ত্বকের সমস্যা সমাধানের জন্য খেজুর একটি অসাধারণ উপাদান হতে পারে। সম্প্রতি পশ্চিমে অনেক ব্র্যান্ড ফলটির পুষ্টিগুণ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্কিনকেয়ার পণ্য তৈরি করছে। অবশ্য এর বীজের তৈরি তেল অনেক আগে থেকেই ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
পুষ্টিবিদদের মতে, প্রাপ্তবয়স্ক সবার প্রতিদিন অন্তত দুটি করে খেজুর খাওয়া উচিত। শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি, ওজন নিয়ন্ত্রণ, মস্তিষ্কের সুস্থতা, হাড়ের গঠন ঠিক রাখা ছাড়াও ফলটির রয়েছে আরও অনেক গুণ। খেজুরে রয়েছে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, সি, ডি, ফাইবার, প্রোটিন। আছে পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, কপারের মতো খনিজ উপাদান। সঙ্গে রয়েছে তিন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এগুলো হলো ফ্ল্যাভোনয়েডস, ক্যারোটেনয়েডস ও ফেনলিক অ্যাসিড। ফলটি সব ত্বকের জন্যই কার্যকর। তবে শুষ্কতা দূর করতে এর জুড়ি নেই। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা ও আর্দ্রতা বাড়াতে সহায়তা করে।
এই ফল অ্যান্টি-অ্যাজিং উপাদান হিসেবে সম্ভবত সবচেয়ে ভালো। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব টিস্যু রিঅ্যাকশনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুরে থাকা ফাইটোহরমোন বলিরেখা দূর করতে অনেক বেশি কার্যকর। এতে বিদ্যমান ভিটামিন সি ও ডি কোলাজেনের বৃদ্ধি ঘটিয়ে ত্বকের ইলাস্টিসিটি বাড়ায়। এটি ত্বকের বলিরেখা ও দাগছোপের মতো বয়সের চিহ্ন প্রতিরোধে সাহায্য করে। সূর্যের ইউভি রশ্মির কারণে সৃষ্ট ড্যামেজ রিপেয়ার ও হাইপারপিগমেন্টেশন কমিয়ে দেয় ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এর ভিটামিন সি ত্বকের নমনীয়তাও বাড়ায়। আর ভিটামিন এ ব্রণের দাগ ও ব্লাকহেডস দূর করে।
খেজুর ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন বড় রকমের সমস্যাও সারিয়ে তুলতে পারে। ফলটির পাঁচ রকমের ভিটামিন বি এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এর প্রোটিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ব্রণের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। রোজেশিয়া নামে ত্বকে একধরনের রোগের উপসর্গ দূর করে। খেজুরের ভিটামিন বি৫ বা প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে।
খেজুরের বীজ থেকে তৈরি তেলও ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। এটি ত্বক মসৃণ ও নরম করে। এই তেল শক্তিশালী ডিটক্সিফায়ারও। নিমেষেই ত্বকের যেকোনো অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ড্যামেজ সারিয়ে তুলতে পারে। অ্যান্টি-অ্যাজিং ক্রিম, ময়েশ্চারাইজার, এক্সফোলিয়েটর, আই ক্রিম, মাস্ক, সিরাম এমনকি ফেসওয়াশ—সবকিছুতেই এখন ব্যবহার করা হচ্ছে খেজুরের নির্যাস।
দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে খেজুর দিয়ে তৈরি পণ্য বলতে গেলে পাওয়াই যায় না, গেলেও দাম অনেক বেশি। কিন্তু খেজুর পাওয়া যায় বারো মাস। তাই চাইলে ঘরোয়াভাবে ত্বকের যত্নে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
চুলকানি ও ব্রণ নিরাময়ে
অতিরিক্ত শুষ্কতা বা পোকামাকড়ের কামড়ের কারণে ত্বকে চুলকানি হয়ে থাকে। এ বিরক্তিকর সমস্যা সমাধানের জন্য খেজুরের মাস্ক ব্যবহার করা যায়। মাস্ক তৈরিতে পাঁচটি খেজুর পেস্ট করে, সঙ্গে এক টেবিল চামচ কমলা এবং দুই টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর চুলকানি হয় এমন জায়গায় কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখতে হবে। একই মাস্ক ব্রণের জন্যও কার্যকর।
ক্লিনজার
যেহেতু খেজুরের প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে, সেহেতু প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায়। পাঁচটি খেজুরের পেস্টের সঙ্গে এক টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে তৈরি করা পেস্টটি ম্যাসাজ করুন দুই মিনিট। এরপর মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে রাখুন আরও ১০ মিনিট। শেষে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই চলবে।
এক্সফোলিয়েটর
খেজুর স্কিন এক্সফোলিয়েটর হিসেবে দারুণ কাজের। খুব কোমলভাবে ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে চাইলে বেছে নিন ফলটি। পাঁচটি খেজুরের পেস্টের সঙ্গে পাঁচ টেবিল চামচ দুধ, এক টেবিল চামচ সুজি আর দুই টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে। এরপর ১০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ময়েশ্চারাইজিং মাস্ক
ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে খেজুরের জুড়ি মেলা ভার। এ জন্য খেজুর দিয়ে একদম সহজে বানিয়ে ফেলা যায় ময়েশ্চারাইজার মাস্ক। প্রথমে কয়েকটি খেজুর আধা কাপ দুধে ভিজিয়ে নরম করে নিতে হবে। এরপর এ দুটি উপাদান ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করে এর সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে, কয়েক ফোঁটা জলপাই তেল, এক চামচ টক দই, দুই চামচ মধু আর আধা চামচ হলুদের গুঁড়া। মাস্কটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহারে ত্বক হবে মসৃণ, টান টান এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।