1. mahadihasaninc@gmail.com : admin :
  2. hossenmuktar26@gmail.com : Muktar hammed : Muktar hammed
পহেলা বৈশাখ বাঙালির একটি সার্বজনীন উৎসব - dailybanglakhabor24.com
  • July 25, 2024, 10:50 pm

পহেলা বৈশাখ বাঙালির একটি সার্বজনীন উৎসব

  • Update Time : সোমবার, এপ্রিল ১৫, ২০২৪ | রাত ৪:৫০
  • 18 Time View

মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার

বর্তমানকালে অবশ্য অনেক কিছুই বদলে গেছে। তবে ঐতিহ্যের প্রতি টান হৃদয় দিয়ে অনুভব করে বাঙালি। নাগরিক জীবনেও বিপুল আনন্দ যোগ করে পহেলা বৈশাখ। বর্ষবরণের দিন দেশের প্রায় সব শহরেই আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য উৎসব অনুষ্ঠানের। ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর/তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর। আজও নূতনের জয়ধ্বনি করবে গোটা দেশ।
ষাটের দশকে পাকিস্তানিদের বিরোধীতার মুখে ঢাকার রমনা বটমূলে শুরু হয় পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন। এর মাধ্যমে বাঙালি আপন পরিচয়ে সামনে আসার সুযোগ পায়। পরবর্তীতে বাঙালির রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশেষ উত্থান ঘটে পহেলা বৈশাখের। নববর্ষের প্রথম দিনটি বর্তমানে বাঙালির জাতিসত্তায়, চেতনায় ও অনুভবের জগতে গভীরভাবে বিরাজ করছে। এ প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের একটি লেখা থেকে কিছু অংশ উল্লেখ করা যেতে পারে।

তিনি লিখেছেন, আমাদের অধুনাতম নববর্ষ এ দেশের গ্রীষ্মকালীন উৎসব ও কৃষি উৎসব উদ্‌যাপনের একটি বিবর্তিত নব সংস্করণ। এর ঐতিহ্য প্রাচীন কিন্তু রূপ নতুন, নতুন সংস্কার, নতুন সংস্কৃতি, নতুন চিন্তাধারা অবারিত ¯ স্রোতে যুক্ত হয়ে সৃষ্টি করেছে এমন এক নতুন আবহ যাকে একটা দার্শনিক পরিমণ্ডল বলে উল্লেখ করতে হয়। এ পরিমণ্ডলে পুরোনো বিলীন জীর্ণ স্তূপ নিশ্চিহ্ন, মিথ্যা বিলুপ্ত ও অসত্য অদৃশ্য। আর নতুন আবির্ভূত নবজীবন জাগরিত সুন্দর সম্মিত ও মঙ্গল সম্ভাবিত কালবৈশাখীই এর প্রতীক। সে নববর্ষের অমোঘ সহচর। নব সৃষ্টির অগ্রদূত, সুন্দরের অপ্রপথিক ও বিজয়কেতন।
__
‘হে নূতন, এসো তুমি/ সম্পূর্ণ গগন পূর্ণ করি/ পুঞ্জ’-পুঞ্জ’ রূপে’ ( ১৪৩১ বঙ্গাব্দ -)
‘এতো এক চিরন্তন সত্য বার বার ফিরে ফিরে আসা, এই বাংলায় যেমন অজস্র সূর্যোদয় পুনর্বার ঘুরে আসে একটি বছর, সেই রক্তিম দিনলিপির অমল চিত্রাবলি ১লা বৈশাখ। সুপ্রভাত, শুভ নববর্ষ…।

বাংলা নববর্ষ বাঙালির জীবনে বিশেষ এক তাৎপর্য বহন করে । গতানুগতিক জীবনধারার মধ্যে নববর্ষ নিয়ে আসে নতুন সুর, নতুন উদ্দীপনা । বিগত বছরের সব দুঃখ – বেদনাকে একরাশ হাঁসি, আনন্দ আর গান দিয়ে ভুলিয়ে যায় নববর্ষ । প্রাচীনকাল থেকেই জাতি – ধর্ম – বর্ণ নির্বিশেষে এটি বাঙালির আনন্দময় উৎসব হিসেবে সুপরিচিত । বাংলা নববর্ষ তাই বাঙালির জাতীয় উৎসব।
তখন থেকেই এটি বাঙালি সংস্কৃতির সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত । বাংলা সন আপামর বাঙালি জাতির একান্ত নিজস্ব অব্দ।

বাঙালি সংস্কৃতি ও বাঙালির অন্যতম একটি প্রাণের উৎসব হচ্ছে বাংলা নববর্ষ । অতীতের গ্লানি মুছে গিয়ে নতুন করে ও নতুত্ব উদ্যম বাঙালি শুরু করে নতুন বছর । পৃথিবীর যেখানে যেখানেই বাঙালি মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তারা সকলেই এক উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করে এই উৎসবটি। বাঙালির ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলে এই শুভ বাংলা নববর্ষ । সকালে পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ, ও শাক খাওয়া হয় । মেয়েরা শাড়ি ও ছেলেরা পাঞ্জাবি পরে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রায়। এসময় খদ্দেরেরা দোকানের নতুন খাতা খোলে যাকে বলা হয় হালখাতা। এদিনটিকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইছ, হাডুডু, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই ইত্যাদি। একে কেন্দ্র করে ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীরা তিনদিনব্যাপী পালন করে একটি উৎসব , যাকে বলা হয় বৈসাবি । মুঘল সম্রাট আকবর ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ ৯৯২ হিজরিতে চালু করেন বাংলা সাল । আর এই সনকে কেন্দ্র করেই বর্তমানে পালন করা হয় বাংলা নববর্ষ । তখনকার বাংলার নবাব এবং জমিদারেরা খাজনা আদায়কে লক্ষ্য করে চালু করেছিলেন , পুণ্যাহ, । তবে বর্তমানে জমিদারি প্রথা চালু না থাকায় এটি লুপ্ত । বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে রমনার বটমূলে বাংলা একাডেমি কর্তৃক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । তাছাড়া পুরো দেশ জুড়েই বাঙালিরা আয়োজন করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যা মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার মনোভাব দূর করে সকলের মধ্যে সৃষ্টি করে ভ্রাতৃত্ব । এ উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হয় বৈশাখি মেলার । গ্রাম, শহর, দুইখানেই কমবেশি আয়োজন করা হয়ে থাকে বৈশাখি মেলার । বিকালের দিকে অত্যন্ত শান্ত ও মনোরম পরিবেশে বৈশাখি মেলায় মুড়ি – মুড়কি, খেলনা, ইত্যাদি বিক্রি করা হয় । সর্বোপরি, বাংলা, নববর্ষের মাধ্যমে বাঙালির জাতিগত পরিচয় ফুটিয়ে তোলা হয় ।

নববর্ষ উদযাপন : বাঙালির প্রাচীনকাল থেকেই নববর্ষ উদযাপন করে আসছে । তখন বছর শুরু হতো অগ্রহায়ণ মাস থেকে । এটি ছিল ফসল কাটার সময় । সরকারি রাজস্ব ও ঋণ আদায়ের এটিই ছিল যথার্থ সময় । পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের প্রচলন হলে বৈশাখ মাস থেকে বর্ষ গণনা শুরু হয় । আর বাঙালিরা পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করে । বাংলাদেশে নববর্ষ উদযাপনে এসেছে নতুন মাত্রা। বর্তমানে আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে নববর্ষ পালন করা হয়।

পহেলা বৈশাখ : বিগত দিনের সমস্ত গ্লানি মুছে দিয়ে, পাওয়া না পাওয়ার সব হিসেব চুকিয়ে প্রতি বছর আসে পহেলা বৈশাখ । বাংলা নববর্ষ । মহা ধুমধামে শুরু হয় বর্ষবরণ । সবাই গেয়ে ওঠে ” রবীন্দ্রনাথের ” এই গান…
এসো হে বৈশাখ এসো, এসো
তাপ নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে ,,
বৎসরের আবর্জনা- দূর হয়ে যাক।

বাংলা নববর্ষের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে পহেলা বৈশাখে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলা । বৈশাখী মেলাই হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সার্বজনীন উৎসব । জাতি -ধর্ম -বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মহামিলন ক্ষেত্র এই মেলা । এ মেলায় আবহমান গ্রাম – বাংলার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একটি পরিচিত ফুটে ওঠে । বাউল, মারফতি, মুর্শিদি, ভাটিয়ালিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগানে মেলায় আকাশ – বাতাস মুখরিত হয় । যাত্রা, নাটক , পুতুল, নাচ, সার্কাস, নাগরদোলা ইত্যাদি মেলায় বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করে ।

মেলায় পাওয়া যায় মাটির হাড়ি, বাসনকোসন, পুতুল, বেত ও বাঁশের তৈরি গৃহস্থালির সামগ্রী, তালপাখা, কুটির শিল্পজাত বিভিন্ন সামগ্রী, শিশু – কিশোরদের খেলনা, মহিলাদের সাজ – সজ্জা ইত্যাদি । এছাড়া চিড়া , মুড়ি, খৈ, বাতাসাসহ নানা রকমের মিষ্টির বৈচিত্র্যময় সমারোহ থাকে বৈশাখী মেলায় । গ্রামের মানুষের বিশ্বাস, পহেলা বৈশাখে ভালো খেলে, নতুন পোশাক পরলে সারাটি বছরই তাদের সুখে কাটবে । তাই গ্রামে বৈশাখে পান্তা খায় না । যাদের সামর্থ্য আছে তারা নতুন পোশাক পরে ।

নববর্ষের প্রভাব : আমাদের জীবনে নববর্ষ উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। নববর্ষের দিন ছুটি থাকে। পারিবারিকভাবে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয় । বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয় -স্বজনকে নিমন্ত্রণ জানানো হয় । সব কিছুতেই আনন্দের ছোঁয়া লাগে ‌। আধুনিক রীতি অনুযায়ী ছোট্ট বড় সবাই নববর্ষের শুভেচ্ছা কার্ড বিনিময় করে । অতীতের লাভ ক্ষতি ভুলে গিয়ে এদিন সবাই ভবিষ্যতের সম্ভাবনার স্বপ্ন বোনে। নববর্ষ আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে চলার প্রেরণা যোগায় । তাই আমাদের জীবনে নববর্ষের প্রভাব গভীর ও ব্যাপক ।

নববর্ষের তাৎপর্য : বাঙালির নববর্ষের উৎসব নির্মল আনন্দের উৎসবধারা। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে এটি আজ আমাদের জাতীয় উৎসব । নববর্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আমরা আমাদের জীবনবাদী ও কল্যাণধর্মী রূপটিই খুঁজে পাই । আমাদের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক চেতনাকে প্রত্যক্ষ করি।
আমাদের নববর্ষ উদযাপন আনন্দের বিস্তার আছে , কিন্তু কখনো তা পরিমিতিবোধকে ছাড়িয়ে যায় না । বাংলা নববর্ষ তাই বাঙালির সারা বছরের আনন্দের পসরা- বাহক।

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি আসে সগৌরবে – নিজেকে চিনিয়ে, সবাইকে জানিয়ে । আমাদের জীবনের নবচেতনার সঞ্চার করে, পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে আসে নববর্ষ । পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলে সে আমাদের জীবনে নতুন হালখাতার প্রর্বতন করে । আমাদের মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত করে,; জাতীয় জীবনে স্বকীয় চেতনা বিকাশে উদ্বুদ্ধ করে । মানুষে মানুষে গড়ে তোলে সম্প্রীতির কোমল বন্ধন। তাই বাংলা নববর্ষ আমাদের জীবনে এত আনন্দ ও গৌরবের ।

আসুন আমরা বিগত বছরের গ্লানি, দু:খ-, বেদনা অসুন্দর ও অশুভকে ভুলে গিয়ে নতুন প্রত্যয়ে, নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে চলি। সুখী, শান্তিময়, আনন্দপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। বাংলা নববর্ষের ১৪৩১ বঙ্গাব্দ এই নতুন বছরটি হোক আমাদের অঙ্গীকার।

লেখক _ : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাংলাপোস্ট, ও লেখক কলামিস্ট

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category