“মাহফুজ উল্লাহ ” স্মৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার আক্ষেপ করে বলেন – আর কবে জন্মাবে একজন মাহফুজ উল্লাহ ? বর্তমান সময়ে মনে আছে তো মাহফুজ উল্লাহকে “? কেন কী বুঝে যে মাহফুজ উল্লাহ ভাই তাঁর মৃত্যুর মাস কয়েক আগে কিছু ঘটনার কারণে আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন – আজ যারা নানান কাজে আসে, আমাকে ব্যবহার করে, যাদের জন্য এতো কিছু করছি, তারা কি মনে রাখবে ? তার এই কথার দ্বিমত বা একমত কোনোটাই না করে আমি বলেছিলাম, সবাই মনে নাও রাখতে পারে। তার মৃত্যুর আজ পাঁচ বছর না যেতেই বাস্তবে সেই ভুলে যাওয়ার নমুনা উপলব্ধি করতে সক্ষম হলাম এবং সাক্ষী বনে গেলাম আমি মোহাম্মদ অলিদ তালুকদার।
২০১৯ সালের ২৭ই এপ্রিল শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ১০মিনিটে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। দেশবরেণ্য প্রথিতযশা সাংবাদিক ও কলামিস্ট, পরিবেশ সাংবাদিকতার জনক মাহফুজ উল্লাহ। আজ ( ২৭ এপ্রিল, শনিবার -) তার পঞ্চম মৃত্যু বার্ষিক।
প্রতি বছরের মতো এবারও মাহফুজ উল্লাহর পঞ্চম মৃত্যু বার্ষিক উপলক্ষ্যে ” মাহফুজ উল্লাহ ” স্মৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠা সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার, সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কর্মসূচি : আজ ২৭ এপ্রিল ২০২৪ – শনিবার,) সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি কবরস্থানে, তার কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ ও ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন। দুপুরে বাদ জোহর নামাজের পরে মিরপুর সেনপাড়া একটি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এতিম অসহায় ও গরীব শিক্ষার্থীদের মাঝে খাবার বিতরণসহ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে – ” মাহফুজ উল্লাহ ” স্মৃতি পরিষদের পক্ষ থেকে।
মাহফুজ উল্লাহ শুধু বাংলাদেশের খ্যাতিমান সাংবাদিকই ছিলেন না, একাধারে লেখক, কলামিস্ট, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও পরিবেশবিদ ছিলেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটর ছিলেন।
এছাড়াও নোয়াখালী জার্নালিস্ট ফোরামের উপদেষ্টা ছিলেন। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম পরিবেশ সাংবাদিকতা শুরু করেন।
১৯৫০ সালের ১০ মার্চ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন দেশের এই খ্যাতিমান সাংবাদিক।
তার পিতার নাম হাবিবুল্লাহ এবং মাতার নাম ফয়জুননিসা বেগম। ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ মুজাফফর আহমেদের দৌহিত্র তিনি।
ছাত্রাবস্থাতেই মাহফুজ উল্লাহ সাংবাদিকতা পেশায় নিবেদিত হন। বাংলাদেশের একসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রার জন্মলগ্ন থেকে কাজ করেছেন মাহফুজ উল্লাহ।
১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় যোগ দেন মাহফুজ উল্লাহ। দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে সম্মানের সঙ্গে কাজ করেছেন।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি শিক্ষকতাও করেছেন মাহফুজ উল্লাহ। চীন গণপ্রজাতন্ত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপদূতাবাসে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন তিনি।
মৃত্যুর পূর্বে তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মাহফুজ উল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যা ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রজীবনে তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ষাটের দশকে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন তিনি। ছাত্র রাজনীতির কারণে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে ঢাকা কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন মাহফুজ উল্লাহ।
পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হিসেবে ঊনসত্তরের ১১ দফা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন মাহফুজ উল্লাহ।
বাম রাজনীতি দিয়ে ছাত্র রাজনীতি শুরু করলেও বেশ কয়েক বছর ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন মাহফুজ উল্লাহ। যে কারণে তার বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী হিসাবেও পরিচিতি রয়েছে।
রেডিও ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে সরব উপস্থিতি ছিল মাহফুজ উল্লাহর। তাকে উপস্থাপনাও করতে দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিকভাবে একজন সক্রিয় পরিবেশবিদ হিসাবে পরিচিত মাহফুজ উল্লাহ। সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট নামক একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাহফুজ উল্লাহ।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর করজারভেশন অব নেচারের আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের প্রথম বাংলাদেশি সদস্য তিনি।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৫০ এর অধিক বই লিখেছেন মাহফুজ উল্লাহ। বইগুলো আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিলাভ করেছে। বইগুলোর অধিকাংশই বিশ্বের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে সংগৃহীত আছে।
তার লিখিত বইগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়া: রাজনৈতিক জীবনী, অভ্যুত্থানের ঊনসত্তর, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন: গৌরবের দিনলিপি (১৯৫২-৭১), উলফা অ্যান্ড দ্য ইনসারজেন্সি ইন আসাম, যে কথা বলতে চাই উল্লেখযোগ্য।
তাছাড়া তার জীবনের সর্বশেষ লিখিত ও প্রকাশিত যে গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় একটি উপন্যাস বই -: ( এ কী কেবলই প্রেম -) এই উপন্যাসের প্রকাশক হিসেবে ছিলেন, মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার, দি ইউনিভার্সেল একাডেমি বাংলাবাজার থেকে প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালের অমর একুশে গ্রন্থ মেলায়। এটাই হচ্ছে শেষ সমাপনী প্রকাশিত বইটি ।
মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ‘ মাহফুজ উল্লাহ ‘ স্মৃতি পরিষদ। প্রকাশক বাংলাদেশ জ্ঞান সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বাংলাপোস্ট