লেখা:ইবনে ইসহাক
নবুয়তের কাহিনী – ১৩-
তারপর একদিন জিবরাইল (আ.) এলেন, নাজিল করেন সুরা কাহ্ফ (গুহা)। ওখানে তাঁর বিষণতার জন্য তাঁকে কিছু কটু কথা বলা হলো। তাঁকে যুবক, শক্তিমত্ত দিগ্বিজয়ী আর আত্মার সম্পর্কে প্রশ্ন তিনটিরও জবাব দেওয়া হলো।
আমি শুনেছি, জিবরাইল (আ.) এলে পরে রাসুলে করিম (সা.) তাঁকে বলেছিলেন, ‘আপনি আমার কাছে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’ জিবরাইল (আ.) উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমরা কেবল আল্লাহ্র নির্দেশে অবতীর্ণ হই। আমাদের সামনে, পেছনে এবং তাদের মধ্যখানে কী আছে, তার মালিক তিনি। আর আপনার প্রভু কখনোই কিছু বিস্মৃত হন না।’
সেই সুরা তিনি শুরু করেন আল্লাহ্র নিজস্ব প্রশংসা দিয়ে। তাতে হজরত মুহাম্মদের (সা.) নবুয়ত ও প্রেরণ এবং আরবের লোকজনের সে সত্য গ্রহণে বিপত্তির কথা বলা আছে। আল্লাহ্ বললেন, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র, যিনি তাঁর সেবকের কাছে গ্রন্থ নাজিল করলেন। তাঁর সেবক বলতে হজরত মুহাম্মদকে (সা.) বোঝানো হয়েছে।
তিনি ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি আমার কাছ থেকে একজন প্রেরিত পুরুষ।’ এখানে তারা তাঁর নবুয়ত সম্পর্কে যা জানতে চেয়েছিল, তা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে।’ এর মধ্যে তিনি (আল্লাহ্) ক্রূরতা দেননি, সেটাকে সরল করে দিয়েছেন।’ তার অর্থ, সব সমান করে দিয়েছেন, কোথাও কোনো পার্থক্য রাখেননি। ‘তাঁর (আল্লাহ্র) তরফ থেকে এক কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়ার জন্য’ মানে হলো, এই পৃথিবীতেই তাঁর অত্যাসন্ন রায়ের পরিণাম পেতে হবে। ‘এবং পরকালের জন্য যন্ত্রণাময় শাস্তি’ হলো সেই আপনার প্রভুর কাছ থেকেই প্রাপ্য, যিনি আপনাকে রাসুল করে পাঠিয়েছেন। যারা বিশ্বাস করে, সৎ কর্ম করে তাদের জন্য যে চিরস্থায়ী উত্তম পুরস্কারের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে, তা হচ্ছে সেই চিরস্থায়ী আস্তানা। ‘ওখানে তারা আর মৃত্যুবরণ করবে না’—তারা মানে যারা আপনার বার্তাকে সত্য বলে গ্রহণ করেছে অন্যদের বর্জন করা সত্ত্বেও, এবং আপনি যে যে কাজ করতে বলেছেন, তা করছে। ‘এবং তাদের সতর্ক করে দেওয়ার জন্য যারা বলে যে আল্লাহ্ সন্তান গ্রহণ করেছেন’—কোরাইশরা বলত, ‘আমরা আল্লাহ্র মেয়ে দেবদূতদের পূজা করি।’ এখানে তাদের কথা বলা হয়েছে।
‘তাদের কিংবা তাদের পূর্বপুরুষদের এ বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই’—তারা, মানে যারা তুমি তাদের ত্যাগ করেছ আর তাদের ধর্মবোধকে অপমান করেছ বলে ব্যথিত হয়েছে। ‘তাদের মুখ নিঃসৃত বাক্য কী ভয়ানক’—বাক্য মানে যখন তারা বলে দেবদূতরা আল্লাহ্র মেয়ে। ‘তারা মিথ্যা বৈ আর কিছু বলছে না এবং তোমার হাতেই তাদের ধ্বংস সাধন হতে পারে’ হে মুহাম্মদ! ‘তারা এই বাণী বিশ্বাস না করলে তুমি ব্যথা পাবে’—তাদের প্রতি রাসুলে করিম (সা.) যে আশা করেছিলেন, সেই আশা ভেঙে যাওয়ার কারণে উদ্গত ব্যথার কথা বলা হয়েছে এখানে। ‘পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে, আমি তাদের এর শোভা করেছি, মানুষকে এই পরীক্ষা করার জন্য যে, এদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ কে।
’ অর্থাৎ, কারা আমার (আল্লাহ্র) নির্দেশ মেনে চলবে এবং আমাকে মান্য করবে। এবং ‘নিশ্চয়ই আমরা তার ওপর যা কিছু আছে তা উদ্ভিদশূন্য মৃত্তিকায় পরিবর্তন করব’—অর্থ হলো, পৃথিবীতে এবং তার ওপর যা আছে সব ধ্বংস হয়ে যাবে এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং প্রত্যেককে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে, আমি তাদের কাজ অনুযায়ী পুরস্কার দেব। সুতরাং, হতাশ হয়ো না, যা তুমি শুনছ বা তুমি দেখছ, তাতে দুঃখ পেয়ো না।
অনুবাদ: শহীদ আখন্দ
প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)’ বই থেকে।