1. mahadihasaninc@gmail.com : admin :
  2. hossenmuktar26@gmail.com : Muktar hammed : Muktar hammed
বিএনপিতে শওকত ধাঁধা রশ্মি কার হাতে? - dailybanglakhabor24.com
  • December 6, 2024, 1:50 am

বিএনপিতে শওকত ধাঁধা রশ্মি কার হাতে?

  • Update Time : রবিবার, মার্চ ২৬, ২০২৩ | সকাল ৭:৫০
  • 95 Time View

 

মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার

 

বিএনপিতে ছোট গল্পের মতো ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষ’- এর অবস্থা শওকত মাহমুদকে নিয়ে। কেন দল থেকে বহিস্কার, কী অভিযোগ তার বিরুদ্ধে, তারই বা কী জবাব-সবই ধোঁয়াশা। আবার সব ঠিকই আছে, কিছুই হয়নি- এমন একটি অবস্থার লুকোচুরি। গণমাধ্যমের এ তারকা দল থেকে বহিস্কার হওয়ায় কয়েকটি গণমাধ্যমে এ নিয়ে একটু বেশি গরজ। কিন্তু, শওকত মাহমুদ নিজে বিচলিত নন, দলের কারো বিরুদ্ধে কিছু না বলে বরং রিলাক্সে আছেন। গোটা বিষয়টি এক ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ, রহস্যঘেরা।
বড় অঙ্কের টাকা ছাড়া ঢাকার বনানী এলাকায় অভিজাত হোটেলে নৈশভোজ সম্ভব হয়নি। কবি ফরহাদ মজহার বা সাংবাদিক শওকত মাহমুদের সেই সামর্থ নেই বলে জানে বিএনপি। তাহলে কোত্থেকে জোগাড় হলো এত টাকা? কে দিল, কারা দিল- তা বিএনপি নেতাদের কাছে অবশ্যই গুরুতর প্রশ্ন। কর্নেল (অব.) অলি, মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো নেতারাও গেছেন সেখানে। তারা নিজেরা গেছেন, না নেয়া হয়েছে-তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ সব সন্দেহ–অবিশ্বাস এবং শওকত মাহমুদের কিছু পেশাগত সহযাত্রীর ভূমিকা তার ব্যাপারে বিএনপিকে কঠোর সিদ্ধান্তের দিকে নিয়েছে।
শওকত মাহমুদ মূলত পেশাদার গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। মেধা তার সবদিকেই। একদিকে অ্যাকাডেমিক, আরেকদিকে প্রফেশনাল। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের দু’বার সাধারণ সম্পাদক ও দু’বার সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশেরও সভাপতি। সাংবাদিক কমিউনিটিতে তার একটি আলাদা অবস্থান আছে। বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েও আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য ধারার সঙ্গে তার বনিবনা বেশ ভালো। এটি তার জন্য ইতিবাচক, আবার নেতিবাচকও। সবদিকেই কিছু প্রতিপক্ষ তৈরি হয়েছে। তা এর আগে শো’কজ এবং এবার দল থেকে বহিস্কারের পেছনে কাজ করেছে বলে নিশ্চিৎ করেছে বিভিন্ন সূত্র। বহিষ্কারের চিঠি সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জনাব শওকত মাহমুদকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ তবে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কী ধরনের কাজে তিনি লিপ্ত ছিলেন, তা বলা হয়নি। সেখানেও একটি ধাঁধা।
বলা হচ্ছে, শওকত মাহমুদ দলের বিরুদ্ধে ভিন্নমত দিয়েছেন। সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়ায় দল ভাঙতে চাচ্ছেন। কিন্তু, এখন পর্যন্ত তার কোনো ভিন্নমত পাওয়া যায়নি। না দলীয় ফোরামে, না কোথাও বক্তৃতা-বিবৃতিতে। দৃশ্যমান অভিযোগ হিসেবে সামনে এসেছে কট্টর সরকারবিরোধী ও নাজেহালের শিকার ফরহাদ মজহারের সঙ্গে মিলে ১০ বছরের পুরনো সংগঠন ‘জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’ (ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস) সক্রিয় করা। গত ১৬ মার্চ রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে আড়ম্বরপূর্ণ নৈশভোজের মাধ্যমে ফরহাদ মজহার ও শওকত মাহমুদ এ কাজটি করেন। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের একটি অংশ এতে মারাত্মক ব্যথিত। কিন্তু, ব্যাখ্যা নেই। জাতীয় ইনসাফ কমিটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতীয় সরকার গঠন করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও তার অধীনে জাতীয় নির্বাচন চেয়েছে। বিএনপির চাওয়ার সঙ্গে ইনসাফ কমিটির চাওয়ার বাহ্যত তফাৎ নেই। তাহলে গোলমালটা কোন জায়গায়?

গোলমাল বা রহস্য বিএনপি নেতাদের বক্তব্য ও বহিস্কারের চিঠির ভাষায় পরিস্কার নয়। আবার শওকত মাহমুদের কথা-আচরণেও পরিস্কার নয়। এর আগে তাকে শো’কজ করতে করতে কাহিল হয়ে গেছে বিএনপির দপ্তর টিম। তিনি জবাব না দিয়ে আয়েশ বা হেয়ালিপনাতে থাকেন। অথবা জবাব দেন দুতিন লাইনে। এবার বহিস্কারের মাঝে তিনি ছিলেন শো’কজ অবস্থার মধ্যে। তাকে নিয়ে কারা অতিউৎসাহী তাও এখন পর্যন্ত গোলক ধাঁধায় ঘুরছে।
ইনসাফ কমিটির নৈশভোজে উত্থাপিত রাজনৈতিক প্রস্তাব নিয়েই মূল আপত্তি বিএনপির। দলটি এখন সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। তারা নির্বাচনে জয়ী হলে তখন জাতীয় সরকার গঠন করবে। এ ঘোষণা বিএনপি দিয়েছে সমমনা বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে আন্দোলন শুরু করার আগে। কিন্তু নির্বাচনের আগেই জাতীয় সরকার গঠনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে ইনসাফ কায়েম কমিটির নৈশভোজে, সেটাকে বিএনপি তাদের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করছে।
গত বছর শোকজের পর থেকে তাকে বিএনপির কোনো অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি। বিভাগীয় সমাবেশগুলোতেও নিরুসাহিত করা হয়েছে। সরকার তার মতো অর্ধশত মামলার আসামী, ,মধ্যমানের কাউকে দিয়ে কেন বিএনপিতে ভাঙন ধরাতে যাবে?-এ প্রশ্নের জবাব মেলা কঠিন। আবার ইনসাফ কমিটিকে ঘিরে বিএনপি ও কয়েকজন সাবেক জোটসঙ্গীর শওকতমুখী হয়ে পড়াও একটি প্রশ্ন। বড় দল হিসেবে বিএনপির জন্য এটি ভাবনা-উদ্বেগের হওয়াই স্বাভাবিক। এর রশ্মি কার হাতে এখনো অস্পষ্ট। বিএনপি নেতারা দেখিয়ে দিচ্ছেন সাত সমুদ্দুরের ওই প্রান্তে টেমস নদীর ওপাড়ে তারেক রহমানকে। বলছেন, তার নির্দেশিই শওকত মাহমুদকে বহিস্কার করা হয়েছে। আবার কেন্দ্রসহ বিভিন্ন জেলা-বিভাগে বহিস্কৃত বা কোনঠাসা নেতাদের দলে অ্যাকটিভ করতে তারেক রহমানের বিশেষ এজেন্ডাও চলছে। দলটিতে তা এখন সাংঘর্ষিক পর্যায়ে। একদিকে বহিস্কার। আরেকদিকে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার। নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলে সাধারণ ক্ষমার আওতায় সবাইকে তৎপর করার মিশন নেয়া হয়েছে আরো আগেই।
বিএনপির নেতৃত্ব এ ক্ষেত্রে মাথা মাথার কাজ করে ফেলেছে। শওকত মাহমুদের প্রতি তাদের সন্দেহের তীব্রতা বেশি হলে একটু কৌশলী হতে পারতো। গোপনে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারত কেন তাদের দলের একজন মামুলি ও কোনঠাসা সহসভাপতির ওপর ভর করতে হচ্ছে সরকারকে। সাংবাদিক হিসেবে উচ্চ মার্গের হলেও বিএনপির রাজনীতিতে শওকত মাহমুদ কোনো বাঘা নেতা নন। দলটিতে তিনি সরাসরি যুক্ত হন ২০০৯ সালে। এরপর থেকেই হতে থাকেন নানা মামলার আসামী। শুরুতে তাকে করা হয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য। ২০১৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে হন ভাইস চেয়ারম্যান।
এর আগে, ২০১৫ সালে গ্রেফতার হয়ে এক বছরের বেশি সময় কারাভোগ করেন তিনি। অর্ধশত মামলার এ আসামীকে গত বছরের এপ্রিলে ‘দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগে শোকজ করে বিএনপি। ওই সময় পেশাজীবী সমাজের ব্যানারে একটি সমাবেশ থেকে তিনি সরকার পতনের ডাক দিয়েছিলেন। বিএনপির ভাষ্য ছিল, ওই সমাবেশের সঙ্গে তাদের দলের কোনো সম্পর্ক ছিল না। ২০১৯ এবং ২০২০ সালেও ঢাকায় সরকারবিরোধী দুটি বড় জমায়েত হয়েছিল। এর পেছনেও শওকত মাহমুদ ছিলেন বলে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় বিএনপি। ওই সময়ে আরেক ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদকেও কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল। আন্দোলনের একটি বিশেষ সময়ে এসে ফ্রেন্ডলি ফায়ারের মতো শওকত মাহমুদকে বহিস্কারের রহস্য নিয়ে দল ও শরীকদের অন্দরমহলে ঘুর্ণিপাক খাওয়া তথ্য আছড়ে পড়ছে আরো নানা জায়গায়। কারো কারো জন্য এটি কঠিন বার্তা। আবার রহস্যের ফেরও কম নয়।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাংলা পোস্ট || প্রকাশক বাংলাদেশ জ্ঞান সৃজনশীল প্রকাশনা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category