নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের ইতিহাসের বৃহৎ হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর, পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা’ প্রথম আসরের সমাপনী ও ইসলামিক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি-বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের নগদ অর্থ ও সনদপত্র তুলে দেয়া হয়।
কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে কুরআন তিলাওয়াত করেন বিশ্বজয়ী হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সায়্যিদ মুফতি আফ্ফান মানসুরপুরী। ভারত থেকে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সায়েম সোবহান আনভীর।
সমাপনী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মিশর থেকে আগত আন্তজার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্বারি শায়খ ড. আহমাদ আহমাদ নাইনা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলূম মুইনুল ইসলাম মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস আল্লামা শেখ আহমদ, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী,
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন।
কুরআনের হাফেজ দের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে চূড়ান্ত ধাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ঢাকা উত্তরের মারকাজুল ফয়জুল কুরআন মাদরাসার শিক্ষার্থী হাফেজ নুরুদ্দীন মোহাম্মদ জাকারিয়া। পুরস্কার হিসেবে তার হাতে তুলে দেয়া হয় ১০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় বিজয়ী হয়েছেন ঢাকা উত্তরের মো. শাহরিয়ার নাফিস সালমান। তিনি পেয়েছেন ৭ লাখ টাকা। তৃতীয় হয়েছেন ব্রাহ্মনবাড়িয়ার শামসুল উলূম তাহফিজুল হিফজ কোরআন মাদরাসার মো. মোশাররফ হোসাইন। পুরস্কার হিসেবে তিনি পেয়েছেন ৫ লাখ টাকা। চতুর্থ হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের মারকাজুত তাহফিজ মাদরাসার শিক্ষার্থী মো. নাসরুল্লাহ আনাছ এবং পঞ্চম হয়েছেন একই মাদ্রাসার মোহাম্মদ বশীর আহমদ। পুরস্কার হিসেবে তারা প্রত্যেকে পেয়েছেন দুই লাখ টাকা।
সেরা আটের মধ্যে ষষ্ঠ হয়েছেন ময়মনসিংহের মো. লাবিব আল হাসান, সপ্তম হয়েছেন নেত্রকোনার মো. আবু তালহা আনহার ও অষ্টম হয়েছেন সিলেটের আবদুল্লাহ আল মারুফ। তারা প্রত্যেকে পেয়েছেন ১ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিজয়ীদের বিশেষ সম্মাননা ও সনদপত্র দেওয়া হয়। এই বিজয়ীরা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে পিতা-মাতাসহ পবিত্র ওমরাহ হজ পালনের সুযোগ পাবেন। এছাড়া, প্রতিযোগিতার ৯ম থেকে ৪৫তম স্থান অধিকারীরাও পেয়েছেন আর্থিক সম্মাননা।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটির এ আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। পবিত্র রমজান মাসজুড়ে বেসরকারি টেলিভিশন নিউজটোয়েন্টিফোর চ্যানেলে হাফেজদের এ প্রতিযোগিতা সম্প্রচারিত হয়।
অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেন বিশ্ববরেণ্য ক্বারী বাংলাদেশের শায়খুল কুররা শৈল্পিক তেলাওয়াতের রূপকার শায়খ আহমদ বিন ইউসুফ আযহারী।
গত ১ ফেব্রুয়ারি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মুসল্লি কমিটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই রিয়েলিটি শো আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল। সারা দেশের হাজারো মাদ্রাসা থেকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নিবন্ধন করেছিলেন ১০ হাজারের বেশি হাফেজ। ১১টি জোনে শুরু হয় অডিশন রাউন্ড।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় জোনে প্রাথমিক অডিশনের মধ্য দিয়ে এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ১১ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা, ১২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম, ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী ও রংপুর, ১৮ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর ও খুলনা, ২০ ফেব্রুয়ারি বরিশাল বিভাগীয় জোনে চলে অডিশন রাউন্ড। ২২ ফেব্রুয়ারি দিনভর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা উত্তর জোনের অডিশন। সবশেষে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা দক্ষিণ জোনের অডিশন।
প্রাথমিক অডিশন থেকে ইয়েস কার্ড পান ৪৫ জন হাফেজ। ঢাকার ২ জোন থেকে ৯ জন করে ১৮ জন এবং বাকি ৯টি জোনে ৩ জন করে ২৭ জন হাফেজকে নিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতার থিয়েটার রাউন্ড। থিয়েটার রাউন্ড চলে ৪ থেকে ৮ এপ্রিল। এখান থেকে সেরা ৩০ জন জায়গা করে নেন কোয়ার্টার ফাইনালে। ৯ থেকে ১৩ এপ্রিল কোয়ার্টার ফাইনাল রাউন্ড চলে। তাদের মধ্য থেকে সেরা ২০ জন জায়গা করে নেন সেমিফাইনাল রাউন্ডে। এই পর্বে প্রতিযোগীতার জন্য প্রতিযোগীদের ৪টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। সেমিফাইনাল রাউন্ড শুরু হয় ২০ এপ্রিল। প্রতি গ্রুপ থেকে ২ জন করে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেন ৮ জন হাফেজ।
কোরআনের হাফেজদের নিয়ে বৃহৎ এই রিয়ালিটি শো গত রমজানে প্রতিদিন নিউজ ২৪ টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়। এর মিডিয়া পার্টনার হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম ও ক্যাপিটাল এফএম।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বক্তব্যে বলেন, আমি অনেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি, এতটা শৃঙ্খলা কোথাও দেখিনি। এতেই বোঝা যায় ইসলাম কত সুন্দর, কত শান্ত, কত নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলে।
তিনি বলেন, আমি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে অনুরোধ জানাবো, যতদিন বসুন্ধরা গ্রুপ থাকবে, বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ থাকবে, এই অনুষ্ঠানটা প্রতিবছর যেন আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, পুরস্কারের মাত্রাটা আট জনের জায়গায় অন্তত ১৫ জন হওয়া উচিত। কেননা প্রতি জেলা থেকে এত পরিমান প্রতিযোগীরা আসেন, আমি চাই না তারা বিরাগভাজন হয়ে ফিরুক। এই শিশুরা তাদের আত্মার ভেতরে কুরআনকে ঢুকিয়ে রেখেছেন। এরাই ভবিষ্যতে কুরআনকে রক্ষা করবেন। আমি অনুরোধ করবো যারা হাফেজ, তারা শুধু আরবিতে নয়, বাংলাতেও তারা কুরআনের অর্থ বুঝে পারদর্শী হয়ে উঠবে।
আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, আমার ইচ্ছা, বসুন্ধরা গ্রুপ এবং বাইতুল মুকাররমের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য আমি বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে আহ্বান জানাচ্ছি। যেখানে এই হাফেজরাসহ আ