সম্পাদকীয়
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি ও ব্যয় কমাতে আগামী বছর থেকে দেশের সবকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘একক’ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নতুন এ নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ‘ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ)’ নামে পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। সভায় একক ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটি কাঠামো, জাতীয় পর্যায়ে একটি নীতিমালা তৈরি ও পরীক্ষার মাধ্যমে একটি স্কোর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। নতুন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করলে এক মাসের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। গত ৩ এপ্রিল আগারগাঁওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) অনুষ্ঠিত হয় এ সভা। আমরা মনে করি, এ ব্যবস্থা কার্যকর করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকাংশে দূর করা সম্ভব হবে।
দেশে বর্তমানে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আলাদাভাবে ভর্তি করা হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হয়। তবে ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে, তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট, কুয়েট ও রুয়েট) আরেকটি গুচ্ছে এবং কৃষি ও কৃষিশিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় অন্য একটি গুচ্ছুভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, আন্তরিকতার অভাব, ‘ইচ্ছাকৃত সংকট’ তৈরি করে রাখাসহ কয়েকটি কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এতদিন একটি সমন্বিত ও সুস্থির ভর্তিব্যবস্থা চালু করা যাচ্ছিল না। ফলে ভর্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সইতে হয়েছে সীমাহীন ভোগান্তি। দীর্ঘ কয়েক বছরের চেষ্টায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দেশের ৩০টির বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ায় বড় অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু একই গুচ্ছে থাকা ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে জটিলতা ছিল। এ কারণে ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কাজ শেষ করতে দীর্ঘ সময় লাগল। এর ফলে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতিও শিকার হতো। এরকম একটি পরিস্থিতিতে এখন আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ হলো।
একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা, স্বাতন্ত্র্য, স্বায়ত্তশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এ অজুহাতে এতদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ প্রক্রিয়ার বাইরে ছিল। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানাই। আমরা মনে করি, এ ব্যবস্থার মাধ্যমে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা নেই। তবে এ ব্যবস্থা কীভাবে হবে, কী করে হবে, কী পদ্ধতিতে হবে, তা ঠিক করার বিষয় রয়েছে। এটি নতুন করে উদ্ভাবনের বিষয় নয়, এটি পৃথিবীতে ভালোভাবেই চলছে। আমাদের প্রত্যাশা, আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি উপযোগী ও ব্যয় সাশ্রয়ী পদ্ধতি বেছে নেওয়া হবে। তবেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত সুফল।