মোহাম্মদ সেলিম মিয়া
নজীরবিহীন তথ্য। বিশ্বের আর কোনো দেশে এমনটি ঘটেছে কিনা সে ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া গেল না। গত সাড়ে ১৪ বছরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় লাখ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে আসামী প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মী। বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের নেতাদের বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়েছে। ভয়াবহ তথ্য হলো এমনো নেতা রয়েছেন তার বিরুদ্ধে এ সময়ে মামলা হয়েছে ৪৫১টি। এছাড়াও কারো নামে ৩২৪টি, কারো নামে ৩০০টি, কারো নামে ২৭৭টি, কারো নামে ২৫৪টি, কারো নামে ১৮০টি কারো নামে ১৩৫টি, কারো নামে ১৩৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এমনো নেতা রয়েছেন সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে সকালে আদালতে হাজির হয়ে দিনভর কয়েকটি মামলায় হাজিরা দেন। দলটির অসংখ্য নেতা এখনো কারাগারে রয়েছেন। কোনো কোনো নেতাকে এই সাড়ে ১৪ বছরে ৮ থেকে ১০ বার কারাভোগ করতে হয়।
মাঠের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপি কার্যত এখন মামলার পাহাড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিশ্বের ভয়াবহ নিষ্ঠুর এবং স্বৈরশাসকদের দেশেও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এতো বেশি মামলার ঘটনা ঘটেনি।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, গণতন্ত্রের ছবক নিয়ে সরকার ক্ষমতায় এসে কর্তৃত্ববাদী শাসন চালু করেছে। এ ধরণের সরকার রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলা দেয় এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যাতে কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তি, দল কোন ধরণের কথা বলতে না পারে, আওয়াজ তুলতে না পারে। এজন্য মামলা দিয়ে একটা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। সরকার যখন কর্তৃত্ববাদী হয় তখন মিথ্যা মামলা দেয়ার জন্য পুলিশ-প্রশাসন সবগুলোকেই তারা ব্যবহার করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকার টিকে থাকার জন্য যত অপকর্ম আছে তার সবগুলো প্রয়োগ করেছে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দিয়ে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে এভাবে মামলা দেয়া হয়েছে। যদিও এর ৯৯ ভাগ মিথ্যা মামলা। এই মামলা দিয়ে গণবিচ্ছিন্ন সরকার প্রমাণ করেছে এরা ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী। একারণেই যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন এসবের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। মানবাধিকার ও জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্টিত করতে কাজ করছে।
তিন দফায় সরকার গঠন ও দুই দফায় জাতীয় সংসদে বিরোধী দল ছিল বিএনপি। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকলেও এখনো রাজপথের প্রধান বিরোধী দল এবং অন্যতম জনপ্রিয় এই দলটি। চলমান সরকার বিরোধী এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনে সভা-সমাবেশে বিপুল সংখ্যক মানুষকে সম্পৃক্ত করে সাড়া ফেলেছে। অথচ দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলায় গড়ে উঠেছে মামলার পাহাড়। বিএনপির অভিযোগ দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন-ওয়ার্ডের সাধারণ কর্মী পর্যন্ত এমন কেউ নেই যাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের সময়ে কোন মামলা দেয়া হয়নি। ২০০৯ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় লাখ মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামী করা হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীকে। যার ৯৯ ভাগই মিথ্যা মামলা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, হয়রানি করার জন্য করা হয়েছে। আবার মামলার অনেকগুলোর আসামী অজ্ঞাত। মানে চাইলে যে কাউকেই সেসব মামলায় গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। এভাবে মামলার পর মামলা দিয়ে সরকার বিএনপিকে শেষ করে দেয়ার চেষ্টা করছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী করে রেখেছিল। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে। আমাদের এমন কোন নেতা নেই যাদের বিরুদ্ধে ৪০-৫০টা মামলা নেই। ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, ৬শ’র মতো মানুষকে গুম করেছে, সহস্রাধিক হত্যা করেছে। গত এক মাসেই ৩৮৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনো কারাগারে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী বন্দী আছে। কেন? কারণ একটাই বিএনপিকে নিঃশেষ করে দেয়া, আন্দোলন দমন করা। কিন্তু তাতে কি তারা আন্দোলন বন্ধ করতে পেরেছে?
তিনি বলেন, আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, এসব মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করবার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এই আন্দোলনকে মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে বন্ধ করা যাবে না। জনগণ জেগে উঠেছে, জনগণের উত্থানের মধ্য দিয়ে এই অবৈধ, ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরে যেতে হবে, পরাজিত হতে হবে।
বিএনপির দফতর সূত্রে জানা যায়, ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৩৬টি। এর মধ্যে ২টি মামলায় তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। যদিও এখন তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে গুলশানে নিজের বাসভবনে রয়েছেন। একইভাবে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৫০টি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একজন সৎ, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও শান্ত থেকে নিজের দলকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি। খোদ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধেও অন্তত ৯৩টি মামলা হয়েছে। যার কোনটি গাড়ী পোড়ানো, কোনটি ককটেল বিস্ফোরণ, নাশকতা, সরকারি কাজে বাধা প্রদান, ময়লার গাড়ি ভাঙচুর/ আগুন ইত্যাদি। তবে ব্যক্তিগত মামলার দিক দিয়ে রেকর্ড গড়েছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক এই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৫১টি। যার সবকটিই মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, যেখানেই মনে হয়েছে সেখানেই নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে আসামী হিসেবে। মামলার দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন- জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার ৩২৪টি, তৃতীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু ৩০০টি, যুবদলের সাবেক নেতা এসএম জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ২৭৭টি, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ২৫৪টি মামলা। একইভাবে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে ১৮০টি মামলা, ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর ১৩৫টি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে ১৩৪টি মামলা।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, যখনই দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালন শুরু হয় তখনই শুরু হয় একের পর এক মামলা দেয়া। বিশেষ করে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেয়া হয়। আর গেলো অক্টোবরে বিএনপি’র ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর নতুন করে মামলা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার। গত ১৯ মে হতে ৩ জুলাই পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত সাম্প্রতিক জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ২২০টি নতুন মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এসব মামলায় ৮৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামী করা হয়েছে ৯ হাজার ৯৬০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন প্রতিদিনই তাদের সকাল শুরু হয় কোর্টের বারান্দায়। তারা জানান, মামলার কারণে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। বাধ্য হয়ে তাদের আদালতে সময় দিতে হচ্ছে। পুলিশের ভয়ে এলাকায় থাকতে পারছেন না। এলাকায় গিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারছেন না। ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসবে মামলা সংক্রান্ত ব্যস্ততা আরও বাড়বে।
বিএনপির দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব ছাড়াও অন্যান্য নেতাদের মধ্যে- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৭টি, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের ৪টি, লে.জে. (অব.) মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩টি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার ১৯টি, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৪৮টি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ৩২টি, ড. আব্দুল মঈন খানের ১টি, নজরুল ইসলাম খানের ৬টি, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ৬টি, ভারতে অবস্থানরত মো. সালাহ উদ্দিন আহম্মেদের ৩৫টি, বেগম সেলিমা রহমানের ৪টি ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে- আমান উল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে ১৩৪টি, মিজানুর রহমান মিনুর ১৮টি, জয়নাল আবেদীন ফারুকের ১২টি, প্রফেসর জয়নাল আবেদনী (ভিপি) ৭টি, মনিরুল হক চৌধুরীর ৩টি, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর ১৪টি, হাবিবুর রহমান হাবিবের ১৫টি।
ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে ৩টি, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের ৭টি, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম ৫টি, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী ১১টি, বরকত উল্লাহ বুলুর ১৩৫টি, মো. শাহজাহান ১৭টি, কারাবন্দী আব্দুস সালাম পিন্টুর ১৯টি, মোসাদ্দেক হোসেন ফালু ৯টি, আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ৪টি, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ১৭টি, শামসুজ্জামান দুদুর ১১টি, এড. আহমদ আযম খানের ৬টি, এড. জয়নুল আবেদীন ১৮টি, এড. নিতাই রায় চৌধুরী ৯টি। বহিষ্কৃত ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা।
স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ৪৯টি, এম কে আনোয়ার ১৯টি, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ ৪১টি ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ২৮টি, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ৪টি ও সাদেক হোসেন খোকা ২৭টি মামলা নিয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এড. রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে মামলা ১৮০টি, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এড. শিমুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ১১৯টি, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের ১৫টি, এড. মজিবুর রহমান সরোয়ার ১৪টি, এড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ২৫৪টি, খায়রুল কবির খোকনের ২১টি, হবিব উন নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৪৫১টি মামলা, হারুন অর রশিদের ১৪টি, ফজলুল হক মিলনের ১৭টি।
সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুস সালাম আজাদের বিরুদ্ধে ৪১টি, মাহবুবের রহমান শামীমের বিরুদ্ধে ৯টি, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর ৪৭টি, বহিষ্কৃত সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ১৯টি, আসাদুল হাবিব দুলুর ১৪টি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের ৩টি, এড. বিলকিস জাহান শিরিনের ১৭টি, শামা ওবায়েদের ৫টি।
বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপনের বিরুদ্ধে ২টি, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর ৪৭টি, আন্তর্জাতিক সম্পাদক এড. মাসুদ আহমেদ তালুকদারের ১১টি, ব্যারিস্টার কায়সার কামালের ৪টি, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালের ১৭টি, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মো. আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ১৫টি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বলের ৩টি, প্রশিক্ষণ সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেনের ৯টি, কৃষি সম্পাদক শামসুজ্জোহা খানের ৭টি, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপুর ৮৭টি, গণশিক্ষা সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়ার ৫টি, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং বিএনপির বন ও পরিবেশ সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের ১৬টি, পল্লী উন্নয়ন সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তীর ৭টি, গ্রাম সরকার সম্পাদক আনিসুজ্জামান খান বাবুর ৫টি, কারাবন্দী প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ৩৮টি, শিশু সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীর ৬টি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আমজাদ হোসেনের ৪টি, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহিন শওকতের ৫টি, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের ১২৬টি।
অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সহ-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শিশিরের ৯টি, এড. সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়ার ১১টি, আবু সাঈদ চাঁদের ১৪টি, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের ২২টি, মেজর হানিফের ৫টি, আকবর আলীর ১০টি, একেএম সেলিম রেজা হাবিবের ৬টি, মাহমুদুল হক রুবেলের ৯টি, এড. খোরশেদ আলমের ৭টি, এড. খন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলুর ৩টি, হাসান উদ্দিন সরকারের ৯টি, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টুর ১৪টি, তারিকুল আলম তেনজিংয়ের ৫টি, আবদুস সাত্তার পাটেয়ারীর ১৩টি, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের ২১টি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের ১৯টি।
অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে- যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুর ৩০০টি, কারাবন্দী সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নার ১৪টি, সাবেক সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীরের ২৭৭টি, সাংগঠনিক সম্পাদক ৩২৪টি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েলের ৯৮টি, বর্তমান সভাপতি এসএম জিলানীর ৪৫টি, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের ১৩৬টি, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসানের ৪টি, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণের ৫৫টি, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের ২৮টি, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের ৪টি, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জারিফ তুহিনের ৩টি, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের ৪৮টি, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের ২৪টি, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের ১৭টি, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক দল-জাসাসের সভাপতি হেলাল খানের ৩টি, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের ১৪টি, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের ৩টি, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের ১০টি, সদস্য সচিব হাজী মজিবুর রহমানের ৩টি, ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হকের ১টি, সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলামের ২টি, মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাবের ১৪টি, সদস্য সচিব আব্দুর রহিমের ১টি মামলা রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি অঙ্গসংগঠনের অন্যান্য নেতাদের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলটির অনেক নেতাকর্মীর এখন সময় কাটে আদালতে হাজিরা দিয়ে আর আগাম জামিন নেয়া নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে।
দলটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলছেন, এই মামলাগুলো করাই হয়েছে বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের ভয় দেখিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য। যখনি কোন কর্মসূচি আসে এবং আমরা পলিটিক্যাল মুভমেন্টে যাওয়ার কথা বলি, তখনি দেখা যায় মামলাগুলো একটা ভিন্ন গতি পায়।
তিনি বলেন, মামলার কারণে নেতা-কর্মীরা চ্যালেঞ্জে পড়লেও মামলার ভয় আর নেতা-কর্মীদের মধ্যে নেই। যেটা তারা (সরকার) আশা করেছিলো যে, আমরা ঘরে ঢুকে যাবো। সেটা কিন্তু হয়নি। বিএনপি’র প্রতিটা কর্মসূচিতেই এখন জনসমূদ্র। সুতরাং মামলার ভয় আমার মনে হয় না যে কর্মীরা আর পায়।
রুমিন ফারহানা বলেন, কর্মীরা নিজেরাই বলে যে ঘরে থাকলেও মামলা খাই, কর্মসূচিতে আসলেও মামলা খাই। তার চেয়ে কর্মসূচিতেই আসি। কারণ এখন ‘ডু অর ডাই’ অবস্থা। এখন আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই এই সরকারকে ফেলতে হবে। এটাই এখন কর্মীদের মূল কথা।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিন ধরেই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যাতে আমাদের কোর্টের বারান্দায় বারান্দায় দৌড়াতে হয়। তবে আমাদের এসব গা সওয়া হয়ে গেছে। সরকার যে উদ্দেশ্যে এটি করেছিল তা বুমেরাং হয়ে গেছে। কারণ সরকার চেয়েছিল বিএনপিকে শেষ করে দিতে, নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দিতে, ভীতির সঞ্চার করতে। কিন্তু গুমের শিকার, মামলার আসামী কোন নেতাকর্মী বা তাদের পরিবার বিএনপি থেকে সরে যায়নি। বরং তারা আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।