মুফতি মেনক
এক. আপনি যে দিনই ঈদ উদযাপন করছেন তা নির্বিশেষে, সর্বশক্তিমান আপনাকে এবং আপনার প্রিয়জনকে সর্বদা নির্দেশনা দিন ও কৃপা করুন। যখন আমরা আনন্দ উপলক্ষের জন্য জড়ো হই, তখন একটি ভাবনা সামনে রাখুন এবং বিশ্বজুড়ে যারা অশান্তি ও বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে তাদের জন্য প্রার্থনা করুন। যার প্রয়োজন তাদের কাছে সাহায্য পৌঁছান।
দুই. এই সুন্দর শাওয়ালে সর্বশক্তিমান আমাদের হৃদয় সহানুভূতিতে পূর্ণ করুন। আপনার চারপাশে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিন এবং যারা অভাবী তাদের কাছে পৌঁছাতে ভুলবেন না। আপনাদের সবাইকে ঈদ মোবারক। আপনার প্রিয়জনের সাথে সুন্দর সময় কাটান।
পূনশ্চ:
এক: সর্বশক্তিমান। আমরা আপনার কাছে আমাদের সমস্ত পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনি জানেন আমরা কতটা সীমালঙ্ঘন করেছি এবং কত পাপ করেছি। আমাদের মনোযোগের অভাবের জন্য আমাদের বিচার করবেন না। বারবার গোলমাল পাকানোর জন্য আমাদের শাস্তি দেবেন না। আমাদের অব্যাহতভাবে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দিন। আমীন।
দুই: ব্যর্থতা, অনুশোচনা, ভুল সবই জীবনের অংশ। নিজের জন্য একটি উপকার করুন আর এসবের উপর বসবাস করবেন না। এসব আপনাকে যা শেখাতে এসেছে তা শিখুন এবং সামনে এগিয়ে যান।যা কার্যকর হয়নি তার জন্য কান্নাকাটি করার জন্য জীবনটি খুবই ছোট। সর্বশক্তিমান আপনাকে আরেকটি সুযোগ দিচ্ছেন। এটা নষ্ট করবেন না।
তিন: যখন সন্দেহ, ক্রোধ বা উদ্বেগের অন্ধকার ঝড়ের মেঘ জমাট বাঁধতে শুরু করে, সর্বদা নিজেকে মনে করিয়ে দিন যে কিছুই স্থায়ী হয় না। আপনার সম্পর্কে একটি অভ্যন্তরীণ অনুভূতি নিজেকে শান্ত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটা ঝড় কেটে যাবে। সর্বশক্তিমান আপনাকে পরীক্ষা করছেন এবং যতক্ষণ না আপনি তাঁর উপর ভরসা করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তা করতে থাকবেন।
চার. আপনি অনলাইনে যা দেখেন তার সাথে আপনার নিজের বিয়ের তুলনা বন্ধ করুন। দম্পতিগুলো তাদের যে ছবিগুলি পোস্ট করে, যা দেখে মনে হয় যে তারা চিরকাল হানিমুন করছে আর আপনি এর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আপনি এতে দুর্দশার মধ্যে পড়েন। সজাগ হোন, বাস্তব জীবন ঠিক এরকম নয়। তা ছাড়া হিংসা পরশ্রীকাতরতা এসব বিপজ্জনক। এমনকি বিপর্যয়করও; অতএব অফলাইনের বাস্তবতা এবং মূল ট্র্যাকেই ফিরুন।
পাঁচ. আত্মীয়তার বন্ধনকে জোরদার করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং তা ছিন্ন করা একটি পাপ। যা কিছুতে ফাটল ধরেছে বা ভেঙে গেছে তা সংশোধন করতে এই বরকতময় মাসটি ব্যবহার করুন। অপেক্ষা করবেন না। যদি আপনি পরিবার এবং আত্মীয়দের মধ্যে খারাপ অনুভূতি আরও উত্তেজিত করতে দেন তবে আপনি অনেক আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এগিয়ে যান; প্রথম পদক্ষেপটি গ্রহণ করুন।
ছয়. আপনি হাল ছাড়ার পথে রয়েছেন, কারণ আপনি ব্যথাটি আর সহ্য করতে পারছেন .না। আপনি ভাবছেন যে কি অবস্থার মধ্য দিয়ে আপনি যাচ্ছেন তা সর্বশক্তিমান জানেন কিনা। তিনি সর্বজ্ঞ, তিনি সব কিছুই যে দেখছেন তা নিয়ে কখনও সন্দেহ করবেন না। মনে রাখবেন, আপনি প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছেন তবে ফলাফলটি সুন্দর হবে। তার উপর আস্থা রাখুন।
সাত. যদি আপনাকে হেয় করা হয়, অবহেলা করা হয় এবং খারাপ আচরণ করা হয় তবে এটিকে আপনি নিজ পদক্ষেপে অতিক্রম করুন। এ জন্য প্রতিশোধ নেয়া হবে স্বাভাবিক, তবে যিনি সর্বশক্তিমানকে বিশ্বাস করেন তিনিই হন বিজয়ী।
আট. যখন আপনি নিজেকে নি:সঙ্গ মনে করেন, একা মনে করেন কারণ সবাই আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে এবং পরিত্যাগ করেছে আপনাকে, তখন জেনে রাখুন যে, সর্বশক্তিমান সর্বদা আপনার পাশে আছেন। পরম করুণাময় আপনাকে কখনো পরিত্যাগ করবেন না।
দ্রষ্টব্য:
তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরিক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতীম, মিসকীন, প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে, যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী (সূরা নিসা : ৩৬);
বল, এটা (শরীয়াহ সম্মতভাবে আনন্দ প্রকাশ) আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত, সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম। (সূরা ইউনুস : ৫৮)
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন,কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় যে তার ভাইকে তিন দিনের বেশি সময় সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে। তাদের অবস্থা এমন যে দেখা সাক্ষাৎ হলে একজন অন্য জনকে এড়িয়ে চলে। এ দুজনের মাঝে ঐ ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে প্রথম সালাম দেয়। (সহীহ মুসলিম : ৬৬৯৭);
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সা.মদীনায় আগমন করলে দেখলেন, মদীনাবাসীরা দুটি ঈদ পালন করছে। তা দেখে তিনি বললেন, (জাহেলিয়াতে) তোমাদের দুটি দিন ছিল যাতে তোমরা খেলাধূলা করতে। এক্ষণে ঐ দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদেরকে দুটি উত্তম দিন প্রদান করেছেন; ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার দিন।’ (আবূ দাঊদ ১১৩৬, নাসাঈ ১৫৫৬);
উম্মে আতিয়া রা.বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সা.আদেশ করেছেন আমরা যেন মহিলাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাতে সালাতের জন্য বের করে দেই; পরিণত বয়স্কা, ঋতুবর্তী ও গৃহবাসিনীসহ সকলকেই। কিন্তু ঋতুবর্তী (ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে) সালাত আদায় থেকে বিরত থাকবে তবে কল্যাণ ও মুসলিমদের দোয়া পত্যক্ষ করতে অংশ নিবে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে কারো কারো ওড়না নেই (যা পরিধান করে আমরা ঈদের সালাতে যেতে পারি) – রাসূলুল্লাহ সা.বললেন, ‘সে তার অন্য বোন থেকে ওড়না নিয়ে পরিধান করবে। (সহীহ মুসলিম : ২০৯৩);
হাদিস শরিফে এসেছে, যখন ঈদের দিন তথা ঈদুল ফিতরের দিন আসে, তখন আল্লাহ বান্দাদের বিষয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করেন। বলেন, হে আমার ফেরেশতারা! যে শ্রমিক তার কর্ম পূর্ণ করেছে, তার বিনিময় কী? তারা বলবে, তাদের বিনিময় হলো তাদের পারিশ্রমিক পরিপূর্ণরূপে প্রদান করা। বলবেন, হে আমার ফেরেশতারা! আমার বান্দা-বান্দীরা তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করেছে, তারপর দোয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। আমার সম্মান, মহত্ত্ব, করুণা, মাহাত্ম্য ও উচ্চ মর্যাদার শপথ! আমি তাদের প্রার্থনা গ্রহণ করব। এরপর আল্লাহ বলবেন, তোমরা ফিরে যাও, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের মন্দ আমলগুলো নেকিতে পরিবর্তন করে দিলাম। নবীজি (সা.) বলেন, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে যাবে।’ (খুতবাতুল আহকাম, ঈদুল ফিতরের খুতবাহ, পৃষ্ঠা: ১৬২-১৬৬);