নিজস্ব প্রতিবেদক
বিচারক, আইনজীবী ও সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে ১৫ দফা পরামর্শ দিয়েছেন হাই কোর্ট। মো. জালাল উদ্দিন মিয়া ও অন্য বনাম আলহাজ আবদুল আওয়াল ও অন্যান্য মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে এসব পরামর্শ দিয়েছেন হাই কোর্ট। ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। সম্প্রতি ৩১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাই কোর্ট। শুক্রবার রায়ের অনুলিপি বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসেছে।
রায়ে আদালত বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিচারককে দক্ষ করে তৈরি করতে হবে। এরপর একজন বিচারককে বিচারকার্য পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করতে হবে। তবেই অযৌক্তিক, বেআইনি ও হয়রানিমূলক মোকদ্দমা থেকে বিচার বিভাগ যেমন মুক্ত হবে তেমনি মামলা জটও কমে যাবে।
১৫ দফা পরামর্শের মধ্যে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, আইনজীবী, সহকারী আইন কর্মকর্তা এবং বিচার বিভাগের সহায়ক কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য ‘ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি, ভারত’ -এর আদলে সুবিধাজনক ও নিরিবিলি পরিবেশে এক হাজার হেক্টর জায়গার উপর ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া রায়ে বিচারকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স ৬ মাসে উন্নীত করা এবং প্রশিক্ষণকালে তাঁদের মনোজাগতিক বিকাশের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলেছেন হাই কোর্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনে প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের সময় আবশ্যিকভাবে একজন মনোবিজ্ঞানীকে ভাইবা বোর্ডে সদস্য রাখতেও পরামর্শ দিয়েছেন আদালত।
রায়ে দেওয়ানী মামলার আপোষ নিষ্পত্তি এবং জারী মামলার ক্ষেত্রে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারকে আরো সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি তার এখতিয়ার, ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ ও বিচারকের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধি করার পাশাপাশি মামলা অনলাইন ফাইলিং ও বিচারিক আদালতেও অনলাইন কার্যতালিকার মাধ্যমে মামলা ব্যবস্থাপনা করার পরামর্শ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
রায়ে হাই কোর্ট।বলেছেন, উপরোল্লিখিত পরামর্শগুলো দ্রুত কার্যকর করলে বিচার ব্যবস্থার ভয়াবহ মামলা জট থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসা যাবে। আইন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনগণের বিচার পাওয়ার পথ সুগম করবে বলেও আদালত রায়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
রায় ও আদেশের অনুলিপি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, অধস্তন আদালতের সব বিচারক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিসহ দেশের সব আইনজীবী সমিতি এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে প্রেরণ করতে সর্বোচ্চ আদালতের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন হস্তান্তর সংক্রান্ত এক স্মারক বেআইনি, যোগাযোগী এবং বাদীর ওপর বাধ্যকর নয় মর্মে ঘোষণার ডিক্রি চেয়ে ২০০৩ সালের ২৯ মে আদালতে একটি দেওয়ানি মোকদ্দমা দায়ের করা হয়। শুনানি শেষে কুষ্টিয়া সদরের সিনিয়র সহকারী জজ একই বছরের ২২ জুন আর্জি প্রত্যাখ্যান করেন এবং অস্থায়ী ও অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত সরাসরি নামঞ্জুর করেন।
ওই আদেশ ও রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে বাদীপক্ষ আপিল দায়ের করেন। কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত আবেদন শুনানি নিয়ে ২০০৫ সালের ১৬ আগস্ট আপিল মঞ্জুর করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে বিবাদীপক্ষ হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন দায়ের করলে আদালত রুল জারি করেন।
পরে বিনা খরচায় রুলটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে হাই কোর্ট কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের রায় ও ডিক্রি বাতিল করে দেন। একই সঙ্গে কুষ্টিয়া সদরের সিনিয়র সহকারী জজ কর্তৃক প্রদত্ত রায় ও আদেশ বহাল রাখেন।