বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি-১ শক্তিমাত্রার ঝড় হিসেবে ২৬ মে দিবাগত রাত থেকে ২৭ মে সকালের মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে, আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
‘রেমাল আঘাত হানতে পারে ১৮ জেলায়’
শনিবার (২৫ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সংস্থাটির প্রধান আবহাওয়া গবেষক খালিদ হোসেনের সই করা এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিডব্লিউওটি’র ওই বার্তায় বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দীঘা থেকে বাংলাদেশের পটুয়াখালীর মাঝামাঝি যেকোনো জায়গা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে। তবে এর সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট।
এতে বলা হয়েছে, এ ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ শক্তিমাত্রা হতে পারে ক্যাটাগরি-১। তবে ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটারের বেশি এটি গতিবেগ পাবে না আশা করা যায়। তবে আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে এটি তার পূর্ণ শক্তিতে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। যদিও দমকা বা ঝোড়ো বাতাসের বেগ আরও কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় সুন্দরবনের ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই এর ডান পাশের বাগেরহাট, শরণখোলা, বরিশাল, নোয়াখালী এমনকি চট্টগ্রামের অদূরবর্তী দ্বীপগুলোও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এসব এলাকায় ঘণ্টায় ৭০-১১৫ কিলোমিটার গতিবেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। একইসঙ্গে ৬-৮ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনাও রয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ৭ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও উপকূলে ৪ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে এটিকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হলে প্রবল ঘূর্ণিঝড়, গতিবেগ ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হলে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় এবং গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলা হয়।
এদিকে, রেমালে পরিণত হওয়ার আগেই গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের নদ-নদীগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বাড়তে শুরু করেছে। ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে উপকূলের জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধের ওপর আছড়ে পড়ছে পানির স্রোত। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে উপকূলের মানুষ।
শ্যামনগর উপজেলার উপকূলবর্তী গাবুরা, পদ্মপুকুর, আটুলিয়া, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালী, রমজাননগর ও মুন্সিগঞ্জ এলাকায় নদীপাড়ের বসবাসকারীদের কাছ থেকে জানা গেছে, দুপুরের জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে নদীতে দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত পানি বেড়েছে।
উপজেলার আটুলিয়ার জুবায়ের মাহমুদ জানান, উপকূলীয় এলাকায় সকাল থেকেই ঝড়ো বাতাস বইছে। দুপুরের জোয়ারে খোলপেটুয়া নদীতে স্বাভাবিক জোয়ার ছাড়া ২-৩ ফুট পানি বেড়েছে। উত্তাল হতে শুরু করেছে নদী। সঙ্গে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে।
ইতোমধ্যে শ্যামনগর উপকূলের চুনা নদীতে জোয়ারের পানি কয়েক ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় কলবাড়ি জেলেপাড়ায় বসবাসকারী ১৩টি জেলে পরিবারের বসতঘরের আঙিনায় জোয়ারের পানি ওঠার খবর পাওয়া গেছে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিবুল আলম বলেন, শ্যামনগর উপজেলার ১৬৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য বহুতল ভবন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ব্যবহার করা হবে। এছাড়া, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী মজুত আছে। আমরা ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা দেখে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করব। তবে সবার জন্য বলব, কেউ যেন ঝুঁকি নিয়ে অনিরাপদ আশ্রয়ে না থাকেন।