মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
জাতীয় নির্বাচনের ১০ মাস বাকি থাকলেও বসে নেই মুন্সীগঞ্জের তিনটি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলগুলো। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন জেলার সর্বত্র। ব্যানার, ফেস্টুন আর রংবেরঙের পোস্টারে ছেয়ে গেছে জেলার ছয়টি উপজেলা।
দলগুলো বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সম্মেলনের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছে।
এ ছাড়া তরুণ প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণাও চোখে পড়ার মতো। জেলায় চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে সর্বত্র এখন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনার ঝড়।
এক সময়ের বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মুন্সীগঞ্জ জেলার তিনটি আসন ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ও এর জোটের দখলে আছে। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোটের সদস্য বিকল্প ধারাকে ছেড়ে দেওয়া হয় মুন্সীগঞ্জ-১ আসনটি।
জেলার অন্য দুটি আসন মুন্সীগঞ্জ-২ ও ৩-এ আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলায় গত ১৪ বছরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে বিরোধপূর্ণ আচরণ না থাকলেও সদর আসনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য অব্যাহত থাকায় উত্তেজনা আছে। এ দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকলে জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট মহল।
অপরদিকে বিরোধী দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হলেও দল দুটির মধ্যে বিরোধ আছে। তারাও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে বিরোধ প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। জেলার তিনটি আসনেই চরমোনাই, ইসলামী আন্দোলন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে বলে মাঠে তাদের কার্যক্রম জোরদার করেছে।
মুন্সীগঞ্জ–১ (শ্রীনগর–সিরাজাদিখান) : এ আসন থেকে গত নির্বাচনে বিকল্প ধারা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহী বি চৌধুরী। তিনি এবারও জোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এ ছাড়া এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, সিরাজদিখান উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. মহিউদ্দিন আহম্মেদ, আওয়ামী লীগ নেতা নূরে আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ উপকমিটির সদস্য গোলাম সারোয়ার কবির, আওয়ামী লীগ নেতা মাকমুদুর রহমান ডাবলু প্রমুখ।
আসনটিতে বিএনপিরও একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শিল্পপতি শেখ মো. আবদুল্লাহ, ঢাকা বিভাগীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু ও শ্রীনগর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মমিন আলী প্রমুখ। অপরদিকে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম।
মুন্সীগঞ্জ–২ (লৌহজং–টঙ্গিবাড়ি) : এ আসনে আওয়ামী লীগদলীয় বর্তমান সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। তিনি এ আসন থেকে চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আগামীতেও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যরা হলেন- দলীয় নেতা আফসার উদ্দিন ভূঁইয়া, ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন, ডা. আবু ইউসুফ ফকির ও ফরহাদ হোসেন।
আসনটি ফিরে পেতে উঠেপড়ে লেগেছে বিএনপিও। দলটির রয়েছে একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী। তারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও সাবেক জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর রিপন মল্লিক। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন- সাবেক সংসদ সদস্য মো. জামাল হোসেন ও মো. নোমান মিয়া।
মুন্সীগঞ্জ–৩ (সদর ও গজারিয়া) : এ আসনে ক্ষমতাসীন দলের শক্তিধর একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর মো. মহিউদ্দিনের বড় ছেলে বর্তমান পৌর মেয়র হাজী মো. ফয়সাল বিপ্লব এবং সাবেক সংসদ সদস্য যমুনা ব্যাংকের পরিচালক আলহাজ মো. নূর মোহাম্মদ। এ ছাড়া সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এবার প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচন করতে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা গেছে। মুন্সীগঞ্জ পৌর মেয়রপত্নী চৌধুরী ফারিয়া আফরিন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রহমান জীবন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সালমা হাই টুনি দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ আসনে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক উপমন্ত্রী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবদুল হাই ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান। এখানে পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টিও। এ দলের রয়েছে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী।