সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চায়ন হলো দেশ নাটক প্রযোজিত নাটক “পারাপার “।
এটি দলের ২৪ তম প্রযোজনার নাটক।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় নাটকটি।
মাসুম রেজা রচিত এই নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন ফাহিম মালেক ইভান।
ভাবোখালী গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো জীবনকে খুব সহজ করে দেখে। সরল মনে জীবনকে রঙিন করে দেখে সবকিছু। ঘুড়ির খেলা, পালাগান, ঐতিহ্যবাহী সব আয়োজনে আনন্দে অতিবাহিত হয় দিন। গ্রামের মহাজন ড্যাডম মালিথার বাড়িতে প্রতিবছর আয়োজিত হয় পালাগান। এবারের আয়োজনে পালা করবে কলকাতা থেকে আসা ড্যাডম মালিথার পুত্র ডালিম মালিথার বন্ধু চিনু গায়েন। পালাগানে সবাইকে মুগ্ধ করে ভাবোখালী গ্রামের সকলের মন জয় করে নেয় চিনু। সে মুগ্ধতার ঘোর লাগে জোসনার মনেও। চিনুর অপূর্ব বাকচাতুর্য আর গুনে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে চিনু ভালোবাসায়। অন্যদিকে, চিনুর গ্রাম ছোট ঝলমলিয়ার বাড়িতে চিনুরই অপেক্ষায় থাকে মাঞ্জেলা, চিনুর সঙ্গে বিয়ে হবে বলে প্রতীক্ষায় কাটে যার ৪ বছর। ভালোবাসার মানুষের প্রতিক্ষার প্রহর যখন শেষ হয়না তখন মাঝে মাঝেই গ্রামে ফেরী করতে আসা চুড়িবুড়ির কাছে তার গোপন কথার পশরা সাজায়। চুড়িবুড়িও তাকে সান্ত্বনা দেয়, সেই সঙ্গে পরামর্শ দেয় চিনুকে ভুলে যাওয়ার, প্রতিশ্রুতি দেয় কলকাতায় নিয়ে চাকরি দেয়ার। অপরদিকে ভাবোখালী গ্রামের সবার ইচ্ছায় চিনুর সাথে বিয়ে হয় জোসনার এবং তারই সঙ্গে কলকাতায় পাড়ি দেয়ার উদ্দেশ্যে এসে পৌঁছায় বেনাপোলের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। অবরোধে সীমান্ত বন্ধ থাকার কারণে আশ্রয় নেয় এলাকার প্রভাবশালী সংস্কৃতি অনুরাগী, যাত্রাদলের পৃষ্ঠপোষক রশিদ কোম্পানীর হোটেলে। সেখানে এসে চিনুর নতুন পরিচয় উন্মোচিত হয়। প্রকাশিত হয় এক অজানা তথ্য। হঠাৎ করেই চিনুর মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় মাঞ্জেলা। সেও বুড়ির সঙ্গে কলকাতায় যাবার প্রত্যাশায় এখানে এসে হাজির। জীবনের কঠিন পর্যায়ে এসে প্রকাশিত হয় এক চরম সত্য যা মাঞ্জেলার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়। চিনু আসলে জোসনাকে বিয়ের প্রলোভনে কলকাতায় পাচারের উদ্দেশ্যেই নিয়ে যায়। অন্যদিকে একই পেশার চুড়িবুড়িও মাঞ্জেলাকে একই কারণে কলকাতায় পাড়ি দেয়ার পরিকল্পনা করে। জোসনাকে নিয়ে চিনুর পেশাগত দিক আর মাঞ্জেলার প্রতি তার প্রেম চিনুকে এক গভীর সঙ্কটে ফেলে দেয়। মানব জীবনের চরিত্রের এই বৈপরীত্য প্রতিটি মানুষকে এক কঠিন পথে ধাবিত করে। এমনই গল্প নিয়ে বিন্যাস্ত হয়েছে নাটকটির কাহিনি।
সুরের ব্যঞ্জনায় দর্শকদের বিমোহিত করতে নাটকে গীত আর নৃত্যের অপূর্ব মেলবন্ধন সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন- কামাল আহমেদ, অসীম কুমার নট্ট, কাজী রাজু, গোলাম মাহমুদ, আশরাফুল আশীষ, মাঈন হাসান, আরিফ হক, কাজী লায়লা বিলকিস, সোমা ফেরদৌসী, ইসমত জেরিন, তানহা, লিমন, শাহেদ, সজীব, সবুজ, বাদশা, নাঈম, নাইমুর, নাভিদ, শামীম প্রমুখ।
পোষাক পরিকল্পনায় ছিলেন-সাজিয়া আফরিন, মঞ্চ পরিকল্পনায়- কাজী কোয়েল, আলোক পরিকল্পনায়- গোলাম ফারুক টিটু, অসীম নট্ট, লরেন্স গমেজ, ইমামুর রশীদ, ফাহিম মালেক ইভান। কোরিওগ্রাফি করেছেন ফেরদৌস হাসান।
অন্যদিকে, একই সময়ে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চায়ন হয় নাট্যকেন্দ্র প্রযোজিত নাটক ” তীর্থযাত্রা “।