নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ নেতা মাসুম হত্যার দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারী ফয়েজকে রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘোরাফেরা করলেও কেন তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না তা নিয়ে রহস্যের কিনারা করতে পারেনি ভুক্তভোগি পরিবার।
এদিকে মাসুমের হত্যাকারীর বিচারের দাবীতে আবারো উত্তাল সিলেটের বিশ্বনাথ এলাকা। খুনি ফয়েজ আহমেদ শামীমের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
সোমবার (২২ এপ্রিল) সিলেট শহরের সিটি করপোরেশন পয়েন্ট মোড়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
এদিন উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এক সপ্তাহের সময়সীমা আল্টিমেটাম কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
মাসুমের হত্যাকারী ফয়েজের ফাঁসি বাস্তবায়ন বন্ধুমহল ও এলাকার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ কর্তৃক আয়োজিত খুনি ফয়েজের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং ন্যায় বিচারের দাবিতে, “বন্ধু- মহল’- আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠানে প্রবীণ সালিশ ব্যক্তিত্ব ও সাবেক ইউপি সদস্য, সুরুজ আলীর সভাপতিত্বে ও জাতীয় মানবিক সমিতি বাংলাদেশ সিলেট বিভাগীয় প্রধান সমন্বয়ক ও সাংবাদিক এম আই টুটু্র সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ- সভাপতি এডভোকেট জয়নাল আবেদীন সেলিম, সাবেক সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আফজাল হোসেন চৌধুরী, সাবেক সিটি কাউন্সিলর এম এ আবুল কালাম আজাদ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, আনোয়ার হোসাইন চৌধুরী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, হাজী তখলিস হোসেন খান, বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি হরমুজ আলী খান, পৌর কাউন্সিলর, ফয়সাল আহমেদ সোহেল, উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম কবীর খান, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও নিহত মাসুমের পিতা আজাদ মিয়া, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান সোহান চৌধুরী, যুবলীগ নেতা শেখ আজিজুল ইসলাম, উপজেলা সেচ্ছাসেবক সাধারণ সম্পাদক আলী ইমাম তুহিন, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রাসেল আহমদ শিমুল চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রলীগ সিনিয়র সহ-সভাপতি শাব্বির আহমেদ রাসেল, ছাত্রলীগ নেতা জসিমউদদীন সুমন, ছাত্রলীগ নেতা শোয়েব আহমেদ সিজান প্রমুখ।
এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন, এলাকার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ ও মাসুমের পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুমহলসহ সহপাঠীরা।
প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রেখে বক্তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা খুনি শামীমকে কেন প্রশ্রয় দিচ্ছে তা জানতে চায় এলাকাবাসী। খুনি শামীমকে গ্রেফতার করতে কেন ব্যর্থ হয়েছে, প্রশাসনের কাছে তারও জবাব চান। মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করে পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।
এদিকে মানববন্ধন থেকে আন্দোলন অংশ গ্রহণ করা এলাকার সর্বস্তরের মানুষ ও নিহত মাসুমের পরিবারের সদস্যসহ উপস্থিত সকল আন্দোলনকারীদের তরফ থেকে জোরালো ভাবে সিলেট জেলা প্রশাসকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে দাবি জানান খুনি ফয়েজকে এই নিধারিত সময়ের মধ্যে দ্রুত গতিতে গ্রেফতার করতে হবে। যদি আবারও গ্রেফতার করতে ব্যর্থতার পরিচয় বহন করে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের বিরোধে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হবে। সেই সাথে খুনি আসামি ফয়েজের সাথে বিশ্বনাথ থানার পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্য গোপনীয়তার সাথে খুনিকে সুযোগ সুবিধা প্রদান করে খুনি ফয়েজকে বাঁচানোর জন্য সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে এদের সকলের বিরোধে কঠোর থেকে কঠোরতার মাধ্যমে লাগাতার কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা করা হবে।
মানববন্ধনে অংশ গ্রহণকারী উপস্থিত এলাকার সর্বস্তরের মানুষ অত্যন্ত ভারাক্রান্ত দু:খভরা মনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তারা ঈঙ্গিতপূর্ণ ভাবে উল্লেখ করে বলেন- বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ( ওসি) দায়ি ও দোষী সাব্যস্ত করেন। সেই সাথে ওসিকে অতিদ্রুত অপসারণের জন্য জেলা প্রশাসক ও প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান। সেই সাথে প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন তিনি ( ওসি,) গোপনীয় ভাবে খুনি আসামি ফয়েজ ও তার পরিবারের সাথে ওসির যোগসাজশের কারণে খুনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অবিরত। তাছাড়া নিহত মাসুমের মামলার দায়িত্ব পালন করে যাওয়া পুলিশ সদস্য ও অন্যান্য সদস্যরা একত্রে মিলে আঁতাত করা হয়েছে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে। এতে মোটা দাগের অর্থের বিনিময় লেনদেন করা বদৌলতে খুনি ফয়েজকে সবধরনের সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে পুলিশের তরফ থেকে।
মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করার মধ্য থেকে উপস্থিত সকল আন্দোলনকারিরা তাদের বক্তব্যে মাধ্যমে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রশাসনের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়ে বক্তারা দাবি করেন,দোষী সাব্যস্ত হওয়া সকল পুলিশ সদস্যরা ও ( ওসি,) অভিযুক্তদেরকে বিশ্বনাথ থানা থেকে অতিদ্রুত অপসারণের দাবি জানান। দাবিকৃত বিষয় গুলো যদি ঘোষিত এক সপ্তাহ সময়সীমা আল্টিমেটামের ভেতরে যদি বাস্তবায়ন করা না হয় তাহলে গোটা বিশ্বনাথ উপজেলার সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ রুখে দাঁড়াতে প্রস্তুত হয়ে আছে। অন্যতায় কালবিলম্ব না করে বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে খুনি ফয়েজকে গ্রেফতার করতে হবে। সেই সাথে দোষী সকল পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করতে হবে। তাছাড়া মামলা গতিবিধি আইনের দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার জন্য নতুন টিম পুলিশ সদস্যদেরকে দায়িত্ব া প্রদানের জন্য আজকের এই কর্মসূচি থেকে সিদ্ধান্ত গৃহীত করা হয়েছে।
কর্মসূচি থেকে আগামী এক সপ্তাহের সময়সীমা নির্ধারণ এর মধ্যে যে বিষয়গুলোকে সামনে রেখে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখ – আগামী ২৯ এপ্রিল, সোমবার, সকাল সাড়ে দশটায় জেলা প্রশাসক বরাবর গণ-সাক্ষরকৃত স্মারক লিপি প্রদান করা হবে । সেই সাথে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে দুই আড়াই ঘন্টা সময়ের জন্য কালোব্যাজ ধারণ করে অনশগ্রহণ পালন করা হবে। তারপর আগামী মাসের ৪মে শনিবার সিলেট থেকে কালোব্যাজ ধারণ করে ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। তারপরের দিন জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। সেই সাথে নেতৃত্ব দানকারি সকলের আলোচনা ও পরামর্শ মোতাবেক পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২২ মার্চ নিখোঁজ হয় মাসুম ।নিখোঁজের ৩ দিন পর সিলেটের বিশ্বনাথে আওয়ামিলীগ নেতা আজাদ মিয়ার ছেলে মাসুম মিয়ার(২৫) লাশ সুরমা নদী থেকে উদ্ধার পরে পুলিশ । ২৫ মার্চ রাতে সুরমা নদীতে মৃতদেহ দেখতে পান এলাকার মানুষ। পরে পুলিশে খবর দিলে লাশ উদ্ধার করে নিখোঁজ মাসুমের লাশ সনাক্ত করে পরিবার।
আওয়ামী নেতা আজাদ মিয়া তার নিজ ভাতিজা শামীম আহমদ ফয়েজ কে সন্দেহ করে ২৬ তারিখ মামলা করেছেন। আজাদ মিয়া মনে করে পূর্ব শত্রুতার জেরে তার ছেলেকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। তিনি বলেন, শামীম তার ছেলেকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলো।
হত্যকাণ্ডে শামীম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা জড়িত দাবী করে, তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। আজাদ মিয়া বলেন, আমার ছেলেকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসী শামীম। আমি তার ফাঁসি চাই।