1. mahadihasaninc@gmail.com : admin :
  2. hossenmuktar26@gmail.com : Muktar hammed : Muktar hammed
ইমার্জেন্সিতেও মশার ইমিউনিটি - dailybanglakhabor24.com
  • July 7, 2024, 8:58 am

ইমার্জেন্সিতেও মশার ইমিউনিটি

  • Update Time : শনিবার, জুলাই ২২, ২০২৩ | দুপুর ২:৫৮
  • 55 Time View


মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিকী তালুকদার

সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই কথা বদল। মাত্র গত সপ্তায় জানানো হলো ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা। এখন বলা হচ্ছে, অবস্থা গুরুতর বা জরুরি অবস্থা জারির মতো নয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানান। একদিকে বলছেন, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। আরেকদিকে জানাচ্ছেন, জরুরি অবস্থা জারির মতো নয়। এক সপ্তাহের মধ্যে কি মশারা কমজুরি হয়ে গেছে?

’জনস্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি’ জাতীয় উদ্বেগের বিষয় হলেও পজিশন-অপজিশনের মতো রাজনৈতিক বয়ান প্রকারান্তরে মানুষের সঙ্গে মশকরা। আর মশাকে আশকারা। ডেঙ্গু এখন আর ঢাকা বা নগরীর অসুখ নয়। ডেঙ্গুর দম বেড়েছে, আরো আগ্রাসী চরিত্রে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের ৬৩ জেলায়। সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই–ই বাড়ছে। ২০২২ ও ২০২৩ সালের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের মধ্যে কোনো বিরতি ছিল না। জনঘনত্ব, গ্রাম ও শহরের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ডেঙ্গুর জন্য হ্যাচারি তৈরি করে দিয়েছে। তরতাজায় সে তার চরিত্রও পাল্টে নিয়েছে। মোটা দাগে ডেঙ্গু এখন দাবড়ে বেড়াচ্ছে চার কিছিমে। চার ধরনসহ এর ভয়াবহতা দৃষ্টে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শঙ্কা, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে এর সংক্রমণ আরো বাড়বে। হাসপাতালগুলোর গত ক’দিনের চিত্র সেই শঙ্কাকে আরো বাতাস দিচ্ছে। ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সবচেয়ে বেশি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সিট না থাকায় হাসপাতালটির ফ্লোর-বারান্দায়ও রোগীর গড়াগড়ি-ছড়াছড়ি।

একসময় ধারণা ছিল, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মূলত ঢাকা মহানগরকেন্দ্রিক। কিন্তু ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের পর রোগটি নতুন করে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেইসঙ্গে ডেঙ্গু বিষয়ে প্রচলিত কিছু মিথ রোগটি সম্পর্কে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে। ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি হয় ডেঙ্গু ভাইরাসের মাধ্যমে। মানুষের মধ্যে তা ছড়ায় মূলত এডিস মশার কামড়ে। একই প্রজাতি জিকা, চিকনগুনিয়া এবং সমজাতীয় ভাইরাসগুলো ছড়ানোর জন্যও দায়ী। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বহু বছর ধরে থাকলেও ২০১৯ সালে এই রোগে আক্রান্তের হার এবং মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করে। ডেঙ্গু বিষয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত মিথের মধ্যে রয়েছে- এডিস মশা শুধু সকালে এবং পায়ে কামড়ায়, কারো দু’বার ডেঙ্গু হয় না, দু’বার হলে নিশ্চিত মৃত্যু ইত্যাদি। এসব মিথ নিয়ে ভাবা বা বিশ্লেষণের সময় এখন আর নেই। কাউকে দোষারোপ বা দায়ী করাও এখন সময় নষ্টের পর্যায়ে। করোনা চিকিৎসার নামে দেশে অতিবাণিজ্য চলেছে। তা ডেঙ্গু নিয়েও শুরু হয়েছে। কোনো কোনো বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠছে। ডেঙ্গু মোটেই প্রতিরোধ অযোগ্য নয়। কিন্তু, একে প্রাণঘাতি করে ফেলা হচ্ছে অব্যবস্থাপনা ও গলাকাটার মানসিকতায়। এ সুযোগে ডেঙ্গুও তার রূপ লুকাচ্ছে। আদতে এখনকার ডেঙ্গুর সঙ্গে ২০০০ সালের এমনকি ২০১২ সালের ডেঙ্গুর আলামত আচরণ এবং সংক্রমণ শক্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক। ফলে আগের অভিজ্ঞতার আয়নায় ডেঙ্গুকে চেনা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থবার আক্রান্তরা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে পড়ছে। এখন আগের মতো জ্বরের পারদ চড়ে যাচ্ছে না। বিরতি দিচ্ছে। শরীরে ব্যথা তেমন থাকছে না। প্লাটিলেট কমে গেলেও টের পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথমে মনে হবে সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথা বা গলাব্যথা। তবে চট করেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কমে যাচ্ছে রক্তচাপ, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, রোগী অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে, যা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম নামে পরিচিত। এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি হওয়ার অন্যতম কারণও শক সিনড্রোম।
মশা কম থাকা অবস্থায় তা মারার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এখন মশা বেড়ে গেছে। মশা মারার সঙ্গে রোগ দমনও জরুরি হয়ে গেছে। তা চটজলদি বা ক্রাশ প্রোগ্রামে সম্ভব নয়। সিটি করপোরেশনগুলোর ‘সব অসুখের একই ওষুধ’ মার্কা নীতি ব্যর্থ হয়েছে। বারবার প্রয়োগ করা একই বিষ মশার দেহে সহনীয় হয়ে গেছে। প্রতিটি প্রাণী দেহেই প্রকৃতিগতভাবে এ সহনক্ষমতা তৈরি হয়। এডিস মশারাও এখন সেই সক্ষমতায় বলিয়ান। এছাড়া, উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশ মশা ও মশাবাহিত রোগ বিস্তারের জন্য উত্তম জায়গা। উপযুক্ত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার সঙ্গে যোগ হয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ। সব মিলিয়ে ঢাকা যেন মশার স্বর্গরাজ্যে রূপান্তরিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মূলত ১৯৬৪ সালের দিকে। তখন এটির নামকরণ হয়েছিল ‘ঢাকা ফিভার’। ২০০০ সালে এসে নাম পড়ে ডেঙ্গু। ওই বছর সরকারি হিসাব মতে, ৫ হাজার ৫০০ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং ৯৩ জন মারা যান। দেশে ডেঙ্গু সবচেয়ে বড় আঘাত আসে ২০১৯ সালে। সরকারি হিসাবে আক্রান্ত হয় ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। আর গেল বছর আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা যথাক্রমে ৬২ হাজার ৩২১ ও ২৮১।

করোনা নামের মহামারিটি কার্যত এখনো গুডবাই দেয়নি। তারওপর ডেঙ্গুর আক্রমনের যাবতীয় কারণ বিদ্যমান রেখে এখন কিভাবে রক্ষা মিলবে? প্লাস্টিক ড্রাম, এসির পানি, ফুলের টব ও ছাদে জমা পানিতে এডিস মশার লার্ভা বেশি জন্মে- এ সতর্কতা সেই কবে থেকেই দেয়া হচ্ছে। কোনো রাখঢাক না রেখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়ে দিয়েছে, গোটা রাজধানীসহ আশপাশ ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতির কথা। তার মানে, রাজধানীর প্রায় সবাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্‌ বর্ষা জরিপের এই চিত্র আমল না দিয়ে যেনতেন ভাবার একটি মানসিকতা স্পষ্ট। নইলে গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার ঢাকায় এডিস মশার সর্বোচ্চ লার্ভা ও এবং সম্ভাব্য প্রজননস্থল গড়ে ওঠে কিভাবে? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কীটতাত্ত্বিক দলের প্রাক্‌ বর্ষা এডিস জরিপটি চলে গত ১৭ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত। তা চলে ঢাকার দুই সিটির মোট ৯৮টি ওয়ার্ডের ৩ হাজার ১৪৯টি বাড়িতে। বেশি দেরি বা কিছু গোপন না রেখে তারা জরিপের তথ্য অবহিত করেছে। মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। জরিপ বলছে, ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিতেই ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ ২০–এর বেশি। অর্থাৎ, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টি পাত্রে মশা বা লার্ভা মিলেছে। গত বছর ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ৩টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০–এর বেশি ছিল। ভাবা যায় কতো হটস্পটে আছে এই ঢাকা? এ বছর বর্ষা এসেছে দেরিতে, হয়তো যাবেও দেরিতে। এতে ডেঙ্গুর মৌসুম দীর্ঘ হওয়ার একটি শঙ্কা ঘুরছে।

লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাংলাপোস্ট

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category