আফসান চৌধুরী
সবাই বলে খেলায় হার-জিৎ আছে। সেটা আমি জানি, তাই বলে হারার পর মন খারাপ হবে না, তেমন মানুষ আমি নই। আমরা ক্রিকেট বোদ্ধা নই, ফ্যান। যতই দেখি খেলা, মনে থাকে দেশ। আইপিএল না বিপিএল না কোনো পিএল না। এটা দেশের খেলা।
ফিয়ারলেস ক্রিকেট না টোটাল ক্রিকেট?
মনকে বুঝিয়েছি যে, সিরিজ তো জিতেছি- তারপরও কষ্টটা বেশ বড়। পোশাকি ভদ্রতা কিসিমের কথা বলে কিছু হবে না। বিশেষ করে আমাদের টিম যখন একটু জিততে শিখেছে বলে মনে হচ্ছিল।
২
দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচ খেলার পর চারদিকে ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছিল। আমরা বড় হয়েছি এতদিন এই ভাবটা ছিল চারদিকে, বিশেষ করে লিটন, হৃদয়, রনি, মাহমুদ হাসান, তাসকিনদের ঘিরে। আর সাকিব তো সম্রাট, সবার থেকে এগিয়ে। একটা আস্থা মনে কাজ করেছিল হারের চোর ঘরে ঢুকবে না। বড় মানসিক প্রশান্তি, অনেকটা ডিমের দাম আর না বাড়ার মতো। কিন্তু তিন নম্বর খেলায় যে ধরা খাইলাম আমরা তার তুলনা কম। ডিম খাইসি না ভাই, মাইন্ড খাইসি।
৩
লিটন ৫, রনি ১৪, সাকিব ৬, হৃদয় ১২, আমাদের বিগ প্লেয়ারদের স্কোর। একমাত্র ব্যতিক্রম শামীম যে করেছে ৫১। এটা থেকে টিম সম্পর্কে কি ধারণা হয়? সাকিব বলেছেন, আমরা এইরকম ভাবে খেলব, এটা করেই বড় টিম হওয়া যাবে। দু’একবার খারাপ হবে কিন্তু এটাই এখন আমাদের স্টাইল। তাসকিন একই কথা বললেন। তবে সাকিব স্বীকার করেছেন যে ব্যাটেরদের কারণেই জয় সম্ভব হয়নি।
৪
এটা ছিল ‘ফিয়ারলেস’ ক্রিকেট বা নির্ভীক ক্রিকেট-এর প্রদর্শনী। মানে ‘কোপা মকবুল কোপা’ কিসিমের ক্রিকেট। আমিও পিটানো ক্রিকেট পছন্দ করি, সবাই করে। কিন্তু পেটানো ক্রিকেট যদি টেকনিক ছাড়া হয় তবে বিজয়ের হার কমে, বিপক্ষ বুঝে যায় যে এরা পেটাবেই, বল যাই হোক অতএব ধরা খাবে সহজে। তাই হলো। তৃতীয় ম্যাচে এসে বাংলাদেশের মারদাঙ্গা ক্রিকেট মার খেয়ে পড়ে রইলো। বিনিময় আয়ারল্যান্ডের প্রথম বিজয় বাংলাদেশের ওপর। ওরা ফিয়ারলেস ছিল না। ছিল না?
৫
ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা যদি দেখেন, তাহলে বুঝবেন এই নির্ভীক ক্রিকেট কাকে বলে। এটা নিয়ে তারা একসময় দারুণ দাপুটে টিম ছিল। গেইল তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। টি-২০ জগৎ একদিন ছিল তাদের হাতের মুঠোয়। কিন্তু টেকনিকের দিক থেকে তারা ছিল দুর্বল। ক্রমে অন্যরা ধরে ফেললো তাদের। আজ তারা দারুণ জয় পায় তবে মাঝে মধ্যে। টি ২০ আইসিসি র্যাংকিং বড় ১০ টিমের মধ্যে ৭, তার নিচে যাদের কথা কেউ বলে না, শ্রীলঙ্কা, আমরা আর জিম্বাবুয়ে। বড় ছয় টিম কোপানো ক্রিকেট খেলে না। কিন্তু জেতে। এটাই বাস্তবতা।
৬
তার মানে মিন মিন করা মার্কা ক্রিকেটের পক্ষে কেউ আছে তা নয়। কিন্তু বোঝা গেল এই নির্ভীক খেলার কৌশলের ওপর টিমের পুরা নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের যা হয়েছিল। প্লেয়ারদের দুর্বলতাগুলো ধরা পড়লে তখন রান থামানো বা আউট করা সোজা। আমাদের কিন্তু এই দোষ আছে, টেকনিকের দিক থেকে দুর্বল। তামিম একবার বলেছিল যে তার ব্যাটিংয়ের ত্রুটি সে পাত্তা দেয়নি, ফলে কয়েকবার এলবিডব্লিও হয়। শেষ কথা টেকনিক থাকলে নির্ভীক ক্রিকেট খেলা যায়। আর সেটা ঠিক না থাকলে ভিতু ক্রিকেট বা নির্ভীক ক্রিকেট কোনোটাই জমবে না।
৭
শামীম ৫১ করলো কি নির্ভীক ক্রিকেট খেলে না ভিতু ক্রিকেট? ওই স্কোরটা না হলে আমরা ১০০’র নিচে বুকিং খেতাম। খেলার যে অবস্থা সেটা বুঝেই সে খেলেছে। তার মানে সময় ও টিমের প্রয়োজন আসল কথা নির্ভীক, ভিতু নয়। যখন যেটা প্রয়োজন। আয়ারল্যান্ড ফিয়ারলেস ক্রিকেট না টোটাল ক্রিকেট?
৮
ফিয়ারলেস বা নির্ভীক ক্রিকেট আমাদের দরকার। টেকনিক্যাল বা কৌশলগত দক্ষতা ভিত্তিক ক্রিকেটও আমাদের দরকার। একটা বাদ দিয়ে অন্যটা নয়। এর প্রমাণ আমাদের পরাজয় নয় কেবল, এটা আইরিশদের ধারাবাহিক হারও। তাই চাই টোটাল ক্রিকেট বা সম্পূর্ণ ক্রিকেট। শরীর,মন ও মেধা খেলবে একসাথে। ক্রিকেট খেলার মধ্যে সবচেয়ে মেন্টাল গেম, তাই শুধু পিটিয়ে খেলে এতটাই যাওয়া যাবে। তার সীমানা আমরা নিজেরাই দেখলাম সেদিন। মাথা,শরীর মন সব চাই।
লেখক: গবেষক ও সাংবাদিক