1. mahadihasaninc@gmail.com : admin :
  2. hossenmuktar26@gmail.com : Muktar hammed : Muktar hammed
বদলে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক কূটনীতি - dailybanglakhabor24.com
  • November 6, 2024, 10:21 am

বদলে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক কূটনীতি

  • Update Time : মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৩ | বিকাল ৪:২১
  • 80 Time View

সেলিম খান

দূতিয়ালি শব্দটির সাথে সব বাঙালিই কম-বেশি পরিচিত। যেকোনো ঝগড়া-ফ্যাসাদ বাধলে একজন মধ্যস্থতাকারী বা দূতিয়ালির দরকার। শিশুকালে দুই ঘনিষ্ট বন্ধুর মধ্যে ঝগড়া হয়ে কথাবন্ধ বা প্রায় মুখ দেখাদেখি হয়নি, এমন নজির খুব কম লোকের জীবনেই আছে। আবার তৃতীয় এক বন্ধুর মাধ্যমে তা মিটে গিয়ে দোস্তি আরও গাঢ় হয়েছে।

বঙ্গীয় সমাজে দূতিয়ালির সেরা উদাহরণ হলো ঘটক, যার মাধ্যমে বহু লোক যেমন জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়েছেন তেমনি অনেক বিয়ে ভাঙতে ভাঙতে শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেয়েছে। দুটি অচেনা পরিবারেরর মধ্যে মেলবন্ধনের এই শৈল্পিক দৃষ্টান্ত কিন্তু আমাদের ঘটকেরাই রেখেছেন। তারপরও কেন জানি না সমাজ তাঁদের সেই সম্মান দেওয়ার ব্যাপারে বড় কৃপণ। একসময় কন্যাদায়গ্রস্ত পিতারাই একমাত্র সকাতরে তাকিয়ে থাকতেন তাঁদের দিকে একটু সুখবরের আশায়। যেমন আমরা এখন চাঁদিফাটা রোদ্দুরে (গরমে) চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে।

সমাজের এই দূতিয়ালী রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গিয়ে নাম নিয়েছে কূটনীতি। প্রাচীনকাল থেকেই তা চলে আসছে। সেই ব্রিটিশ ভারতের কথা ভাবুন। দিল্লির মোগল সম্রাট বাদশাহ দ্বিতীয় আকবর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবহারে বিরক্ত, ক্ষুব্ধ। অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার চান ব্রিটিশ সম্রাটের কাছে। কিন্তু কাকে পাঠাবেন? ব্রিটিশ সম্রাট বা উপদেষ্টাদের বোঝাতে ইংরেজি ভাষায় জ্ঞানের পাশাপাশি বিদ্যের দৌড়ও থাকা চাই। শেষমেষ নির্বাচিত হলেন কলকাতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক সময়কার দেওয়ান রামমোহন রায়। তিনি আবার বেশ ডাকাবুকোও। কথা বলতে ভয় পান না। সমীহ করে সবাই। গোল বাধল তাঁর পরিচয় নিয়ে। এ থেকে তাঁকে উদ্ধার করলেন মোগল সম্রাটই। দিলেন ‘রাজা’ উপাধি। ১৮৩১ সালের ১৫ নভেম্বর কলকাতা থেকে ‘দ্য আলবিয়ান’ জাহাজে চেপে প্রায় ২২-২৩ দিন যাত্রা শেষে ৮ ডিসেম্বর লিভারপুল পৌঁছান রাজা রামমোহন। তাঁর কথায়, যুক্তিতে লন্ডনের ব্রিটিশ শাসকেরা অনিয়মের বিষয়টি কিছুটা হলেও মানতে বাধ্য হন। বাদশাহ দ্বিতীয় আকবরের সুযোগ-সুবিধা বাড়ে। কিন্তু হায়, রাজা রামমোহনের আর দেশে ফেরা হয়নি। সেখানেই মারা যান তিনি। ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে এখনো তাঁর সমাধি আছে। অনেকে দেখতেও যান।

কিন্তু বাদশাহ দ্বিতীয় আকবরের আমলে যদি ‘জুম মিটিং’ বা ‘গুগল মিটে’র মতো ব্যবস্থা থাকত তাহলে রাজা রামমোহন হয়তো দেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেতেন। আপসোস রাজ্যের মালিক না হয়েও যিনি রাজা হলেন, তাঁর শেষ ঠাঁই হলো বিদেশ-বিভূঁইয়ে। অথচ ইউক্রেনের ঘটনাটাই দেখুন। রাশিয়া কিছু ঘটাতে চলেছে-এটা অনেক দিন ধরে আমেরিকা ও তার পশ্চিমা (ইউরোপীয়) মিত্ররা বুঝতে পারছিল। সেজন্য রাশিয়ার দুই নিকট প্রতিবেশী জার্মানি ও ফ্রান্সের চ্যান্সেলর ও প্রেসিডেন্ট একাধিকবার আলোচনা করলেন রুশ প্রেসিডেন্টের সাথে। এর অধিকাংশই হলো ভিডিও কনফারেন্সে। ফল যাই হোক না কেন, এ থেকে স্পষ্ট কূটনৈতিক আলাপ বা অন্য কোনো বোঝাপড়ার জন্য সে দেশে গিয়ে সশরীরে হাজির হতে হবে- এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে প্রযুক্তি।

প্রযুক্তির উন্নতিতে সশরীরে কূটনীতির প্রয়োজনীয়তা আগের চেয়ে লোপ পেয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

কার্লটন ইউনিভার্সিটির নরম্যান প্যাটারসন স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সহকারী অধ্যাপক মিশেল ডব্লিউ মানুলাক ও অক্সফোর্ডের ন্যুফিল্ড কলেজের আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক ডানকান স্নিডেল সম্প্রতি এক লেখায় এই প্রশ্ন তুলেছেন। আন্তর্জাতিক সাময়িকী ডিপ্লোম্যাটের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সংখ্যায় ‘হাউ দ্য ইন্টারনেট হ্যাজ চেঞ্জড মাল্টিল্যাটারাল ডিপ্লোমেসি’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তাঁরা লিখেছেন, করোনা পরিস্থিতি প্রশমনের পর সরাসরি বৈঠকের সুযোগ তৈরি হলেও ডিজিটাল প্রযুক্তি আন্তঃসরকার কূটনীতির ক্ষেত্রে এক বিরাট প্রভাব ফেলেছে। একে তাঁরা বলছেন জুম টেকনলজি। গত ৩০ বছরে প্রযুক্তির উন্নয়নে কূটনীতির জগতে এটা এক বড় সংযোজন।

এটা নিয়ে বলতে গিয়ে দুই লেখক ব্রিটেনের দুবারের প্রধানমন্ত্রী লর্ড পালমারস্টোনের প্রসঙ্গ টেনেছেন। ১৮৬০ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম টেলিগ্রাফিক কূটনৈতিক বার্তা পেয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘হা ঈশ্বর, কূটনীতি এবার শেষ’। জুম ডিপ্লোমেসি দেখলে না জানি তিনি কী বলতেন! জি-৭, জি-২০, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন- সবেতেই এই জুম ডিপ্লোমেসির ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানেরা সরাসরি উপস্থিত না হয়েও আন্তঃরাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জতিক কূটনীতির কাজটা সেরে ফেলছেন। কেউ ভিডিও কলে যুক্ত হচ্ছেন, তো কেউ পাঠাচ্ছেন ভিডিও বার্তা। ফলে যাতায়াতের ঝামেলা এড়িয়ে তাঁরা সহজেই পরস্পরের কাছে আসতে পারছেন, আলাপ করতে পারছেন, মতামত দিতে পারছেন।

ফলে সবচেয়ে বড় উপকার হয়েছে মহা ব্যস্ত বিশ্ব নেতাদের সিডিউল মেলানোয়। তেমন কোনো ঝক্কি ছাড়াই তাঁরা জরুরি যেকোনো বিষয় নিয়ে কথা বলছেন নিজেদের মধ্যে। এর সাক্ষাৎ প্রমাণ ইউক্রেন সংকট। দ্বিতীয় যে বিষয়টি সব দেশকে উপকার করবে, তা হলো ব্যয়ের বাহুল্য থেকে মুক্তি। অনেক দেশই হয়তো আগামীতে তাদের দূতাবাসের সংখ্যা কমিয়ে আনবে। কোথাও দূতাবাস বন্ধ না করলেও সেখানকার কর্মী সংখ্যা কমাবে, এটা নিশ্চিত। কারণ প্রযুক্তি তাদের এ সুযোগ করে দিয়েছে। এই সুযোগের কে কতটা যথার্থ ব্যবহার করতে পারবে, সেটাই প্রশ্ন। এখানেই চলে আসবে কূটনৈতিক দক্ষতার বিষয়টি।

ভিসার বিষয়টি চিন্তা করুন। অধিকাংশ দেশ ভিসার আবেদন ডিজিটাল করে ফেলেছে। এমনকি ভিসাও দেওয়া হচ্ছে ই-মেইলে, আপনার পাসপোর্টে কোথাও সিল-ছপ্পর নেই। কোনো দেশে ঢুকেছেন, বা বেরিয়েছেন তারও প্রমাণ আছে, তবে ডিজিটালি।

একই সাথে আসে পাবলিক ডিপ্লোমেসি। জনগণের সাথে যুক্ততা। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক মাধ্যম এমন সুযোগ করে দিয়েছে যে, দেশে-বিদেশে যেখানেই হোক না কেন কোনো দেশ বা এর নেতা ও কর্মকর্তাদের অন্য কোথাও যেতে হচ্ছে না। আর নিজস্ব ওয়েবসাইট তো আছেই। ফলে সেই প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা কূটনীতি একই ধারায় এখনো চলবে, এটা আর জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।

দুই রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের একান্ত আলাপ হয়তো দুই ব্যক্তি বা দেশের সম্পর্ক প্রগাঢ় করতে সাহায্য করে। ব্যক্তিগত স্তরে সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু বৃহত্তর ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব কমে আসছে এবং ভবিষ্যতে আরও কমবে। সময়, খরচ, পরিবেশ বাঁচাতে প্রযুক্তি অন্যসব ক্ষেত্রের মতো কূটনৈতিক আলাপেও সহায় হবে। এখন এটা সবাই বুঝলেই ভালো।

সেলিম খান: নির্বাহী সম্পাদক, ডিজিটাল মিডিয়া, ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশন।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category