1. mahadihasaninc@gmail.com : admin :
  2. hossenmuktar26@gmail.com : Muktar hammed : Muktar hammed
এইসব রূপালি আলাপ  - dailybanglakhabor24.com
  • July 7, 2024, 2:08 am

এইসব রূপালি আলাপ 

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৩ | সকাল ৮:০৮
  • 77 Time View

খান মুহাম্মদ রুমেল

এক সন্ধ্যার কথা। সময়টা আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে। সোয়া ছয়টা বাজে। একুশে টেলিভিশনের বার্তাকক্ষে খুব ব্যস্ততার মধ্যে আছি। হাতে সাতটার খবরে ধরানোর জন্য একটা রিপোর্ট। মাত্র লেখা শেষ করে এডিট প্যানেলের দিকে ছুটছি। এমন সময় একটি ফোন এলো। নম্বরটি আমার চেনা। ফোন করেছেন সময় টেলিভিশনের তখনকার বার্তা প্রধান তুষার আব্দুল্লাহ। ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে বললেন- সময় টেলিভিশনে আসতে পারবে এখন? বললাম- হাতে সাতটার খবরে ধরানোর জন্য একটা রিপোর্ট আছে। শেষ করেই আসছি।
কারওয়ান বাজার একুশে টেলিভিশনের অফিস থেকে বাংলামোটর সময় টিভিতে এলাম পায়ে হেঁটে। বার্তা প্রধানকে ফোন দিলে বসতে বললেন তিনি। মিনিট দশেক পর নেমে এসে বললেন, সিভি এনেছো? সিভি দাও। বললাম- সিভি তো সঙ্গে নেই। আপনি ডেকেছেন, চলে এসেছি। সিভি আনিনি।
আচ্ছা। কালকে নিয়ে এসো।
ছোট্ট দুটি বাক্য বলেই তিনি হাঁটা ধরলেন। আমিও সোজা হাঁটা ধরলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। তখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ হয়নি আমার। সময় পেলেই টিএসসি গিয়ে বসে থাকি। আড্ডা দেই বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে। তো, সেই সন্ধ্যায় টিএসসিতে একা একা বসে ভাবছিলাম, একুশে টেলিভিশন দেশের প্রথম স্যাটেলাইট টিভি। যদিও তখন চ্যানেলটির আগের জৌলুস অনেকটাই কমে গেছে। তারপরেও একুশে টিভি ছেড়ে একটা নতুন চ্যানেলে যোগ দেয়া ঠিক হবে? আবার একটি সম্পূর্ণ সংবাদ ভিত্তিক নিউজ চ্যানেলে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি- এটাও এক ধরনের রোমাঞ্চ জাগায় মনে। সব মিলিয়ে ঠিক করি- যা আছে কপালে। সময় টিভিতে সিভি জমা দেবো। তারপর দেখা যাক কী হয়।
পরের দিন এলাম। সিভি জমা দিয়ে চলে গেলাম। এর দুই দিন পর ডাক পড়লো আবার। এবার আর বার্তা প্রধান নয়। ডেকেছে মানবসম্পদ বিভাগ। ক্যামেরার সামনে কথা বলার ইন্টারভিউ। যথারীতি ইন্টারভিউ দিয়ে চলে গেলাম। তারও দিন কয়েক পর আবার ডাক পড়লো। আরেক দফা ইন্টারভিউ। এবারে কিছুটা বিরক্ত লাগলো। এতো ইন্টারভিউর কী আছে? নিলে নেন, না নিলে না নেন! তবুও গেলাম। রিসিপশনে বসে আছি। দেখা হলো তুষার আব্দুল্লাহর সঙ্গে। জিজ্ঞেস করলেন- কেমন আছি? হাসি হাসি মুখ করে বললাম ভালো আছি ভাই। সঙ্গে এও বললাম এতো ইন্টারভিউ নিচ্ছেন কেন ভাই?
আরে ইন্টারভিউ আর কিসের? এমনি একটু কথাটথা বলবো আর কি?
কিছুক্ষণ পর ডাক পড়লো ইন্টারভিউ বোর্ডে। সময় সংবাদের বার্তা প্রধান ছাড়াও বোর্ডে আছেন আরো দুজন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জোবায়ের এবং সম্পাদকীয় প্রধান নিয়াজ মোরশেদ। এটা সেটা আলাপের পর জোবায়ের ভাই জিজ্ঞেস করলেন- বেতন কতো চাও? এ নিয়ে আলাপের এক পর্যায়ে আমি উঠে চলে এলাম। বললাম এই বেতনে জয়েন করতে হলে আমাকে কিছুক্ষণ ভাবতে হবে। তারা ভাবনার সময় দিলেন। রুম থেকে বের হয়ে আসার পর দেখা হলো একুশে টেলিভিশনের আমার সঙ্গে কাজ করা জ্যেষ্ঠ চিত্র সাংবাদিক হারুন অর রশীদের সঙ্গে। হারুন ভাই বললেন- কী খবর রুমেল? বেতনের পরিমাণ নিয়ে মিলছে না, বললাম না তাকে। এমন সময় ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে ফোন এলো।
এই ভেতরে এসো।
ভেতরে গেলে, আগে যা অফার করেছিলেন তার থেকে কিছুটা বাড়ালেন। আমি আর না করলাম না। শুরু হয়ে গেলো আমার সময় টিভি অধ্যায়। সেটি ছিল এপ্রিলের ২০ তারিখ। এর তিন দিন আগে ১৭ এপ্রিল অন এয়ারে চলে এসেছে সময় টেলিভিশন।
এইতো গেলো ১৭ এপ্রিল সময় টেলিভিশন তার জন্মের এক যুগ পূর্তি করল। সময়ের কর্মী হিসেবে আমারও এক যুগ পূর্তি হলো ২০ এপ্রিল। বর্তমান প্রচণ্ড গতির করপোরেট যুগে এক প্রতিষ্ঠানে এক যুগ কাটানো, খুব সহজ মনে হয় না আমার কাছে। এই বারো বছরে কতো উত্থান পতনের সাক্ষী হলাম। কতো ঘটনা দুর্ঘটনা সামনে থেকে দেখলাম। সময় সংবাদে যোগ দেয়ার পর থেকে শুরু করে দেশে যতগুলো বড় ঘটনা ঘটেছে দু’য়েকটি বাদে সব কাভার করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। সময়ের লাল মাইক্রোফোন হাতে ছুটে বেরিয়েছি শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। দেশের আনাচে কানাচে অনেক জায়গায় গিয়েছি এই মাইক্রোফোন হাতে। বেশিরভাগ জায়গায় মানুষ পরম আদরে, পরম মমতায় গ্রহণ করেছে আমাকে। দেশ বিদেশের নানা জায়গা থেকে কত মানুষ সময় টিভির রিসিপশনে এসে খোঁজ করেছেন আমার। রাস্তাঘাটে দেখা হলে কতো মানুষ জড়িয়ে ধরেছেন। নাম ধরে ডেকে ওঠেন এখনো। কাজ করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকিতে পড়েছি  কতবার। জঙ্গিদের তাড়া খেয়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে আসতে হয়েছে কতবার। কতবার হুমকি এসেছে আমাকে দেখে নেয়ার। আমার করা রিপোর্ট আদালতে দাখিল করে এক হত্যা মামলার আসামি আদালতে নির্দোষ প্রমাণ হয়েছেন। কতদিন কত সময়ে অসময়ে মানুষ ফোনে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একবার রিপোর্ট করতে গিয়েছিলাম রাজশাহীর পদ্মার দুর্গম চরে। এক অশীতিপর বৃদ্ধা আমার নাম শুনে ডেকে নিয়েছিলেন তার বাড়িতে। পরম আদরে খেতে দিয়েছিলেন লাল গমের রুটি আর পাটালি গুড়। সেই খাবারের স্বাদ এখনো আমার মুখে লেগে আছে। আবার এই রিপোর্টিংয়ের কারণেই কতজন দালাল বলে গালি দিয়েছেন। সব আমি মাথা পেতে নিই। আমার মতো একজন ক্ষুদ্র মানুষের জীবনে এর চাইতে বেশি আর কি চাওয়ার থাকতে পারে!
বেশ কয়েক বছর হলো মাঠের রিপোর্টিং আর করি না। রিপোর্টার জীবনে দায়িত্বের রূপান্তর ঘটেছে। এখন ডেস্কে কাজ করি। শো উপস্থাপনা করি। টুকটাক লেখালেখি করি। তারপরও মানুষ এখনো ভালোবাসেন। এখনো অনেকেই দেখা করতে আসেন। হাতে লেখা চিঠি তো এখন পৃথিবী থেকেই উঠে গেছে। কিন্তু এখনো অনেক মানুষ আমাকে চিঠি লেখেন। তাদের ভালোবাসার কথা জানান। কি যে ভালো লাগে আমার।
অনেক সময় অনেক মানুষ শুভেচ্ছা জানিয়ে ফোন করেন। সেসব নম্বর বেশিরভাগ সময় ফোনে সেভ করে রাখি আমি। মাঝে মাঝে হাতে কোনো কাজ না থাকলে সেই সব নম্বরে ফোন দেই আমি। তাদের সঙ্গে কথা বলি কিছুটা সময়।  কি যে খুশি হন তারা। আমারও খুব ভালো লাগে এইসব অদেখা মানুষের সঙ্গে কথা বলতে।
এইসব রুপালি আলাপ আমি জমিয়ে রাখি মনের গহীন কোণে। এই সোনালি স্মৃতি আমি ধরে রাখি মনের মনি কোঠায়। একটাই মানুষ জন্ম আমাদের। সেই জীবনটা আবার খুব ছোট। এই ছোট জীবনে অর্থ বিত্ত খ্যাতি যশের চেয়েও মানুষের ভালোবাসা আমাকে বেশি আপ্লুত করে।
এই তো মাত্র ঈদ শেষ হলো। ঈদের দিন থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত অনেকেই নানাভাবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। সবাইকে হয়তো উত্তর দিতে পারিনি। ক্ষমা করবেন। সবাইকে অশেষ শুভেচ্ছা।

লেখক: অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর, সময় টিভি

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category