বেশি দূরত্বে ভ্রমণের ক্ষেত্রে যাত্রীদের রেয়াত (ছাড়) না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। এর ফলে ট্রেনের ভাড়া কিছুটা বাড়বে। বাড়তি এই ভাড়ার হার আগামী ১ এপ্রিল থেকেই কার্যকর হবে।
এ ছাড়া বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ট্রেনের কোনো কামরা ভাড়া নিতে চাইলে শ্রেণিভেদে বাড়তি মাশুল গুনতে হবে। এটাকে রিজার্ভেশন সার্ভিস চার্জ বলা হচ্ছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমানে রেলে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না। কিন্তু এর বেশি ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে ছাড় রয়েছে। যেমন পরবর্তী ১০১ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভাড়ার ওপর ২০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। ২৫১ থেকে ৪০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করলে ছাড় পাওয়া যায় ২৫ শতাংশ। আর ৪০১ কিলোমিটারের ওপরে ছাড় ৩০ শতাংশ।
রেলের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, রেলের ভাড়া দীর্ঘদিন ধরে বাড়ানো হয়নি। এর মধ্যে জ্বালানিসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে। ফলে রেলের পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে এখন যে ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তা আর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমানে রেলে প্রতি কিলোমিটারে ভিত্তি ভাড়া ৩৯ পয়সা। এর সঙ্গে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) ও অন্যান্য উচ্চ শ্রেণির বিভিন্ন হারে ভাড়া যোগ হয়। সঙ্গে যোগ হয় ভ্যাট। এভাবেই মোট ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। এবার ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে আরও বাড়তি ভাড়া যোগ হবে।
রেলের কর্মকর্তারা প্রাথমিক যে হিসাব করেছেন, তাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত শোভন শ্রেণির ভাড়া বাড়বে ৬০ টাকা। এসি স্নিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া ১২০ টাকার মতো বাড়তে পারে। আর এসি কামরায় ঘুমিয়ে যাওয়ার (বার্থ) ভাড়া বাড়বে ২১৬ টাকার মতো। তবে ঢাকা থেকে নরসিংদী, জয়দেবপুর, ফরিদপুরসহ কম দূরত্বের কোনো ট্রেনেই ভাড়া বাড়বে না।
রেলওয়ে সূত্র বলছে, রাজস্ব ঘাটতির কারণে সরকার বিভিন্ন খাত থেকে আয় বাড়ানোর নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রেলের লোকসানও বছরে দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসে। এ পরিস্থিতিতে ভাড়া না বাড়িয়ে রেয়াত বাতিল করে আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। এতে সংস্থাটি বছরে ৩০০ কোটি টাকা বাড়তি আয় করতে পারবে বলে প্রাক্কলন করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেয়াত বা ছাড় প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের জন্য গত মাসে পাঠানো হয়। ২ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন মেলে। এরপর রেলপথ মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়ন করতে রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়। আগামী ১ এপ্রিল তা থেকে ছাড় প্রত্যাহারের বিষয়টি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, সারা বিশ্বেই বাড়তি ভ্রমণে উৎসাহী করতে ছাড় দেওয়া হয়। রেলে ১৯৯২ সাল থেকেই নির্দিষ্ট রেয়াত দেওয়া হচ্ছে। বেশি দূরত্বের পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু পথে ভাড়া ছাড় দেওয়া হতো। ২০১২ সালে রেলের ভাড়া গড়ে ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়। সে সময় নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক রেয়াত বাতিল করা হয়। ২০১৬ সালে আরেক দফা সাড়ে ৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়। তবে বেশি দূরত্বে ভ্রমণের রেয়াত বহাল থাকে। গত বছরের শেষের দিকে চালু হওয়া একমাত্র ঢাকা-কক্সবাজার পথে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে কোনো ছাড় রাখা হয়নি।
এদিকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পিকনিক, পারিবারিক ভ্রমণ কিংবা অফিসের কাজে এক বা একাধিক কামরা ভাড়া করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে রেলওয়ে তাদের পরিকল্পিত কোচের চেয়ে বাড়তি কোচ সংযোজন করে থাকে। কামরার আসনসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে স্বাভাবিকভাবে যাত্রী পরিবহন করলে যে ভাড়া আসে, তাই গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করে রেলওয়ে। কিন্তু ১ এপ্রিল থেকে এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে শ্রেণিভেদে বাড়তি ভাড়া দিতে হবে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে, স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে শোভন শ্রেণির কামরায় ২০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া দিতে হবে। এসি, প্রথম শ্রেণি বা তদূর্ধ্ব যেকোনো শ্রেণির কামরার জন্য ৩০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে।
এই বাড়তি ভাড়া প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলেন, পরিকল্পনার বাইরে গ্রাহকের চাহিদামতো যে কামরা যোগ করা হয়, তা পুনরায় ট্রেনের সঙ্গে ফিরে আসে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রাহক এক যাত্রার জন্য কামরা ভাড়া করেন। ফলে ফেরার সময় অনেক সময় বাড়তি সংযোজন করা কামরায় পূর্ণ সক্ষমতার যাত্রী পাওয়া যায় না। এতে রেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্যই কামরার ভাড়ার ক্ষেত্রে চার্জ যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।