কলকাতা প্রতিনিধি
ভারতের ৩০ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ২৯ জনই (শতকরা ৯৭ ভাগ) কোটিপতি। তাদের গড় সম্পত্তির পরিমাণ ৩৩.৯৬ কোটি রুপি। ব্যতিক্রম শুধু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী, সাতবারের সংসদ সদস্য। কেন্দ্রের একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলানো পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা ব্যানার্জীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ১৫ লাখ রুপির কিছু বেশি। সে অর্থে মমতাই হলেন দেশের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র মুখ্যমন্ত্রী।
নির্বাচনী হলফনামা থেকে এই তথ্য তুলে ধরেছে অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (ADR) নামে একটি সংস্থা। বুধবার এই তথ্য সামনে এসেছে।
বিত্তবান মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছেন অন্ধপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডি, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৫১০ কোটি রুপি। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী প্রেমা খান্ডু, যার সম্পত্তির পরিমাণ ১৬৩ কোটি রুপির বেশি। তৃতীয় স্থানে আছেন উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, যার সম্পত্তির পরিমাণ ৬৩.৮৭ কোটি রুপি। নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিও’র এর সম্পত্তির পরিমাণ ৪৬ কোটি এবং পদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী এন. রঙ্গস্বামীর ৩৮ কোটি রুপির সম্পত্তি আছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার সম্পত্তির পরিমাণ যথাক্রমে ১৭ ও ১৪ কোটি রুপি।
ভারতের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীরা নির্বাচনী হলফনামায় যে সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন সেই অনুযায়ী এই তথ্য সামনে এনেছে এডিআর। সেখানে ২৮টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং দিল্লি ও পদুচেরির- এই দুই কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীরা রয়েছেন।
এডিআর’এর তথ্য অনুযায়ী, যে মুখ্যমন্ত্রীদের সম্পত্তির পরিমাণ খুবই কম, সেই তালিকায় শীর্ষে নাম রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির। এই তালিকায় দ্বিতীয় কেরালের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি রুপির কিছু বেশি।
হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাত্তারের সম্পত্তির পরিমাণও ১ কোটি রুপির কিছু বেশি।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার- উভয়েরই সম্পত্তির পরিমাণ ৩ কোটি রুপি।
মমতা ব্যানার্জির সরল সাধারণ জীবন যাপন সবসময়ই চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে। দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধি হিসেবে থাকলেও তিনি কোনো বেতন নেননি। সাংসদ হিসেবেও পেনশন নেন না। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেতন নেন না মমতা। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই একাধিকবার এ কথা জানিয়েছেন। তার রোজগারের উৎস কেবলমাত্র তার লেখা বই এবং আঁকা ছবি। তার পরনের সাদামাটা শাড়ি থেকে চপ্পল- কার্যত এই পোশাকই বেঞ্চমার্ক হয়ে উঠেছে ভারতের রাজ্য রাজনীতিতে। যদিও বিরোধীরা তাকে নিশানা করতে ছাড়েনি। দুর্নীতির প্রসঙ্গ উঠলেই একযোগে তাকে নিশানা করেছে বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিআইএম’এর মতো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। দুর্নীতির দায়ে তার দলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী বর্তমানে কারাগারে অবস্থান করছেন। যদিও মমতার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কোনো দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারেনি বিরোধীরা।
এডিআর’এর তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ১৩ জনের (শতকরা ৪৩ ভাগ) বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণ, অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শনের মতো গুরুতর অপরাধের মামলা রয়েছে।