নিজস্ব প্রতিবেদক
যুক্তরাষ্ট্রে ভুয়া এনজিওকর্মী পরিচয়ে জাল কাগজপত্র দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার এবং এর বিপরীতে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাত জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
এছাড়া পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়ানোর নামে অন্যান্য দেশের জাল এন্ট্রি ও এক্সিট সিল ব্যবহারের দায়ে আরেকটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেন তারা।
ঢাকায় গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের অ্যাসিসটেন্ট রিজেওনাল সিকিউরিটি অফিসার মাইকেল লি মামলা দুটি দায়ের করেন।
আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার উদ্দেশ্যে দালালদের কাছ থেকে ভুয়া নথিপত্র সংগ্রহ করে দূতাবাসকে প্রতারিত করেছে।
পুলিশ বলছে, প্রতারণার মাধ্যমে এর মধ্যে কয়েকজনকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে বলেও তারা জানতে পেরেছেন।
গত ১৫ই মার্চ “মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণার” অভিযোগে গুলশান থানায় প্রথম মামলাটি দায়ের করেন তিনি। সেখানে প্রথমে চারজনকে আসামী দেখানো হয়।
মূলত নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে তারা “কথক একাডেমী” নামে একটি এনজিও’র ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
‘কথক একাডেমী’ নামে বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোন এনজিও নেই।
ওই চারজনের ভিসা প্রক্রিয়াকালে সাক্ষাতকার নেয়ার সময় দূতাবাস কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। পরে তারা মামলা দায়ের করে। ওই চারজনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ভিসা সাক্ষাতকারের সময় ভুয়া নথি পেতে তারা অর্থ দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। সেইসঙ্গে কথক একাডেমীর সাথে তাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলেও জানিয়েছে।
এই চারজনের মধ্যে আমেরিকার ভিসা পেতে একজন ইতোমধ্যে দুই লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন এবং গ্রেফতার আরেকজন বলেছেন ভিসা পেলে তাকে নয় লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে।
পরবর্তীতে মামলাটির তদন্তভার ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) ডিভিশনের ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের কাছে গেলে তারা তদন্ত শুরু করে।
তারা ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত তেসরা এপ্রিল মানব পাচার চক্রের মূল হোতা সন্দেহে আবুল কালাম শেখ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে।
এর পাঁচ দিনের মাথায় তার আরও দুই সহযোগীকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
অভিযুক্ত আবুল কালাম শেখ “কথক একাডেমী” নামক কথিত এনজিওর আড়ালে ২০০৮ সাল থেকে এই প্রতারণার ব্যবসা চালিয়ে আসছিল বলে অভিযোগ পুলিশের।
পুলিশের দাবি, তিনি বিদেশের বিভিন্ন সম্মেলনে পাঠানোর কথা বলে এবং এজন্য মিথ্যা তথ্য ব্যবহার করে আমেরিকা, জার্মান, জাপান, ইতালি, দুবাই, ফ্রান্সসহ আরও বিভিন্ন দেশে মানুষকে পাঠাতেন এজন্য গ্রাহকভেদে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা নিতেন।
যদিও গ্রেফতারকৃত আবুল কালাম শেখের দাবি তার পরিচালিত “কথক একাডেমী” ইউএন ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিলের (ইকোসক) স্পেশাল কনসাল্টেটিভ স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত।
প্রাথমিক তদন্ত এবং গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি জাতিসংঘসহ কবে কোথায় সম্মেলন হচ্ছে সেগুলোর নিয়মিত খোঁজ রাখতেন এবং ওইসব সম্মেলনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ মাত্রই তিনি কথক একাডেমীর বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পরিচয়ে কনফারেন্সে যোগদানের জন্য জাতিসংঘ সদর দফতরের কাছে ইমেইল পাঠাতেন।
তিনি মূলত মিথ্যা তথ্য উপাত্ত দিয়ে জাতিসংঘ সদর দফতরের কাছে সম্মেলন যোগ দেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে অফার লেটার চাইতেন।
অফার লেটার প্রাপ্তির পর কথক একাডেমীর কর্মী পরিচয়ে গ্রাহকদের পাসপোর্টসহ সকল প্রকার কাগজপত্র জমা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে ভিসা আবেদন করতেন।
এনজিওর উপদেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশের একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবের নাম পরিচয় এবং তার স্বাক্ষর জাল করে আমেরিকান দূতাবাসে চিঠি পাঠিয়ে ভিসার জন্য আবেদনের অভিযোগ উঠেছে।
এভাবে ফেইক এনজিও নাম নিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অফার লেটার সংগ্রহ করে যুক্তরাষ্ট্রে মানব পাচার করাই শেখের মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। শেখ ভারত থেকে পড়াশোনা করেছেন এবং তিনি ইংরেজিতে কথা বলা এবং লেখায় বেশ পারদর্শী। এর আগেও তার বিরুদ্ধে দুটি প্রতারণার মামলা রয়েছে।