1. mahadihasaninc@gmail.com : admin :
  2. hossenmuktar26@gmail.com : Muktar hammed : Muktar hammed
চিকিৎসাব্যবস্থা: কষ্ট-তামাশা হজমের নিয়তি - dailybanglakhabor24.com
  • October 3, 2024, 8:36 am

চিকিৎসাব্যবস্থা: কষ্ট-তামাশা হজমের নিয়তি

  • Update Time : সোমবার, জুলাই ১৭, ২০২৩ | দুপুর ২:৩৬
  • 57 Time View

মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিকী তালুকদার

দশ টাকায় টিকিট কেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিকিৎসা নেয়ার নিউজ ভ্যালু অবশ্যই ভিন্ন মাত্রার। আমাদের গণমাধ্যমগুলো বরাবরের মতো এ নিউজ ট্রিটমেন্ট এবারও দিয়েছে। গত ১৫ জুলাই সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার সকালে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে টিকিট কাটেন প্রধানমন্ত্রী। চোখের পরীক্ষা শেষে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি হাসপাতালে উপস্থিত রোগীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের খোঁজখবর নেন, তাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য দোয়া করেন এবং তিনিও তাদের কাছে দোয়া চান।
সংক্ষেপে খবরটি এতোটুকুই। এর সার মাজেজা হচ্ছে, বিদেশমুখীতা কমিয়ে মানুষকে দেশে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী করা। এ চেতনা তৈরির কাজটি প্রধানমন্ত্রী করে আসছেন অনেক দিন থেকেই। ফলাফল কদ্দূর সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। এর ঠিক একদিন আগে, সন্তান হারিয়ে আমাদের পেশারই এক বাবার আর্তনাদ দেখতে হয়েছে। আরটিভি অনলাইনের সিনিয়র সাব এডিটর আবুল হাসান। তার ডেঙ্গু আক্রান্ত সন্তানকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান রাত ৩ টায়। চিকিৎসা শুরু হয় রাত গড়িয়ে সকাল ৭ টায়। পরিণতি যা হবার তাই হয়েছে। বিকাল ৪ টায় মারা গেলো তার ৬ বছরের শিশু সন্তান তাশফিল। বাবার হাউমাউ কান্না। আর বলছিলেন, রাতে জুনিয়র ডাক্তাররা কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছিলেন না। তাকে বলা হলো, সকালে বড় ডাক্তাররা এলে ট্রিটমেন্ট শুরু করবেন। এমনকি হাসপাতাল থেকে অক্সিজেনটুকু দিতে পারছিলেন না কর্তব্যরত চিকিৎসক। যে এম্বুলেন্সে করে বাচ্চাটিকে হাসপাতালে আনা হয়েছে সেই গাড়ি থেকে নিয়ে অক্সিজেন দিতে বলেন। তাই করলেন বাবা। তারপরও শিশুটিকে বাঁচানো গেলো না। বাবার আক্ষেপ, রক্তের প্লাটিনেট কমে যাচ্ছিলো। হাসপাতালে নেওয়ার পরপর ট্রিটমেন্ট শুরু করলে বাচ্চাটিকে হয়তো বাঁচানো যেতো। এই আক্ষেপ নিয়েই হয়তো বাবাকে বাকী জীবন কাটাতে হবে।
চিকিৎসা হালের উপরোক্ত দুই বাস্তবতা। একটির বিশাল কাভারেজ। আরেকটি কেবল সংবাদ বানানো বাবারই কষ্টের ধারাপাত। আমাদের স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির নমুনা। রাত তিনটায় অক্সিজেন না পাওয়া, আইসিইউ না পাওয়া, সিনিয়র ডাক্তার না পাওয়ার নিউজ ভ্যালু খোঁজারই বা সময় কই? সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের দুর্ব্যবহারে ব্যাথিত হন রোগী ও তাদের স্বজনরা। বারবার সাধারন জনগণ দাবী জানিয়ে আসছে, ভিআইপিদের চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালে করানোর। সেই দাবীও উপেক্ষিত হয়ে আসছে। জনগনের এই দাবী বাস্তবায়ন হলে সরকারি হাসপাতালের চিত্র ভিন্ন হতে পারতো। রাজনীতিক ভিআইপিরা দেশপ্রেমের বুলি আওড়ান। দেশে চিকিৎসা নেয়ার ক্যাম্পেইন করেন। মিডিয়া কাভারেজ নেন। চিকিৎসা ঠিকঠাক মতো বিদেশে বা বেসরকারি হাসপাতালে করেন। জনগণের এ তামাশা কবুল করা নিয়তি।
মুখে নানান কথা বললেও বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ, এমপি-মন্ত্রীরা বাংলাদেশের হাসপাতাল, বাংলাদেশের ডাক্তারদের উপর ভরসা রাখেন না। তাদের ভরসা থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর; নইলে কমের পক্ষে ভারত। আকস্মিক অসুস্থ হলে বা বিদেশে যাওয়ার মতো অবস্থায় না থাকলে তারা দেশের ডাক্তার-হাসপাতালে যান। একটু উন্নতি হলেই চলে যান বিদেশে। তার মানে কি? বাংলাদেশে ভালো ডাক্তার-কবিরাজ, হাসপাতাল নেই?
বাংলাদেশে প্রায় সব সেক্টরেই উঁচু মানের ডাক্তার আছেন। সংখ্যায় কম নন। সমস্যাটা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায়। ডাক্তারদের গ্রামে না থাকার অভিযোগ নিয়ে মান্যবররা প্রায়ই কথা বলেন। সবক নিয়ে বা নিজে ফটোসেশন করে পরে জ্বর-সর্দি বা শরীর ও চোখের সাধারণ পরীক্ষার জন্যে চলে যান নানা দেশে। যাদের দায়িত্ব দেশে বিশ্বমানের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, তারা নিজেরা বিদেশ ছুটলে প্রতিষ্ঠান তৈরি করবেন কারা?
সরকারি হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনা প্রায় সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সংগঠনের নেতারা। এবং তারা সরাসরি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। যখন যারা ক্ষমতায় থাকেন, তাদের পক্ষের সংগঠন হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ করেন। মন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতারা তাদের ক্ষমতার উৎস। ডাক্তারদেরও সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম দলীয় রাজনীতি। অন্য পেশাজীবীদের মতো ডাক্তাররাও সরাসরি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন।
ডেঙ্গুর সাম্প্রতিক বিস্তারের বিষয়টি শুধু চিকিৎসা বা চিকিৎসক সম্পৃক্ত নয়। এর আগে-পিছে আরো অনেক কিছুর সংযুক্তি। বছর কয়েক ধরে আমরা ডেঙ্গুর সঙ্গে বেশি পরিচিত। ২০১৮ সালে এসে তা বিভীষিকাময় রূপ দেখায়। ২০১৮ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৬ জন, ২০১৯ সালে ১৭৯ জন, ২০২০ সালে ৭ জন। ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে মারা যান ১০৫ জন, ২০২২ সালে ২৮১ জন। শুধু ডেঙ্গু কেন, সাধারণ মশার যন্ত্রণায় রাজধানীতে টেকা দায়। ডেঙ্গু এখন আর রাজধানীর অসুখ নয়। বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি হিসাবে এরইমধ্যে এডিস মশাবাহিত এই রোগ ছড়িয়ে গেছে ৬১ জেলায়। মানুষ একইসঙ্গে ডেঙ্গুর একাধিক ধরনেও আক্রান্ত হচ্ছেন।
আগে গণমাধ্যমে ডেঙ্গুর খবর আসতো এইভাবে, এক বছরে কত আক্রান্ত হয়েছেন বা ৬ মাসে কত আক্রান্ত হয়েছেন। এখন আসছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার হিসাব। ডেঙ্গু কতটা আগ্রাসী হয়ে উঠেছে কারো বুঝতে বাকি থাকলে তা যার যার বিষয়।
লেখকঃ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাংলা পোস্ট

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category