1. mahadihasaninc@gmail.com : admin :
  2. hossenmuktar26@gmail.com : Muktar hammed : Muktar hammed
এক হালি লেবুর দেশের বাসিন্দা আমি - dailybanglakhabor24.com
  • July 24, 2024, 12:59 pm

এক হালি লেবুর দেশের বাসিন্দা আমি

  • Update Time : শুক্রবার, মে ১২, ২০২৩ | সন্ধ্যা ৬:৫৯
  • 80 Time View

তামিম ইয়াহয়া আহমদ

রাজনীতির জন্ম হয়েছে সংঘবদ্ধ মানব সমাজে। রাজনীতির প্রসারও ঘটেছে সংঘবদ্ধ মানব সমাজে। একারণে রাজনীতির প্রকৃতির সঠিক বিশ্লেষণ সম্পন্ন হতে পারে শুধুমাত্র সমাজবন্ধ সুসংহত মানুষের প্রকৃতির গভীর আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে। সমাজবদ্ধ মানুষের চাহিদা সীমাহীন। কিন্তু চাহিদা পূরণের জন্যে যা প্রয়োজন,ইতিহাস সাক্ষী,সব সময় তা সীমিত। ফলে মানুষের সাধ এবং সাধ্যের সমন্বয় ঘটাবার ছিদ্রপথে জন্মলাভ করে ভিন্নমত। সেই আলোকে আমার এই লেখাটি মুলত সুত্রপাত উদঘাটন করা হয়েছে পাঠকের কাছে তুলে ধরা। আমি সাধারণত ছোট্ট একজন মানুষ। আমার লেখাটি সম্পুর্ন আঞ্চলিক ভাষায়। লেখাটি মধ্যে ভুলক্রটি গুলোকে ক্ষমার দৃষ্টিতে মার্জিত করবেন । তবে লেখাটির ধরণের সাথে যদি কোনো শব্দ বাক্যগুলোর মধ্যে কোনো ব্যক্তি বা বিশেষ গোত্রের আচার-আচরণ মিলে যায় তাহলে সেই বিষয়টি আমি আমার স্বাধীন মতপ্রকাশের বহিঃপ্রকাশ। এতে কারোও ঘায়ে জ্বালা যন্ত্রণাবোধ শুরু হলেও কিছু করার নেই। যাহা কিছু উল্লেখ্য এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ পরিস্থিতি কৌতূহলী।
জানিনা আমাদের আওয়ামী লীগের সাহেবরা জানেন কিনা যে বাস্তবে এ দেশের মানুষের দৈনিক আয় কত। কিন্তু আমার এলাকা গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজারকে উদাহরণ হিসেবে ধরা হলে (সিলেট ৬ আসন) এখনও দিনমজুর ৪০০/৫০০ টাকায় পাওয়া যায়। অগ্রগতির আর উন্নয়নের এই মহা উৎসবে হয়তো আমরা দাওয়াত পাইনি। না পাওয়ারও সম্ভাবনা আছে, কারন আমাদের এলাকার এমপি হলেন সাবেক ভুয়া সফল শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। যার দুর্নীতি নিয়ে যুগান্তর পত্রিকা সিরিজ রিপোর্ট করেছে, যার সময়ে পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্রের উত্তর প্রকাশের মেলা চলতো এবং যিনি আমাদের শিক্ষার মান ধ্বংসের জন্য এককভাবে দায়ী। তাই আওয়ামী লীগরা রাগ করেও আমাদেরকে বাদ দিতে পারে। নতুবা অগ্রগতির আর উন্নয়নের এই মহা উৎসবই ভুয়া। সাধারন মানুষের নিরব হাহাকার আর যারা বিগত দিনে ভালো ছিলেন তাদের লাগাতার সাহায্যের আবদার ইশারা কিন্তু রাগ থেকে ভুয়ার দিকেই করে বেশি।
একটি দেশে যখন লেবুর হালি ২৫০ টাকা তখন আমাদের সাধারন মানুষ আর ডাল ভাত খাওয়ার চিন্তায় চিন্তিত না হয়ে লেবু দিয়েই পেটের ক্ষুধা আর গলা ভিজিয়ে দিন চালাতে বাধ্য। এটাই হলো মহা উন্নয়নের রাজসাক্ষী এবং সত্য বাস্তবতা। সিংগাপুর হওয়ার বদৌলতে ডাল,চাল,তেল খাওয়া এখন আনফ্যাশনেবল। এটাও বলতে পারি আমরা কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছি স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে। কিন্তু এটা ভিন্ন কথা যে টাকার অভাবে ছেঁড়া কাপড় পরাকে ফ্যাশন বলছি এখন। তাই তেলের দাম নাগালের বাইরে গেলে পানি দিয়ে চালিয়ে যাই। পিঁয়াজের দাম বেশি হলে কুমড়া ব্যবহার করি। গোস্ত খেতে পারছিনা,বিদেশে নাকি কাঁঠাল দিয়ে প্রোটিনের অভাব পুরন করা হয়,তা করি। আমরা প্রতিস্থাপন বা বিনিময় সন্ধানে বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছি। গুনিরা বলতেন প্রয়োজনীয়তা নাকি সমস্ত উদ্ভাবনের জননী। আমাদের দেশের জিনিসপত্রের দাম এতো কেন? অজুহাত হিসেবে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ আপাতত সব অসুবিধারই সমাধানে গুনিত হচ্ছে। কিন্তু এই গননা কতটা নিরাপদ? বাস্তবে তেমন না। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। কিন্তু বিপর্যয় আগ থেকেই ছিলো এবং মহা সংকট আকারে ছিল। আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে পরিমাণ অর্থ আহরণ করা হয়েছে,এটি আশ্চর্যজনক যে আমরা এতদিন টিকে আছি। শাক দিয়ে মাছ তো বেশি দিন লুকিয়ে রাখা যায় না। তাই এখন মাছ দেখা যাচ্ছে।
আমাদের দেশের প্রধান সমস্যা হলো দুর্নীতি। যে প্রবনতার কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয় ১০০০০ কোটি থেকে বেড়ে প্রায় ৪০০০০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। যে প্রবনতার কারণে প্রতি কিলো মেট্রোরেলের খরচ কাছাকাছি ভারতে অনুরূপ প্রকল্পের তুলনায় ৩/৪/৫ গুণ বেশি। আর এই প্রকল্পগুলির ভুয়া অতিরিক্ত খরচের হাজার হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থা থেকে বের করে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে যা এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির পেছনের একটি কারণ। উচ্চ মূল্যস্ফীতি কি করে?জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়। লুটেরা শ্রেণী লুটপাট করে চুরির অর্থ বিদেশে পাঠাতে ব্যস্ত, আর সাধারণ জনগণ তাদের লোভের ফল ভোগ করে দিশেহারা। এই হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার বিদেশি ঋণের বোঝা আর হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচারের সিলসিলা টাকার মানও কমায় যার প্রভাব আবারও মূল্যস্ফীতির উপর পড়ে। সামগ্রিকভাবে এটা বলা যায় যে আমরা একটি পাথর এবং একটি শক্ত জায়গার মাঝখানে।
উত্তরণ কি? সহজে বললে তাত্ত্বিকভাবেও কার্যতভাবে দুর্নীতির একমাত্র সমাধান হল জবাবদিহিতা। এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হল কার্যকর গণতন্ত্র। কিন্তু চিরকাল নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অন্বেষণের কারণে উপরের সমাধানগুলি জাতির জন্য বড় মূল্য দিয়েই আসবে। এই মূল্য আমাদের জাতির মেরুদণ্ডের উপর প্রভাব ফেলবে। একটি প্রজন্ম পুষ্টির অভাবে ভুগবে। বিদ্যুতের কারণে প্রযুক্তিহিন থেকে যাবে। শিক্ষার বাইরে রয়ে যাবে। এবং সর্বোপরি একটি প্রজন্ম আবারও দারিদ্র্যের আবর্তে আটকে থাকবে। কেউ এসব নিয়ে চিন্তা কি করে? হাহাহাহা।করলে কি এটি এক হালি লেবুর দেশের গল্প হতে পারতো?
পরিশেষে আমার এই যুক্তি তর্ক ভিন্নমতের ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় ভিন্নপথ। এই ভিন্ন মতও ভিন্ন পথের (Disagreements) সামাজিক বৃক্ষে হাজারো সুস্বাদু ফলের সাথে জন্ম হয় দ্বন্দ্ব বা সংঘাত (Conflict )নামক বিষাক্ত ফলেরও। এই রাষ্ট্রও রাজনীতির প্রধানতম লক্ষ্য হলো সমাজ জীবনে দ্বন্দ্ব বা সংঘাতের নিরসন ঘটানো এবং তাও শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায়।ভিন্নমত নির্মূল করা রাজনীতির কাজ নয়। রাজনীতির কাজ নয় ভিন্ন পথের সব মুখ বন্ধ করা। ভিন্নমতও ভিন্নপথ বন্ধ হলে চিরদিনের জন্যে বন্ধ হয়ে আসে প্রগতির পথ। বন্ধ হয়ে আসে অগ্রগতির শত বাতায়ন।সেই সাথে বন্ধ হবে চিরদিনের জন্যে নতুনের অভিযাত্রা। তাই রাজনীতি ভিন্ন মতও পথের বাঁকা এবং কংকর বিছানো পিচ্ছিল পথে অগ্রসর হয়ে দ্বন্দ্বের নিরসনে ঘটাতে সতত অগ্রসরমান। এসব কারণে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল রাজনীতি বিজ্ঞানকে( Politics-) চিহ্নিত করেছিলেন সমাজের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান ( Master Science -) রূপে। তিনি রাজনীতির বিজ্ঞানকে সমাজের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান বলেছিলেন দুটি কারণে :’ এক- এই বিজ্ঞানের মৌল উপজীব্য হলো সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ মানবকুল যারা সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করেন। দুই : মানবের রয়েছে একদিকে যেমন তাদের চাহিদা সম্পর্কে পরিবর্তনশীল বিচিত্র ভাবনা – চিন্তা, অন্যদিকে তেমনি তাদের রয়েছে বিবেক – বিচার এবং নীতিনৈতিকতা এক আবরণ।
এজন্যেই প্রয়োজন হয় একদিকে যেমন রাজনীতিকদের সুচিন্তিত পরিকল্পনা, কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, উদার দৃষ্টিভঙ্গি এবং কঠোর পরিশ্রম। অন্যদিকে তেমনি সুনীতি ও সুরুচির আশির্বাদ, ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ, নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ এবং নৈতিকতার পরাকাষ্ঠা। এক্ষেত্রে সাফল্যের মানদণ্ড হলো বিভিন্ন গোষ্ঠী অথবা দলের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্ব বা সংঘাত – নিরসনে কৃতিত্বের গভীরতা এবং রাষ্ট্রকে একটি নৈতিক প্রতিষ্ঠান করার দক্ষতা। জে ডি নি মিলারের ( JDB Miller -) কথায়, ” রাজনীতি হলো গভীর নৈতিকতাবোধে উদ্দীপ্ত কিছু সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করার মাধ্যম “( Politics is a means of getting things done, Often with a strong sense of moral urgency -:’)

লেখক : রাজনীতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এবং মানবাধিকার সংগঠক

( বি: দ্রষ্টব্য : এই লেখাটি সম্পুর্নভাবে লেখকের নিজস্ব মতামত, লেখার সাথে প্রকাশিত নিউজ পোর্টাল কর্তৃপক্ষ দায়বদ্ধ নয়-)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category