1. mahadihasaninc@gmail.com : admin :
  2. hossenmuktar26@gmail.com : Muktar hammed : Muktar hammed
আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি -বেহাল দশা এফডিসির - dailybanglakhabor24.com
  • July 6, 2024, 6:36 am

আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি —বেহাল দশা এফডিসির

  • Update Time : সোমবার, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩ | দুপুর ১২:৩৬
  • 52 Time View

মোহাম্মদ সেলিম মিয়া

লাইট,ক্যামেরা একশনের ধবনিতে এখন আর মুখরিত হয় না বিএফডিসির ফ্লোরগুলো। একশন দৃশ্যের জন্য নির্বাচিত কড়ইতলায় সেই কবে মারামারির দৃশ্য চিত্রায়িত হয়েছিলো সেটি হয়তো এফডিসিতে নিয়মিত বিচরণকারিদের স্মৃতিতেও নেই। যেই মেকাপরুমগুলোর সাথে মিশে আছে শিল্পীদের নানা ধরনের স্মৃতি বছরের বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে সেই মেকাপরুমগুলো। শুটিং থাকেনা বলে শিল্পী ও কলাকুশলীদের পদচারণাও নেই আগের মতো। তারকাদের আগমন নেই বলে মুল গেটে দর্শক ও ভক্তদের জটলাও দেখা যায় না। শুটিংয়ের কাজ কমে যাওয়াতে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে সাত একর জায়গার উপর নির্মিত এফডিসির ৩ ও ৪ নাম্বার ফ্লোর দুটি৷ সেখানে এখন নির্মাণ হচ্ছে ১৫তলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন। ৯টি ফ্লোরের দুইটি ভেঙ্গে ফেলার পরেও বাকি ফ্লোরগুলো বেশিরভাগ সময় ফাঁকা থাকে শুধুমাত্র এটিএন বাংলার কাছ ভাড়া দেওয়া ফ্লোরটি ছাড়া৷ জমকালো এফডিসিতে এক সময় রাতের বেলায়ও শুটিংয়ের বাহারি লাইট আর গানের উচ্চমাত্রার শব্দ ও নাচের মুদ্রায় মোহনীয়তা মুগ্ধতা ছড়াতো সেই এফডিসিতে দিনের বেলায়ও এখন গা ছমছম করা ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। এখানে এক সময় সুইমিংপুল আর ফুলবাগান ছিলো সেগুলো এখন সোনালী অতীত। হঠাৎ করে সিনেমা নির্মাণের আঁতুড়ঘর হিসেবে স্বীকৃত এফডিসিতে আগতরা খানিকের জন্য হলেও থমকে যায় রাজ্যের নীরবতায়। আর এফডিসির আয়ের সিংহভাগ যেই কালারল্যাব থেকে আসতো সেই জহির রায়হান কালার ল্যাবটিও অচল হয়ে পড়ার পর অযত্ন অবহেলায় এখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায়। ডাবিং থিয়েটার ও এডিটিং প্যানেলগুলো বছরের বেশিরভাগ সময় খালি পড়ে আছে। ফ্লোরগুলোতে মাঝে মাঝে বিজ্ঞাপনচিত্র ও রিয়েলিটি শো”র শুটিং হলেই কেবলমাত্র চিরাচরিত লাইট,ক্যামেরা,একশান শব্দগুলো শোনা যায়। সেটাও কালেভদ্রে। সব মিলিয়ে এফডিসিতে এখন বিরাজ করছে এক অঘোষিত ভুতুড়ে পরিবেশ। দর্শক সংকটে একের পর এক সিনেমাহল বন্ধ হয়ে যাওয়াতে জ্যামিতিক হারে সিনেমার নির্মাণ কমে গিয়েছে। ফলে, সংস্কৃতির সবচেয়ে শক্তিশালী এই মাধ্যমটি বর্তমানে ধবংশের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। সিনেমার নির্মাণ কমে গেলে এফডিসির জৌলুস কমে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ সিনেমা না থাকলে সিনেমার সূতিকাগার বলে বিবেচিত এফডিসি জৌলুসও কমে যাবে। এফডিসি আর সিনেমা একটা আরেকটার পরিপূরক ও একইসূত্রে গাঁথা। মাঝে মাঝে একটা “মনপুরা” একটা “হাওয়া” একটা “প্রিয়তমা ” মুক্তির পরে এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট নির্মাতা, কলাকুশলী আর শিল্পীরা নতুন করে আশায় বুক বাঁধেন, সিনেমাশিল্প আবারও তার হারানো স্বর্ণালী অতীতে ফিরে যাবে এমন স্বপ্ন নিয়ে এগুতে থাকেন কিন্তু সেই আশা হতাশা ও নিরাশার দোলাচলে ঘুরপাক খায়। দর্শক সংকট, ও সিনেমাহল সংকটের কথা বিবেচনা করে প্রফেশনাল প্রযোজকরা চলচ্চিত্রশিল্পে অর্থলগ্নি করা থেকে বিরত রয়েছেন বলে বেকার হয়ে পড়েছে গুনী ও সৃজনশীল নির্মাতারা। আর খালি মাঠে গোল দেওয়ার সুপ্ত বাসনায় আলু পটলের ব্যবসায়ী টাইপের মৌসুমি প্রযোজক ও অদক্ষ,অপরিপক্ক ও ক্যামেরাম্যান নির্ভর মেধাহীন মৌসুমি নির্মাতারা ধীর লয়ে ছায়াছবির নির্মাণের গতিকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে, ছবি মুক্তির পর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রযোজক আর দ্বিতীয়বারের মতো অর্থলগ্নি করছেন না। “ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়” চিরন্তন এই প্রবাদ বাক্যটি অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় মৌসুমি প্রযোজকদের ক্ষেত্রে। ছবি মুক্তির পর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মৌসুমি প্রযোজক আর দ্বিতীয় ছবিতে লগ্নি করবেন না এটা জেনে বুঝেই মৌসুমি নির্মাতারাও তার চলচ্চিত্রের প্রযোজককে “ওয়ান টাইম বলপেন’ এর মতো ব্যবহার করেন। সিনেমার আকাশের দূর্যোগের ঘনঘটার প্রভাব তার ছবিতেও পড়বে এটা অনুধাবন করতে পেরেই মৌসুমি নির্মাতা তার চলচ্চিত্রটির নির্মাণকালেই নিজের আখের গুছিয়ে ফেলেন – এমন তথ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মৌসুমি প্রযোজকের। ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রযোজক এই প্রতিনিধিকে বলেন, ছবি নির্মাণের আগে পরিচালক আমাকে বলেছিলো সব মিলিয়ে ৩০ লাখ টাকার মতো খরচ হবে আর তা থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা উঠে আসবে। কিন্তু নির্মাণ শেষে আমার ছবিটির বাজেট দাঁড়ালো ১ কোটি ২০ লাখে। আর আমি তা থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি পাইনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে কেউই সিনেমাতে বিনিয়োগ করবেনা বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর ছবি নির্মাণ কমে গেলে এফডিসিতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এফডিসির বেহাল দশা নিয়ে ভিন্ন কথা বলছেন এফডিসি প্রশাসন। উর্ধতন কর্মকর্তা পরিচালক মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম বলেন, সিনেমার নির্মাণ কমে যাওয়াতে এফডিসির কাজ কমে গিয়েছে। সিনেমাশিল্পের অবস্থা যখন রমরমা ছিলো তখন এফডিসিরও জোলুস ছিলো ৷ সিনেমা তার যৌবন হারিয়েছে বলে এফডিসিও এখন খুঁড়িয়ে চলছে। তিনি আরো বলেন, এফডিসি একটি সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট প্রতিষ্ঠান। সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো এফডিসি সরকারি টাকায় চলে না। নিজেদের ইনকাম থেকে সব খরচ ও স্টাফদের বেতন দিতে গিয়ে এফডিসি বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছে। ২৯ আগস্ট এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে উর্ধতন এই কর্মকর্তা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আজ ২৯ আগস্ট শেষ হতে চললো আমরা এখনো জুলাই মাসের বেতন পাইনি। এর আগে প্রায় তিন মাস বেতন বকেয়া ছিলো সেগুলো বর্তমানে ক্লিয়ার করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। মাঝে মাঝে মন্ত্রণালয় থেকে থোক বরাদ্দ নিয়ে এফডিসির কার্যক্রম চালাতে হয় বলেও জানান এই কর্মকর্তা। ফ্লোরগুলো সব সময় খালি থাকে,ক্যামেরা পড়ে থাকে, ডাবিং রুম ও এডিটিং রুম সব সময় ফাঁকা থাকে। অর্থাৎ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন যন্ত্রপাতি থাকার পরেও আমাদের যন্ত্রপাতিগুলো সব সময় পড়ে থাকে। সিনেমার নির্মাণ থাকলে এই দুঃসময় আমাদের কাটাতে হতো না৷ কথা প্রসঙ্গে তিনি আরো জানান, বিভিন্ন প্রযোজকের কাছে গত ১ দশক যাবত প্রায় ২২ কোটি টাকার মতো পায় এফডিসি কর্তৃপক্ষ, সেই টাকাগুলো উদ্ধার করতে পারলে এফডিসির কর্তৃপক্ষ তার কাজের গতি ফিরে পেতো। এফডিসি তার পাওনা টাকা আদায়ে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে সহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা অনেককে চিঠি দিয়েছি, তাগাদা দিচ্ছি, অল্প অল্প করে শোধ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধও করছি কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না । যার কারণে অনেকের নামে মামলাও চলছে। এছাড়া অনেকের সঠিক ঠিকানা জানেন না বলে একশান নিতে পারছেন না। সঠিক ঠিকানা ছাড়া লক্ষ লক্ষ টাকা কিভাবে বাকি দিলেন? ব্যস্ততার অযুহাতে এই প্রশ্নটির উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। এদিকে, এফডিসির হিসাব বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, আয়ের থেকে এফডিসির ব্যয় বেশি। প্রতিমাসে সবমিলিয়ে খরচ হয় কোটি টাকার মতো আর আয় হয় মাত্র ৩০ লাখ টাকার মতো। ২০০৩ সালের পর থেকে এফডিসির নিয়োগ কি কারণে বন্ধ জানতে চাওয়া হলে এই কর্মকর্তা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, স্টাফদের বেতনই যেখানে যথাসময়ে প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। সেখানে নতুন স্টাফ নিয়োগের বিষয়টিই হাস্যকর। এফডিসির অবস্থা আগের মতো রমরমা থাকলে অবশ্যই আমরা স্টাফ নিয়োগ দিতাম। এখন তো আমরা নিজেরাই চলতে পারছিনা। এই কর্মকর্তা জানান,,এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের জন্য এফডিসির সামনের রাস্তাটি অধিগ্রহণ বাবদ এফডিসি কর্তৃপক্ষকে ছয় কোটি টাকা প্রদান করা হয়। সেই টাকার এফডিআর করা হয়েছে। সেই এফডিআর, এর টাকা থেকে স্টাফদের বেতন প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি। এত দুরবস্থার মধ্যে এফডিসি কতদূর এগিয়ে যেতে পারবে আর কতদিনই বা সচল থাকতে পারবে সেটাই এখন ফিল্মপাড়ার বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসা।
এফডিসির বেহাল দশা কাটিয়ে উঠিয়ে এফডিসি তার জৌলুস ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জানার জন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মিটিং ও ব্যস্ততার অজুহাতে তিনি বারবার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এফডিসির প্রতিটি দেয়াল,ফ্লোর ও আঙ্গিনায় এখন হতাশার দীর্ঘশ্বাস।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category