌঁছে দিতে।’ (সূরা নিসা, আয়াত-৫৮) শ্রমিককে অবশ্যই মালিকের কল্যাণকামী হতে হবে; নতুবা দায়িত্ব পালনে অবহেলা অবশ্যম্ভাবী।
ইসলামী শ্রমনীতির শিক্ষা
পুঁজিবাদ যদি শ্রেণিবিভেদ সৃষ্টি করে তাহলে সমাজতন্ত্র যেন শ্রেণিবিদ্বেষের জন্ম দেয়। অথচ ইসলাম কখনো মানুষের মধ্যে শ্রেণিবিভেদ তৈরি করেনি। সব মানুষ এক কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে এটিই প্রমাণ করে, ইসলামের দৃষ্টিতে সবাই সমান। তাই ইসলাম কখনো শ্রমিক ও মালিক নামে দু’টি শ্রেণী তৈরি করেনি; বরং ইসলামে প্রত্যেক মানুষকেই শ্রমিক বলে বর্ণনা করা আছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি পরিশ্রমী বা শ্রমজীবী করে।’ (সূরা বালাদ, আয়াত-৪) অথচ পুঁজিবাদীরা তাদের সুবিধার্থে সমাজে মালিক-শ্রমিক নামে দু’টি শ্রেণী তৈরি করতে চায়। তাই ‘পয়লা মে বা শ্রমিক দিবস’ পালনের অর্থই হচ্ছে, সমাজে মালিক ও শ্রমিক নামক দু’টি শ্রেণীর উদ্ভব করা।
মে দিবসে একজন শ্রমিক দৈনিক আট ঘণ্টা ডিউটি করার ধারণা পাওয়া যায়। অথচ রাসূল সা: সাড়ে ১৪০০ বছর আগেই প্রতিটি মানুষের দিনের সময়ের মধ্যে, এক ভাগ আল্লাহর ইবাদতের জন্য, এক ভাগ পরিবার পরিজনের সাথে সময় দেয়ার জন্য এবং আরেক ভাগ ব্যক্তিগত কাজ ও নিজের শরীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। (তিরমিজি)
শ্রমের গুরুত্ব ও শ্রমিকের প্রাপ্তি
শ্রম ছাড়া উৎপাদন সম্ভব নয়, শ্রমের মর্যাদা ছাড়া গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা ছাড়া উৎপাদনশীল মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। শ্রম এবং মেধা দিয়ে যে উৎপাদন তা থেকেই সমাজ বিকশিত হয়, পুঁজি বিকশিত হয়। কিন্তু মানুষ যখন কৃষি থেকে বিচ্যুত হয়ে শিল্পে এসেছে তখন থেকে পুঁজিপতিরা ক্ষুদ্র থেকে দ্রুতই বড় হতে শুরু করে এবং যে মানুষ কৃষক থেকে শ্রমিকে রূপান্তরিত হয়েছে তারা সত্যিকার অর্থে সর্বহারা শ্রেণী হিসেবে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে। পুঁজির মালিক শ্রমিকের সাথে ক্রীতদাসের মতো আচরণ শুরু করে, তাদের ওপর চালাতে থাকে শোষণ-নির্যাতন। শ্রমিকদেরকে এমনভাবে পুঁজির জালে আবদ্ধ করে ফেলে যে, তারা বাঁচার জন্য আট ঘণ্টার চেয়ে অনেক বেশি ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য হয়। ভবিষ্যতে একটি সুন্দর পৃথিবীর কথা চিন্তা করারও সময় তারা পায় না।
মে দিবসে আট ঘণ্টা কাজের দাবি ছিল প্রকাশ্যে কিন্তু এর অন্তরালে ছিল শোষণমুক্তির আকাক্সক্ষা। মে দিবস যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল তা আজ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের শ্রমিকরা অর্জন করতে পারেনি; বরং তারা মালিকের হাতের পুতুল হয়ে বেঁচে আছে। বেঁচে থাকার মতো মজুরি বা বকেয়া মজুরি আদায়ে শ্রমজীবী মানুষকে বারবার আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষের শ্রমের ফলেই উৎপাদন বাড়ছে, রফতানি আয় বাড়ছে, জিডিপি বাড়ছে কিন্তু শ্রমিক ন্যায়সঙ্গত মজুরি পাচ্ছে না। মজুরি বৃদ্ধির সাথে সাথেই দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঘটছে, ফলে শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়ন কঠিন হয়ে পড়ছে। বেতন-বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ এবং পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা এখনো ঘটছে। অথচ রাষ্ট্রকাঠামো সেখানে মালিকের তাঁবেদার হয়ে, নীরব দর্শক থেকেও মে দিবস পালন করছে।
ট্রেড ইউনিয়নের আইনগুলোতে ফাঁকফোকর রেখে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, কোনো শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন করতে গেলে সে তার চাকরি হারাবে। অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি অত্যন্ত সুকৌশলে সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে ভালো কথা বলে মালিকের বিরুদ্ধে শ্রমিকের ক্ষোভ ও অধিকারের কথা বলার শক্তিকে অবদমিত করে রাখছে। ফলে একজন ভালো শ্রমিকনেতাও ক্রমান্বয়ে সুবিধাবাদীতে পরিণত হচ্ছে। এরা চাঁদাবাজি করছে, মালিকের টাকা খেয়ে শ্রমিক মালিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। ফলে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। পুঁজির কাছে শ্রমিকের দাসত্ব প্রলম্বিত হচ্ছে।
সুতরাং মে দিবসের শিক্ষার চেয়ে বড় শিক্ষা হতে হবে ইসলামী শিক্ষা। অনুসরণ করতে হবে ইসলামের শ্রমনীতি। শ্রমজীবী মানুষকে প্রগতিবাদীদের সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চেতনায় জাগিয়ে তোলা নয়; বরং ইসলামী মূল্যবোধে জাগিয়ে তুলতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে যে আয় বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে, পুঁজিপতি মালিকদের শোষণ এবং সমাজতন্ত্রের ধ্বজাধারীরা শ্রমিকের অধিকার আদায়ের নামে মালিক এবং শ্রমিকদের মধ্যে যে বিভেদ ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, তার থেকে বেরিয়ে আসার মূলমন্ত্র কেবল ইসলামের নীতির মধ্যেই রয়েছে। এ শ্রমনীতিই পারে দেশের নৈরাজ্য, অন্যায়, নির্যাতন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দেশের অর্থ বিদেশে পাচারের মতো আত্মঘাতী কার্যকলাপ থেকে দেশকে রক্ষা করতে।
শ্রমিক ও মালিকের পারস্পরিক অধিকার আদায়ের সমস্ত সমস্যার সমাধান হচ্ছে একজন দায়িত্বশীলের দায়িত্বজ্ঞান; আর দায়িত্বজ্ঞানের পথে প্রেরণার উৎস হচ্ছে আল্লাহ ও পরকালের ভয়। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল। আর কিয়ামতের দিন প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সুতরাং জনগণের শাসককেও কিয়ামতের দিন তার দায়িত্ব সম্পর্কে; পুরুষকে পরিবারের দায়িত্ব সম্পর্কে; স্ত্রীকে তার স্বামীর ঘরসংসার এবং সন্তানের দায়িত্ব সম্পর্কে; এমনকি শ্রমিক, চাকর-চাকরানীকেও তার মালিকের সম্পদ এবং কর্মের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।’ (মিশকাত-৩৫১৬)।
সুতরাং আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল সা: প্রদর্শিত শ্রমনীতিই পারে শ্রমিক-মালিক উভয়ের অধিকার রক্ষা করতে; আসুন অনুসরণ করি।
লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট
ইমেইল : mizan12bd@yahoo.com