মোহাম্মদ সেলিম মিয়া
শুধুই কি সকাল? ক্লান্ত দুপুর, অলস বিকেল কিংবা সন্ধ্যার আড্ডাও জমিয়ে তোলে এক কাপ চা। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিন শুরু হয় না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। ফুটপাতে টং দোকান থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হোটেল সবখানেই চায়ের সমান কদর। দুধ, চিনি দেওয়া ঘন চা হোক বা আদা দেওয়া সুগন্ধি পাতা চা, চায়ের নেশায় মজে সবাই। তবে এবার মানুষ নয়, চায়ের নেশায় মজেছে ছাগলও। আর সেই চা যদি হয় গরম তাহলে ব্যাপারটা কী বিস্ময়কর নয়! হ্যাঁ এমনই এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ায়। মানুষের মতোই ছাগল প্রতিদিন তিনবেলা চা খায়। ব্যত্যয় ঘটলে রীতিমতো হয়ে যায় উচ্ছৃঙ্খল। কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এক নাপিতের দুটি ছাগল এমনই বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে; যা দেখে বিস্মিত স্থানীয়রাও।
সরেজমিন কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনালের সামনে বকুল ফুলের গাছের নিচে টেবিলের ওপর আয়না রেখে এক শ্রমিকের দাড়ি কাটছেন নাপিত বাবু উদ্দিন। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এখানে নাপিতের কাজ করছেন। টেবিলের পাশেই লাফালাফি করছেন রাজা ও বুদো। না এটা কোনো মানুষের নাম নয়। নাপিত বাবু তার দুইটি ছাগলের নাম রেখেছেন রাজা বাবু ও বুদো। আয় আয় রাজা বাবু, আয় আয় বুদো- দীর্ঘদেহী দুটি ছাগলকে এভাবে ডাক দিলেই ছুটে আসে মালিক বাবু উদ্দিনের কাছে। ডাক দেওয়ার উদ্দেশ্যও অবশ্য রয়েছে। কারণ ছাগল দুটির চা খাবার সময় হয়েছে। দিনে তিনবেলা চা খাওয়ার সময় এভাবে ডাকা হয় তাদের।
ছাগল মালিক বাবু উদ্দিন বলেন, ১৮ থেকে ২০ মাস যাবত নিজের কর্মস্থল কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের মধ্যে তিনি এই ছাগল দুটি লালন পালন করছেন পরম যত্নে। এর মধ্যে সাদা-কালো রংয়ের রাজা বাবু তার নিজ বাড়ির ছাগল। আর লাল রংয়ের বুদো প্রায় ১৯ মাস আগে কিনেছেন। ছোটবেলা থেকে ছাগল দুইটি নিয়মিত চায়ের পাশাপাশি কলা পাউরুটি বিস্কুট খেয়ে অভ্যস্ত।
তিনি জানান, বাসের শ্রমিকরা দোকানে চা-বিস্কুট খেতে আসলে ছাগল দুইটিকে আদর করে চা খেতে দিতেন। এভাবেই এক সময় চায়ের প্রতি অভ্যস্ত হয়ে যায়। এখন রীতিমতো তিনবেলা চা না খেলে উচ্ছৃঙ্খলতা করতে থাকে। ছাগল দুটির এমন আচরণে মুগ্ধ ও বিস্মিত স্থানীয়রাও। যে যেভাবে পারেন ছাগলকে আদর আপ্যায়ন করেন তারা।
টার্মিনালের মধ্যে চায়ের দোকানি কবির হোসেন বলেন, বাবুর ছাগল দিনে তিন-চার কাপ চা খায়। ছাগলে চা খায় এটা অবাস্তব। তবে দেখে ভালো লাগে। আমি নিজেও চা বানিয়ে খাওয়াই।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আজগর আলী বলেন, ছাগলে চা খায় আমি জীবনে কোনো দিন দেখি নাই। আমি টার্মিনালে বহুদিন যাবত ব্যবসা করি। বাবু অনেক গরিব মানুষ। আগে সে গরু পুষতেন, এখন এই দুইটা ছাগল পুষছেন। ছাগল দুইটি সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলাফেরা করে। অনেকটা মানুষের মতোই আচরণ করে। ছাগলে চা খাই দেখে অবাক লাগে। সবাই এসে আদর করে চা-বিস্কুট খাওয়ায়।
কুষ্টিয়া বাস টার্মিনালের পাশের জিকের ক্যানেলের জায়গায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন বাবু উদ্দিন। তাদের সংসারে তিন মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। নাপিতের কাজের পাশাপাশি বাড়িতে গরু-ছাগল পালন করে সংসার চালান বাবু। গত বছর গরু থাকলেও এবার কোনো গরু নেই। লালন-পালন করছেন চারটি ছাগল। এর মধ্যে দুইটি ছাগল রাজা বাবু ও বুদো। কুরবানির ঈদে ছাগল দুইটি বিক্রি করতে চাইলেও সঠিক দাম না পাওয়ায় বিক্রি করেননি।
লাল রংয়ের বুদোর ওজন প্রায় ৬০ কেজি। বুদোর দাম হাঁকানো হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা; কিন্তু কেউই বুদোর দাম ৫০ হাজারের ওপর বলেননি। অন্যদিকে কালো রংয়ের রাজা বাবুর ওজন প্রায় ৪০ কেজি। রাজার দাম ৩০ হাজার টাকা উঠলেও বিক্রি করেননি মালিক বাবু।