নিজস্ব প্রতিবেদক
অত্যন্ত পরিষ্কার, স্পষ্ট, দৃঢ় উচ্চারণ এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন হবে না হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এ সরকার থাকলে কোন নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তাছাড়া কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
রবিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম শফিউল আলম প্রধানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাগপা।
সংগঠনের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আব্দুস সালাম, এনপিপির অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদত হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য খন্দকার আবিদুর রহমান, আ স ম মেজবাহউদ্দিন, অধ্যক্ষ হুমায়ূন কবির, যুগ্ম সম্পাদক ডা. আওলাদ হোসেন শিল্পী, সাইফুল আলম, যুব জাগপার সভাপতি আমির হোসেন আমু প্রমুখ।
শফিউল আলম প্রধানের স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনো আপোস করেননি মরহুম প্রধান। তিনি সবসময় দেশ ও জাতির জন্য সোচ্চার ছিলেন। তিনি কোনো সাধারণ নেতা ছিলেন না। তিনি সত্যিকার অর্থেই ত্যাগী, দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী নেতা ছিলেন। তার পিতা ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান এসেম্বলির স্পিকার। তিনি নিজেও সারাজীবন পরাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। তার পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। তিনি নীতির প্রশ্নে কোনো আপোস করেননি। তিনি ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতা বা অর্থ লোভে গা ভাসিয়ে দেননি। তার রাজনীতির কোনো স্বার্থ ছিলোনা। তার কাছে দেশ ও দেশের মানুষ ছিলো মূখ্য। আমরা তাকে রাজনীতিতে সম্মান করি। বেগম খালেদা জিয়া তাকে অনেক পছন্দ করতেন। আমরা ওনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা কাজে লাগাতে চেয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের আমরা তাকে বেশি দিন পাইনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একদিকে দেশের মানুষ আর অন্য দিকে ক্ষমতায় জোর করে একটি শাসক শ্রেণী আজ মুখোমুখি। এই সরকার যখন আন্দোলন দেখে, তখন তা অন্য দিকে প্রবাহিত করতে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। যে আওয়ামী লীগ বলেছিল, দেশ হবে সাম্যের, গণতন্ত্রের অথচ সেই আওয়ামী লীগ জোর করে অন্যায় ভাবে, একবার নয়, দু দুবার ভোট না করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। যেখানে জনগণের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেউ ভোট দেয়নি। যেখানে কেন্দ্রে কুত্তা শুয়ে ছিল। সেজন্য প্রয়াত শফিউল আলম প্রধান ২০১৪ সালের নির্বাচনকে বলেছিলেন, এটা একটা কুত্তা মার্কা নির্বাচন। আর ১৮ সালের নির্বাচন তো রাতে হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের সকল ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সব জায়গায় একই অবস্থা। নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান একেবারে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সরকার নির্বাচন দেখাবে, নির্বাচন কমিশন কথা বলবে একটা নির্বাচন হয়েছে কিন্তু নির্বাচনটা তারা তাদের মত করে করবে। অত্যন্ত পরিষ্কার, স্পষ্ট, দৃঢ় উচ্চারণ এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। এ সরকার থাকলে কোন নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তাছাড়া কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে এতো মিডিয়া কেউ কি কিছু লিখতে পারে? না। সাংবাদিকরা সব সময় ভয়ে থাকে। সাগর রুনি, হত্যার বিচার হয়নি এখনও। অনেক সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেক সাংবাদিক দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে জীবনের ভয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের কোন সাংবাদিক নেতারা এ বিষয়ে কোন কথা বলেন না। কারণ চাকরি চলে যাবে। আরো নানা ভয়ে। এটা হবেই। কিন্তু সবাইমিলে যদি রুখে না দাড়ায় , প্রতিবাদ না করে তাহলে দেশ কিন্তু রক্ষা হবে। মনে রাখতে হবে, এ আওয়ামী লীগ সেই আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েম করে মাত্র চারটি পত্রিকা রেখেছিল। আর সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, গায়েবী মামলনার কথা বলতে বলতে আমরা হয়রান হয়ে গেছি, খুলনায় হামলা করে, শেষ পর্যন্ত আমাদের ১৩০০ নেতাকর্মী বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাহলে বোঝেন, এক মামলায় ১৩০০ আসামী হলে তাহলে কত আসামী করা হয়েছে? আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মী বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
ভালো মানুষ কখনো আওয়ামী লীগের থাকতে পারেন না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা কিন্তু আওয়ামী লীগে থাকতে পারেনি। আ স ম আব্দুর রব, ওবায়দুর রহমান, মাহমুদুর রহমান মান্না, আব্দুস সালাম আরো অনেক আওয়ামী লীগ করতেন, কিন্তু কেউ আর আওয়ামী লীগ থাকেননি। কারণ আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতির আখড়া তৈরি করেছিল। মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ‘নিখিল বাংলা লুটপাট সমিতি’। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতিকে খুবলে খুবলে খাচ্ছে। তারা দেশের স্বাধীনতার চেতনা তারা ধ্বংস করেছে।
আমাদেরকে সাম্য সৃষ্টি, গণতন্ত্র পুনরদ্ধারের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ নায়ক তারেক রহমান ফিরে আনতে ও বেগম খালেদা জিয়া কে মুক্ত করতে আমাদের অটল থাকতে হবে।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেওয়া তাদের সব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। তারা হচ্ছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী দল। এখন অনেক খেলা হবে। সবাই সতর্ক থাকবেন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলছে। আমাদের শেষ পর্যায়ে যাওয়ার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করে এই সরকারকে সরিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ দাবি আদায় করে দিবে না। আমাদের তরুণদের জেগে উঠে বিপ্লব করতে হবে। জাতিকে রক্ষা করা ও বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার দায়িত্ব তাদের।।