1. mahadihasaninc@gmail.com : admin :
  2. hossenmuktar26@gmail.com : Muktar hammed : Muktar hammed
পৌণে তিনশ বছরের বাখরখানি - dailybanglakhabor24.com
  • July 7, 2024, 7:54 am

পৌণে তিনশ বছরের বাখরখানি

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, আগস্ট ৩, ২০২৩ | দুপুর ১:৫৪
  • 55 Time View

মোহাম্মদ সেলিম মিয়া

ঢাকার ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ দখল করে আছে বাকরখানি। এটি হচ্ছে ময়দা দিয়ে তৈরি রুটি জাতীয় এক প্রকার খাবার বিশেষ। পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের সকালের নাস্তা হিসাবে বাখরখানি অতি প্রিয় একটি খাবার। ময়দার খামির থেকে রুটি বানিয়ে তা মচমচে বা খাস্তা করে ভেজে তৈরি করা হয় বাকরখানি। ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের বাখরখানি পাওয়া যায় পুরান ঢাকায়। বাখরখানিতে সাধারণত ময়দার সাথে স্বাদবর্ধক আর কিছু দেয়া হয় না। তবে চিনি দেয়া বাখরখানিও একেবারে বিরল নয়। বাখরখানি এতই প্রসিদ্ধ ছিল যে এটি এক সময় উপহার হিসেবেও স্বজন আর প্রতিবেশীদের বাড়িতে পাঠানো হতো। বাখরখানি নামটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঢাকার ইতিহাস। ঢাকার নায়েব নাজিম মীর লুৎফুল্লাহ্ ওরফে দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খাঁর জামাতা ছিলেন মির্জা আগা বাকের। নবাব সিরাজদ্দৌলার অনুরক্ত বাকের ছিলেন বুজর্গ উম্মেদপুর ও সালিমাবাদ পরগনা দুটির জমিদার। আগা সাদিক ছিলেন তার পুত্র।
জনশ্রুতি রয়েছে, আগা বাকের ও তার স্ত্রী খানি বেগমের নামানুসারেই মচমচে এ রুটির নাম রাখা হয় ‘বাখরখানি’, যা থেকে পরে লোকমুখে এর প্রচলিত নাম হয়ে যায় বাখরখানি। নবাব পরিবারের বাবুর্চিরাই এ বাখরখানির আবিষ্কারক। স্যার সলিমুল্লাহ্ থেকে শুরু করে নবাব ও নবাব পরিবারের সদস্যরা ছিলেন বাখরখানির ভক্ত। সকালের নাশতায় গোশত ও বাখরখানি না হলে চলত না তাদের। প্রথমে নবাব পরিবারের প্রিয় খাবার হিসেবে থাকলেও পরে এর বিস্তৃতি ঘটে এলাকাবাসীর মধ্যে। সেই থেকে আজও আছে বাখরখানির চাহিদা।
পুরনো ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় তৈরি হয় বাখরখানি । সেখানে তা শুকারুটি (শুকনো) নামেও পরিচিত। মূলত আফগানিস্তানেই বাখরখানির উৎপত্তিস্থল। আফগানিস্তান ও রাশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় এখনো এর প্রচলন রয়েছে। আর মোগল সাম্রাজ্যের শাসনামলে লালবাগ কেল্লার কাছে ঢাকায় সর্বপ্রথম বাখরখানির দোকান গড়ে উঠে। সেই থেকে বাখরখানির সাথে ঢাকার সম্পর্ক প্রায় আড়াই শত বছরের। লালবাগ কেল্লার কাছে বাখরখানির পথচলা শুরু হয়ে এর বিচরণ এখন পুরাণ ঢাকার নাজিরাবাজার, চানখারপুল, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, আলাউদ্দিন রোড, নাজিমুদ্দিন রোড, সাতরওজা,আগামসিহ লেনসহ বিভিন্ন এলাকায়। বাখরখানি এখনো এসব এলাকার বাসিন্দাদের সকালের নাস্তার প্রধান অনুষঙ্গ। আধুনিকতার এই সময়ে নানা রকমের ফাস্টফুডের ভিড়ে বাখরখানি এখনো দাপটের সাথে টিকে আছে সমহিমায়। পুরান ঢাকার বাখরখানির দোকানগুলোর সামনে বাখরখানি প্রেমিদের ভিড়ে স্পষ্ট হয়ে উঠে বাখরখানির প্রতি ভোজনবিলাসিদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। আড়াইশ বছর ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা বাখরখানির স্বাদ আস্বাদনে রাজধানীর দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিনই পুরাণ ঢাকায় ছুটে আসছেন বাখরখানিপ্রেমিরা। নাজিমুদ্দিন রোডের প্রসিদ্ধ বাখরখানির দোকান নাসু এন্ড ফারুক বাখরখানি দোকান। স্বাদে ও মানে এই দোকানটির বাখরখানি শীর্ষস্থান দখল করে আছে বলে জানালেন এই এলাকার বাসিন্দারা। দোকানের কর্মচারি নজরুল ইসলাম জানান, মিষ্টি বাখরখানি, মিষ্টিছাড়া বাখরখানি, পনিরের বাখরখানি ও ঘিয়ের বাখরখানিসহ প্রায় চার ধরনের বাখরখানি তাদের দোকানে পাওয়া যায়। আর স্বাদ ও মান ভেদে তাদের দোকানে ১৮০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা কেজি প্রতি বাখরখানি পাওয়া যায়৷ একই দোকানের রাহাত ইসলাম জানায় দুই শিফটে তারা ১২ জন শ্রমিক কাজ করে থাকে। প্রতিদিন এই দোকানে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কেজি বাখরখানি বিক্রি হয়ে থাকে। বিক্রি ক ক্রেতা সমাগমে তারা সন্তুষ্ট বলেও জানালেন।
নাসু এন্ড ফারুক বাখরখানি দোকানের সামনে কথা হয় রাজধানীর উত্তরা থেকে আগত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবীরের সাথে। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, পুরাণ ঢাকার বাখরখানি তার মায়ের খুবই পছন্দের খাবার। যার কারণে মাসে একবার হলেও তিনি এই দোকান থেকে বাখরখানি কিনে নিয়ে যান। চায়ের সাথে ভিজিয়ে বাখরখানি খুবই মজাদার খাবার উল্লেখ করে শান্তিনগর থেকে আগত মনিরুল ইসলাম জানান, চায়ের সাথে তিনি প্রতিদিনই বাখরখানি খেয়ে থাকেন। তার দেখাদেখি পরিবারের অন্য সদস্যরাও বাখরখানিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানালেন। অন্যদিকে, পুরাতন জেলখানার ঢালের সাতরওজা এলাকার বাখরখানির দোকানের মালিক আতিকুল ইসলাম বলেন, পুর্বপুরুষের ব্যবসা ধরে রাখার জন্য ঐতিহ্যবাহী এই দোকানটি ধরে রেখেছেন। জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়াতে আগের মতো লাভের মুখ দেখতে পারেন না বলে জানালেন এই দোকানী। ৫জন কর্মচারির মজুরি ও আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই বলেও জানান তিনি। বাখরখানির সাথে ঢাকার ঐতিহ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতরওজা এলাকার সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা আঙ্গুরি জাহান জানান, শৈশব থেকেই তাদের নাস্তার পারিবারিক ঐতিহ্য বাখরখানি। এখনো প্রতিদিন বাখরখানি ছাড়া তাদের বাসার নাস্তা অসম্পূর্ণ থেকে যায় বলেও জানালেন অশীতিপর এই বৃদ্ধা। আধুনিকতার যাঁতাকলে নানা রকমের লোভনীয় ফাস্টফুডের ভিড়ে আড়াই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকাইয়া খাবার বাখরখানি এখনো সমাদৃত রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষের কাছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category