সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষ্যে ‘আগস্ট হত্যাকাণ্ড: বর্তমানের দায়’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করেছে জাতীয় জাদুঘর।
শনিবার জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনের এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ।
স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান।
সভাপতিত্ব করেন জাতীয় জাদুঘর পর্ষদ সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে তিনি বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট। বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবারের সদস্য এবং সহযোগীদের হত্যার খবরে হতবাক সারা বিশ্ব। একটি জাতির জন্য এর চাইতে বড় কলংকজনক, অসম্মানজনক আর কিছু হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে এই জাতি যে পাপ করেছে তা’ থেকে এই জাতির কোন দিন মুক্তি নেই। এই পাপ অমোচনীয়। ১৯৭৫ সনে এ দেশে যা হয়েছে তা’ ক্ষমতা দখলের সংকীর্ণ লক্ষ্য অর্জনের চাইতেও অনেক বেশি কিছু ছিল। শুধু একজন রাষ্ট্র প্রধানকে নয়, নারী-শিশুসহ তার পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের পর খুনিরা শুধু রাষ্ট্র ক্ষমতায়ই বসেনি, আইন করে হত্যার বিচার বন্ধ করেছে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বর হত্যাকান্ডের ঘটনার বৈশিষ্ট্য হলো, হত্যাকারর দৃষ্টিতে ‘অপরাধী’র পারিবারিক ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নির্মূল করা। ১৫ই আগস্ট হত্যাকান্ডের সময় এবং ঘটনার আগে ও পরে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ভূমিকা এবং হত্যাকান্ডের সুবিধাভোগীদের (বেনেফিশিয়ারি) দিকে তাকালে দেখা যাবে এই ষড়যন্ত্রের সুতো কতটা বিস্তৃত ছিল। পনেরো আগস্ট হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে ‘কন্সপিরেটর’ ও ‘ইন্সপিরেটর’ এর যৌথ উদ্যোগেই। আগস্ট হত্যাকান্ডের বিচার কোনো বিশেষ আইন নয়, দেশের প্রচলিত আইনেই বিচারটি হয়েছে। কিন্তু বিচার হয়েছে খুনের এবং খুনীদের, হত্যার ও ষড়যন্ত্রের বিচার এখনও বাকী। বর্তমানের আমদের দায়িত্ব হচ্ছে দুটি: এই নেপথ্য কুশীলবদের চিহ্নিত করে তাদের দায় নিরূপন করা। দ্বিতীয়ত: বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক,অসাম্প্রদায়িক,স্বাধীন জাতিরষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং এই রাষ্ট্রটিকে গণতন্ত্র ও ন্যায্যতা ভিত্তিক একটি ধারায় এগিয়ে নিতে রাষ্ট্রব্যবস্থার পুনর্গঠনের প্রয়াসে বঙ্গবন্ধুর দার্শনিক ধারাটি অব্যাহত রাখা। এই দায়িত্ব ইতিহাস অর্পিত। ইতিহাসের সত্য বড়োই নির্মম ও শক্তিশালী। কোনো কারণে সেই সত্যকে হয়তো কিছু সময় চাপা দিয়ে রাখা যায়, কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সেই সত্য কোনো না কোনো সময় উচ্চকণ্ঠেই কথা বলে। এই দায় এড়িয়ে গেলে ভবিষ্যৎ আমাদের ক্ষমা করবে না। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক এবং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ আলী সিকদার।
সবশেষে শোকের গান পরিবেশন করেন শিল্পী ড. অনিমা রায়।